21/11/2025
আজকের রুব্রিক ক্লাস: যখন মন তার নিজস্ব ভাষা হারিয়ে ফেলে (The Broken Gramophone)
আজকের ক্লাসে আমরা যে রুব্রিকটি নিয়ে আলোচনা করব, তা মনের গভীরে ঘটে যাওয়া এক বিশাল ভাঙনের চিত্র তুলে ধরে। এটি এমন এক অবস্থা যেখানে মানুষের বুদ্ধিমত্তা বা যুক্তি লোপ পায় এবং সে একটি 'যান্ত্রিক প্রতিধ্বনি'তে পরিণত হয়।
আজকের রুব্রিক: Mind; answer, answering, answers; repeats question; over and over, in a singing tone until interrupted by another, which he repeats like the first
আসুন, ধাপে ধাপে এর ব্যবচ্ছেদ করি।
১. রুব্রিকের গঠন (Structure)
রেপার্টরিতে রুব্রিকটি এভাবে সাজানো আছে: Mind; answer, answering, answers; repeats question; over and over, in a singing tone until interrupted by another, which he repeats like the first
২. ইংরেজি বাক্য গঠন (English Sentence Construction)
ব্যাকরণ মেনে সহজ ইংরেজিতে বাক্যটি সাজালে দাঁড়ায়:
"When answering, the patient repeats the question over and over in a singing tone until he is interrupted by another question, which he then repeats exactly like the first one."
বাংলা অর্থ: উত্তর দেওয়ার সময় রোগী প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে প্রশ্নটিই বারবার একটি সুর করে বা গাইতে গাইতে আউড়াতে থাকে, যতক্ষণ না তাকে অন্য কোনো প্রশ্ন করে থামানো হয়; তখন সে আবার ওই নতুন প্রশ্নটিকেও আগেরটির মতোই বারবার সুর করে আউড়াতে থাকে।
৩. শব্দগুলোর ব্যবচ্ছেদ (Word-by-Word Analysis)
আসুন, শব্দগুলোর গভীরে যাই:
Mind (মন): এটি মানসিক লক্ষণ।
Answer... (উত্তর দেওয়া): এখানে সমস্যাটি রোগীর কথোপকথন বা যোগাযোগের (Communication) প্রক্রিয়ায়।
Repeats question (প্রশ্ন পুনরাবৃত্তি): ডাক্তারি ভাষায় একে বলা হয় Echolalia (একোলালিয়া)। অর্থাৎ, রোগী উত্তর প্রসেস করতে পারছে না, সে কেবল আপনার কথাটিকেই তোতা পাখির মতো বা আয়নার মতো ফেরত দিচ্ছে।
Over and over (বারবার): এটি Perseveration বা 'আটকে যাওয়া'র লক্ষণ। মস্তিষ্কের যে অংশটি কাজ পরিবর্তন (switch task) করে, তা কাজ করছে না।
In a singing tone (গাইতে গাইতে/সুরেলা কণ্ঠে): এটি খুবই অদ্ভুত। রোগী স্বাভাবিকভাবে কথা বলছে না। সে একটি নির্দিষ্ট লয় বা সুরে (Chanting/Droning) কথাটি বলছে। এটি নির্দেশ করে যে সে বাস্তব জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন (Disconnected from reality)।
Until interrupted by another... (যতক্ষণ না অন্য প্রশ্ন করা হয়): রোগীর নিজের কোনো থামার ক্ষমতা নেই। আপনি নতুন ইনপুট দিলে তবেই সে আগেরটি থামায় এবং নতুনটি ধরে।
৪. রূপক বা মেটাফোরিক্যাল ব্যাখ্যা (The Core Concept)
আপনারা নষ্ট হয়ে যাওয়া গ্রামোফোন বা সিডি প্লেয়ার দেখেছেন? যেখানে পিনটা এক জায়গায় আটকে যায় এবং একই লাইন বারবার বাজতে থাকে?
