07/12/2025
কার থেকে মুক্তি, হরেনবাবু? ত্রিবিধ দুঃখ থেকে, না ভাববন্ধন থেকে? কোনটাকে দেশের একমাত্র কল্যাণ স্থির করে, আশ্রম-প্রতিষ্ঠায় নিযুক্ত হয়েছেন, বলুন ত? একি আপনার স্বদেশ-সেবার আদর্শ?
হরেন ব্যস্ত হইয়া উঠিল, না না না, এ-সব নয়, এ-সব নয়, এ আমাদের কাম্য নয়।
কমল কহিল, তাই বলুন, এ আমাদের কাম্য নয়, বলুন আমাদের আদর্শ স্বতন্ত্র। বলুন, সংসার ত্যাগ ও বৈরাগ্য সাধনা আমাদের নয়, আমাদের সাধনা পৃথিবীর সমস্ত ঐশ্বর্য, সমস্ত সৌন্দর্য, সমস্ত প্রাণ নিয়ে বেঁচে থাকা। কিন্তু তার শিক্ষা কি-ছেলেদের এই? গায়ে একটা মোটা জামা নেই, পায়ে জুতা নেই,পরনে জীর্নবস্ত্র, মাথায় রুক্ষকেশ, যারা কেবল এক বেলা অর্ধ্যাশনে, যারা কেবল অস্বীকারের মধ্যে দিয়েই বড় হয়ে উঠেচে, পাওয়ার আনন্দ, যার নিজের মধ্যেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল, দেশের লক্ষ্মী, কি-পাঠিয়ে দেবেন, শেষে তাদের হাত দিয়ে, তাঁর-ভাঁড়ারের চাবি ? হরেনবাবু পৃথিবীর দিকে একবার চেয়ে দেখুন, যারা অনেক পেয়েছে, তারা সহজেই দিয়েছে, এমন অকিন্চনতার স্কুল খুলে, তাদের ত্যাগের গ্রাজুয়েট তৈরি করতে হয়নি।
সতীশ হতবুদ্ধি হইয়া প্রশ্ন করিল, দেশের মুক্তি-সংগ্রামে কি, ধর্মের সাধনা, ত্যাগের দিক্ষা প্রয়োজনীয় নয়, আপনি বলেন?
কমল কহিল, মুক্তি সংগ্রামের অর্থটা আগে পরিষ্কার হোক।
সতীশ ইতস্ততঃ করিতে লাগিল।
কমল হাসিয়া বলিল, ভাবে বোধ হয় আপনি বিদেশী রাজশক্তির, বন্ধন-মোচনকেই দেশের মুক্তি-সংগ্রাম বলচেন। আমি নিজে ত ধর্মের সাধনাও করিনি, ত্যাগের দীক্ষাও নেইনি, তবুও আমাকে ঠিক সামনের দলেই পাবেন, এ আপনাকে আমি কথা দিলাম । কিন্তু আপনাদের খুঁজে পাব ত?
শেষ প্রশ্ন --------শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়