22/09/2025
হতাশা ক্ষণস্থায়ী, জীবন অনন্ত সম্ভাবনার।
গতকাল একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট জানিয়েছে, সে ১ম প্রফেশনাল পরীক্ষায় বসতে পারবে না এই ভয় থেকে কিছু আত্মঘাতী চিন্তা করছে। তার সাথে বেশ খানিকক্ষণ কথা বলার পরে মনে হলো জিনিসটা নিয়ে কথা বলা দরকার। কারণ শুধু মেডিকেল সেক্টরেই না, যেকোনো সেক্টরেই যেকেনো স্তরের মানুষের মধ্যে আজকাল এরকম চিন্তাভাবনা দেখা যায়।
বর্তমানে আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মঘাতী বা ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা আশংকাজনকভাবে বেড়ে গেছে। জীবনের প্রকৃত অর্থ বুঝে উঠার আগেই জীবনকে শেষ করে দিচ্ছে অনেকে। তাদের কাছে ক্ষণস্থায়ী সমস্যার পার্মানেন্ট সমাধান মনে হচ্ছে মৃত্যু। অথচ মৃত্যু কিন্তু অনিবার্য। একদিন সবাইকে এই সত্যের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।
কিন্তু আমরা সমস্যাকে এতো বড় করে দেখি যে সে তাড়নায় আর অপেক্ষা করতে পারি না। চূড়ান্ত সমাধান হিসেবে ধরে নেয় মৃত্যুকে। অথচ সামনেই হয়তো অপেক্ষা করছিলো জীবনে সবচেয়ে সুন্দরতম মুহুর্তগুলো। আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করলেই হয়তো এমন কিছু ঘটে যেত যাতে সব সমস্যার সমাধান হয়তো হয়েও যেতো। শুধু একটুখানি ধৈর্য, একটুখানি সময় দিতে হতো নিজেকে।
আর যদি সমাধান নাইবা হলো তাতে কী?? দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য তো করে যেতে পারি। আমাদের অনেকেরই জীবনের কোনো পর্যায়ে এসে আত্মঘাতী চিন্তাভাবনা তৈরি হয়। আত্মহত্যা বোধ করা কোনো চরিত্রের ত্রুটি নয় এবং এর অর্থ এটি নয় যে আপনি দুর্বল। এর অর্থ আপনি যতটা সহ্য করতে পারেন তারচেয়ে বেশি কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে।
কিন্তু বিশ্বাস করুন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আপনি আত্মহত্যার অনুভূতিগুলো কাটিয়ে উঠতে পারবেন। পৃথিবীর সফলতম, ধনী ব্যক্তিদের অনেকেও একসময় আত্মহত্যার চিন্তায় কাটিয়েছেন। মৃত্যুর মুখোমুখি হতে এবং বেঁচে থাকার ইচ্ছার শেষ প্রান্তে চলে আসতে অনেক অনেক সাহস লাগে। আপনি সে সাহস নিয়ে আত্নহত্যা না করে তাকে লালন করে তাকে শক্তি ও জেদে পরিণত করে দেখুন সামনের সমস্যাগুলো কতটা তুচ্ছ মনে হয়।
আমাদের আবেগ গুলো স্থায়ী নয়। নিয়মিত পরিবর্তিত হয়। আজকে এ মুহুর্তে আপনি যেরকম বোধ করছেন, আগামীকাল হয়তো সেরকম বোধ করবেন না বা আরো ভালো বোধ করবেন। প্রতিদিনের নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে আমাদের অনুভূতিগুলোও পরিবর্তিত হয়। তাই হাল ধরে থাকাটাই মুখ্য। কারণ আমাদের মস্তিষ্ক চেষ্টা করে কষ্টকর অনুভূতিগুলো প্রতিনিয়ত ভালো লাগার অনুভূতি দিয়ে প্রতিস্থাপিত করতে।
তাই বারবার বলছি নিজেকে খানিকটা সময় দিন। আপনি এখনও জীবনে অর্জন করতে পারেন এমন অনেক কিছু আছে। একটাই তো জীবন। পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করে নিন যত পারেন। ভালো খারাপ মিলিয়েই জীবন। তাই খারাপটা যখন জীবনের জন্য সমানভাবে অনিবার্য তাহলে তাকে ভয় পাবেন কেন??