এই রুব্রিকটি হলো "মস্তিষ্কের আটকে যাওয়া পিন" (The Stuck Needle of the Mind)।
ফাঁকা প্রতিধ্বনি (The Empty Echo): মনে করুন আপনি একটি বিশাল খালি গুহায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করলেন "তোমার নাম কী?" গুহা উত্তর দেবে না, সে শুধু ফেরত পাঠাবে "তোমার নাম কী... তোমার নাম কী..."। রোগীর অবস্থাও তাই। তার মনের ভেতরে যে 'প্রসেসর' বা বুদ্ধিমত্তা (Intellect) ছিল যা প্রশ্নটি বুঝে উত্তর তৈরি করবে, তা সাময়িকভাবে বা স্থায়ীভাবে অকেজো হয়ে গেছে। তার মন এখন শুধু একটি ফাঁকা দেওয়াল, যা শব্দকে বাউন্স করে ফেরত দিচ্ছে।
সুরেলা সুরের অর্থ (The Singing Tone): এই 'Singing tone' আনন্দের গান নয়। এটি হলো বিকারগ্রস্ত অবস্থার (Delirium) সুর। যখন মানুষ যুক্তির জগত থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখন তার কথার স্বাভাবিক ওঠানামা (Modulation) থাকে না, তা একটি একঘেয়ে সুরে বা ছড়ায় পরিণত হয়। এটি গভীর মস্তিষ্কের বিকার (Brain Lesion বা Severe Typhoid state) নির্দেশ করতে পারে।
৫. রোগীর ভাষ্য ও পর্যবেক্ষণ: আমরা বাস্তবে কী দেখব?
এই রুব্রিকটি আপনারা সাধারণত রোগীর নিজের মুখে অভিযোগ হিসেবে শুনবেন না। এটি আপনাদের Bedside Observation (রোগশয্যার পর্যবেক্ষণ)। সাধারণত টাইফয়েড, মেনিনজাইটিস, বা গভীর সিজোফ্রেনিয়ার রোগীদের ক্ষেত্রে এটি দেখা যায়।
দৃশ্যকল্প ১: গভীর জ্বরের রোগী (যেমন: টাইফয়েড বা ব্রেন ফিভার)
ডাক্তার: (রোগীর বিছানার পাশে গিয়ে) "কেমন আছেন আপনি?" রোগী: (চোখ আধবোঁজা করে, একটি নির্দিষ্ট সুরে বিড়বিড় করে) "কেমন আছেন আপনি... কেমন আছেন আপনি... কেমন আছেন আপনি..." (চলতেই থাকে)। ডাক্তার: (জোরে ধমক দিয়ে বা হাত ধরে) "ভাত খেয়েছেন?" রোগী: (আগেরটা থামিয়ে, সেই একই সুরে) "ভাত খেয়েছেন... ভাত খেয়েছেন... ভাত খেয়েছেন..."
দৃশ্যকল্প ২: মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী (Psychosis)
আপনি রোগীকে যা-ই জিজ্ঞেস করছেন, সে উত্তরের ধার ধারছে না। সে আপনার কথাটিকেই লুফে নিচ্ছে এবং একটি ছড়ার মতো করে সুর করে সেটাকেই বারবার বলছে। তার নিজের কোনো চিন্তাশক্তি বা বিচারবুদ্ধি কাজ করছে না। সে শুধু বাইরের শব্দগুলোকে যান্ত্রিকভাবে পুনরাবৃত্তি করছে।
শেষ কথা
একজন হোমিওপ্যাথ হিসেবে যখনই আপনারা দেখবেন রোগী প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে প্রশ্নটিকেই বারবার, একটানা, সুর করে আউড়ে যাচ্ছে—তখন বুঝবেন প্যাথলজি অনেক গভীর। এখানে Zincum Met, এর মতো গভীর ক্রিয়াশীল ওষুধের কথা মনে আসতে পারে। এটি নিছক পাগলামি নয়, এটি মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ হারানোর চরম পর্যায়।
আশা করি, এই অদ্ভুত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ রুব্রিকটি আপনাদের বুঝতে সুবিধা হয়েছে।