24/11/2025
যিনা হলো বান্দার জন্য কর্যস্বরূপ!
বুখারাতে একজন দোকানদার বাস করতেন। তার স্ত্রী খুব সুন্দরী ও নেককার ছিল। তার ঘরে প্রায় বারো-পনেরো বছর ধরে এক ছেলে পানি দিয়ে যেত। একদিন পানি দিতে এসে সে ঐ মহিলার হাত ধরে ফেলল। এরপর কামভাব নিয়ে তার হাত চটকিয়ে বেরিয়ে গেল।
মহিলা খুবই বিচলিত হলেন এই ভেবে যে, ছেলেটা প্রায় পনেরো বছর আমাদের ঘরে আসা-যাওয়া করছে। অথচ শেষ পর্যন্ত এমন করতে পারল সে! এটা ভেবে মহিলা কেঁদে দিল এবং খুব গম্ভীর হয়ে রইল।
ইতোমধ্যে স্বামী ঘরে এসে দেখল তার স্ত্রী কাঁদছে। সে তাকে কারণ জিজ্ঞেস করল। জানতে চাইল, কেন সে কাঁদছে? মহিলা স্বামীর কাছে সব খুলে বলল।
এবার স্বামীও কাঁদতে শুরু করল। স্ত্রী বলল, ‘তোমার আবার কী হলো? তুমি কাঁদছ কেন?’ স্বামী বলল, ‘দোষ ঐ ছেলের না, আমার।’
স্ত্রী বলল, ‘কীভাবে?’
স্বামী উত্তর দিল, ‘আজ এক মহিলা চুড়ি কিনতে এসেছিল। সে চুড়ি পছন্দ করে আমাকে বলল তার হাতে পরিয়ে দিতে। চুড়ি পরাতে গিয়ে অনুভব হলো, তার হাত খুব মোলায়েম ও সুন্দর। তাই আমি কামভাব নিয়ে তার হাত চটকিয়ে দিয়েছিলাম। এর বদলা হিসেবে ঐ ছেলে তোমার হাত চটকিয়েছে।’
এরপর ঐ লোক বলল, ‘আমি তাওবা করছি। আর জীবনেও এমন গুনাহ করব না।’ এরপর বলল, ‘আজকের পর ঐ ছেলে যদি কখনো এমন করে তাহলে অবশ্যই আমকে জানাবে।’
পরের দিন সেই ছেলে আবার আসল। এসেই মহিলার সামনে কাচুমাচু হয়ে বলল, ‘গতকাল আমি শয়তানের ধোঁকায় পড়ে গিয়েছিলাম। তাই আমার দ্বারা এমন গুনাহ হয়ে গেছে। খালিস দিলে তাওবা করেছি। আর কক্ষনো এমন হবে না। আপনি দয়া করে আমাকে মাফ করে দিন।’
এখন দেখুন, ঐ ব্যক্তি পরনারীর সাথে যেমন আচরণ করেছে তার স্ত্রীর সাথেও আরেকজন তেমন আচরণ করেছে। আবার সে যখন তাওবা করেছে তখন অন্যজনও সাথে সাথে তাওবা করেছে।
এই ঘটনা এক আলিম জনৈক বাদশাকে শুনানোর পর বাদশা বলল, ‘আমি এটা বাস্তবে পরীক্ষা করে দেখতে চাই।’ বাদশা কখনও কারও সাথে এমন অনাকাঙ্খিত কিছু করেনি। তাই সে তার মেয়েকে বলল, ‘তুমি শাহী পোশাক খুলে সাধারণ পোশাক পরিধান করে শহর থেকে একটু ঘুরে আসো।’ একজন দাসীকেও তার সাথে দিল। যাতে করে কী কী ঘটনা ঘটে এটা সে বলতে পারে।
শাহজাদী পুরো শহর ঘুরে এল। কেউ তার দিকে চোখ তুলেও তাকাল না। প্রাসাদে ফিরে এসে সে নিজের কামরার দিকে যাচ্ছিল। তার গায়ে তখন সাধারণ পোশাক। দেখে বুঝাই যাচ্ছিল না যে, এ শাহজাদী। তাই একজন কাজের ছেলে তাকে প্রাসাদের দাসী মনে করে চুমো দিয়ে বসল এবং মুহূর্তের মধ্যে সেখান থেকে কেটে পড়ল।
শাহজাদী এসে তার বাবাকে সব খুলে বলল। বাদশা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, ‘সেই আলিম ঠিকই বলেছিল। আমার এখন স্মরণে এসেছে। যৌবনের শুরুতে এক মেয়ের সাথে আমি ঠিক এই রকম একটা ব্যবহার করেছিলাম। আমি যে কাজ করেছিলাম আমার মেয়ের সাথেও তাই ঘটেছে।’ এটাই হলো কিসাস বা শোধ।
অনেক সময় দেখা যায় ব্যভিচার করে ভাই কিন্তু তার মুল্য দিতে হয় বোনকে। অর্থাৎ অন্য কেউ তার বোনের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। এমনিভাবে অপরাধ করে বাবা বা স্বামী আর তার মুল্য চুকাতে হয় মেয়ে বা স্ত্রীকে। এর উল্টাটাও হয়। এটা আল্লাহ তাআলার একটা নেজাম।
এই কারণে যেসব যুবকেরা সব সময় এসব নোংরা কাজের চিন্তায় থাকে তাদের মনে রাখা উচিত যে, তাদেরও বোন আছে, মেয়ে আছে, স্ত্রী আছে। তারা যদি অন্যের ইজ্জত-আব্রুর দিকে চোখ তুলে তাকায় তাহলে তাদের ইজ্জত-আব্রুর দিকেও অন্যরা চোখ তুলে তাকাবে। তাই এইসব গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করা উচিত।
ইমাম শাফিয়ি (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘যিনা হলো বান্দার জন্য কর্য স্বরূপ। এই কর্য তার নিকটাত্মীয় কারও মাধ্যমেই শোধ করা হয়।’
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এই গুনাহ থেকে তাওবা করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
ঘটনাটি নেওয়া হয়েছে 'দরদমাখা আহ্বান' বই থেকে
মূল-'মাওলানা যুলফিকার আহমাদ নকশবন্দি'
অনুবাদক- আবদুল্লাহ আল মাসউদ