আপনার ব্যর্থতা নিয়ে বাবা-মা, আশেপাশের মানুষ অনেক কথাই বলবে। বলতে থাকুক। জীবনটা উপরওয়ালার তরফ থেকে একটা উপহার। অন্যের কথা গঞ্জনার কারণে কেন এমন একটা মহৎ উপহারকে নষ্ট করে দেবেন? আপনার ইচ্ছেশক্তি আপনার খারাপ লাগার চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী। আরেকটা কথা মনে রাখবেন, আপনি যাদের জন্য বা যাদের কথায় প্ররোচিত হয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, আপনি চলে যাওয়ার পরেও তারা দিব্যি ভালো থাকবে। তাহলে যে আত্মত্যাগে কিছুই হাসিল হলো না, সে আত্মাত্যাগ করবেন কেন?
মনের সাথে যুদ্ধ করে যাওয়ার সক্ষমতা ব্যক্তিভেদে আলাদা। আপনি কোনো সমাধান পাচ্ছেন না তারমানে এই না যে আর কোনো সমাধান নাই। সমস্যা হচ্ছে, আপনি যথাযথ সমাধানটা সে মুহূর্তে দেখতে পাচ্ছেন না আবেগে আচ্ছন্ন হয়ে থাকার কারণে। আপনার কাছে দৃশ্যমান না এমন সমাধান আপনাকে দেখাতে পারে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, থেরাপিস্ট, বন্ধু বা প্রিয়জন।
কিন্তু ধরেন আপনার বন্ধু ও নাই, সেক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কোনো হেল্পলাইনে থাকলে কল করুন, সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যান, সাইকোলজিস্টের কাছে কাউন্সেলিং করুন। সংকটকালটা অস্থায়ী এবং যেকোন সময় অপ্রত্যাশিত ইতিবাচক ঘটনা ঘটতে পারে।
যখন কেউ একজন অনেক আত্মঘাতী বোধ করবেন তখনই থেমে যান। তখনই কিছু না করার প্রতিশ্রুতি নিন। কতটা কষ্টে থাকলে একজন মানুষ এরকম চিন্তা করতে পারে সেটা সহজে অনুমেয়। কিন্তু এখনই কিছু করে বসবেন না। কারণ এই মুহুর্তে আপনি স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করতে পারছেন না। তাই নিজের বর্তমান চিন্তা ও কর্মের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব দিন।
আপনার মতো পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছে এমন লোকেরাও এখন এই অনুভূতিগুলো থেকে বেরিয়ে এসে জীবনটাকে গুছিয়ে নিয়েছে। একা থাকবেন না, একা থাকা আত্মঘাতী চিন্তাকে আরো খারাপ করে তুলতে পারে। খারাপ বোধ হয় এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। নেতিবাচক চিন্তা নিয়ে ভাবনা বাদ দিয়ে দিন। মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নিন।
প্রয়োজনে বিভিন্ন সাপোর্ট গ্রুপ বা থেরাপিস্টের সাথে যোগাযোগ রাখুন। জীবন আসলেই অনেক কঠিন। সবসময় সবকিছু মনমতো হবে না, এটা মেনে নিতে হবে। যার জন্য বা যে জিনিসের জন্য এখন নিজের জীবনটাই দিয়ে দিতে চাচ্ছেন, আর কিছুদিন পরে এ বিষয়টা হতে পারে একদম ম্যাটার করবে না।
খারাপ লাগাকে গ্রহণ করতে শিখুন। নিজেকে সময় দিয়ে ফিনিক্স পাখির মতো জ্বলে যাওয়া ছাই থেকে তুলে আনুন আবারো। হারতে থাকুন কিন্তু থেমে যাবেন না।
©Sudipta Chowdhury, 3rd Year MBBS, EDITOR (Rotaract club of CMOSHMC)