12/11/2025
✅✅ বিষয়:PLID/Sciatica/কোমর ব্যথা।
✅ Prolapse Lumbar Intervertebral Disc (PLID): পিএলআইডি বলতে বোঝায় কোমরের মেরুদণ্ডের মধ্যে থাকা ডিস্কের নরম অভ্যন্তরীণ অংশ (nucleus pulposus) শক্ত বাইরের স্তর (annulus fibrosus) ভেদ করে বাইরে চলে আসে, এর ফলে আশেপাশের নার্ভ রুট বা স্পাইনাল কর্ডে চাপ পড়ে, যা ব্যথা ও স্নায়বিক উপসর্গের সৃষ্টি করে।
✅ PLID এর কারণসমূহ:
১) বয়সজনিত পরিবর্তন
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিস্কের পানিশূন্যতা ও দুর্বলতা দেখা দেয়। ফলে Annulus fibrosus কম ইলাস্টিক হয়ে ফেটে যেতে পারে।
২) বারবার ঝোঁকা বা মোচড়ানো
বারবার সামনে-পেছনে ঝোঁকা বা শরীর মোচড়ানোর ফলে কোমরের ডিস্কে চাপ পড়ে।
৩) ভারী জিনিস তোলা
ভুল ভঙ্গিতে বা হঠাৎ করে ভারী কিছু তুললে ডিস্কের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা ডিস্ক সরে যাওয়ার কারণ হতে পারে।
৪) আঘাত বা দুর্ঘটনা
পড়ে যাওয়া, সড়ক দুর্ঘটনা, বা হঠাৎ পিঠে ধাক্কা লাগলে ডিস্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৫) দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা
দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকা, বিশেষ করে ভুল ভঙ্গিতে বসলে, কোমরের নিচের অংশে চাপ বৃদ্ধি পায়।
৬) স্থূলতা (মোটা হওয়া)
অতিরিক্ত ওজন কোমরের মেরুদণ্ডে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে।
৭) দুর্বল পিঠ ও পেটের পেশি
যাদের পিঠ ও পেটের পেশি দুর্বল, তাদের মেরুদণ্ড পর্যাপ্ত সহায়তা পায় না, ফলে ডিস্ক সহজে সরে যেতে পারে।
৮) বংশগত কারণ
কিছু মানুষের জিনগতভাবে ডিস্ক দুর্বল থাকে, ফলে তাদের PLID হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
✅ Stages/ Grading of PLID (পিএলআইডি এর ধাপসমূহ):
১) প্রথম ধাপ: Disc Bulging/ Degeneration (ডিস্কের ক্ষয়): নিউক্লিয়াস প্যালপোসাসের (nucleus pulposus) ভেতরে জৈব রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে এটি পানি ও স্থিতিস্থাপকতা হারায়। এর ফলস্বরূপ, ডিস্ক কম নমনীয় হয়ে পড়ে এবং সহজেই আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে।
২) দ্বিতীয় ধাপ:Disc Protrusion (ডিক্স প্রসারিত হওয়া): এক্ষেত্রে নিউক্লিয়াস প্যালপোসাস স্থানচ্যুত হয়ে অ্যানুলাস ফাইব্রোসাসের (annulus fibrosus) অভ্যন্তরীণ স্তরগুলোকে বাইরের দিকে ঠেলে দেয়, ফলে ডিস্কের প্রান্ত কিছুটা ফোলাভাব সৃষ্টি করে। তবে এই পর্যায়ে অ্যানুলাস ফাইব্রোসাসের বাইরের স্তর এখনো অক্ষত থাকে।
৩) তৃতীয় ধাপ:Disc Extrusion: এক্ষেত্রে নিউক্লিয়াস প্যালপোসাস অ্যানুলাস ফাইব্রোসাস ভেদ করে বাইরে বেরিয়ে আসে, যদিও এটি মূল ডিস্কের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। এই অবস্থায় ডিস্কের স্ফীতি আরও স্পষ্ট হয় এবং পার্শ্ববর্তী স্নায়ু শিকড়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
৪) চতুর্থ/শেষ ধাপ: Disc Sequestration: এক্ষেত্রে নিউক্লিয়াস প্যালপোসাসের একটি অংশ সম্পূর্ণভাবে মূল ডিস্ক থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং মেরুদণ্ডের নালির ভেতরে স্থানান্তরিত হতে পারে, যার ফলে তীব্র স্নায়ু চাপ ও প্রদাহের সৃষ্টি হয়।
✅ Clinical Features of PLID : পিএলআইডি এর উপসর্গসমূহ:
১) ব্যথা (Pain): মৃদু্,তীব্র বা ধারালো কোমর ব্যথা হতে পারে। ব্যথা পায়ে ছড়িয়ে যায় (সায়াটিকা)। হাঁচি, কাশি, বাঁকা হওয়া বা দীর্ঘ সময় বসলে ব্যথা বেড়ে যায়।
২) স্নায়বিক উপসর্গ (Neurological Symptoms)
Sensory: পায়ে ঝিনঝিনি, জ্বালাপোড়া, অবশভাব বা সুচ ফোটার মতো অনুভূতি।
Motor: পেশিশক্তি কমে যাওয়া।
Reflex: হাঁটু বা অ্যাঙ্কল রিফ্লেক্স কমে যেতে পারে।
৩) দেহভঙ্গির পরিবর্তন (Postural Changes): রোগী ব্যথা কমানোর জন্য একদিকে ঝুঁকে থাকে। কোমরের স্বাভাবিক বাঁক (লর্ডোসিস) সোজা হয়ে যায়। আবার কিছু ক্ষেত্রে কোমর একপাশে ব্যাকে লেটারাল শিফটিং হতে পারে।
৪) বিশেষ পরীক্ষা (Special Tests):
Straight Leg Raise (SLR) টেস্ট: এক্ষেত্রে পা সোজা করে উপরে তুললে পায়ে ব্যথা হয়।
Cross SLR টেস্ট: এক্ষেত্রে বিপরীত পা তুললেও আক্রান্ত পায়ে ব্যথা হয়।
Slump Test: এক্ষেত্রে নার্ভকে খুব strtch করা হয়, যার ফলে ব্যথা পুনরায় হয়।
৫) গুরুতর অবস্থা:
Cauda equina syndrome: মল-মূত্র নিয়ন্ত্রণ হারানো, যৌন অসাড়তা, পায়ুপথে অনুভূতি কমে যাওয়া। এটি একটি জরুরি অবস্থ, যা জরুরী ভাবে অপারেশনের প্রয়োজন।
✅ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা:
ক) ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার লক্ষ্য :
১) ব্যথা ও প্রদাহ কমানো।
২) নার্ভের উপর চাপ হ্রাস করা।
৩) মেরুদণ্ডের নড়াচড়া ও শক্তি ফিরিয়ে আনা।
৪) পুনরায় যেন না হয় তা প্রতিরোধ করা।
খ) ফিজিওথের চিকিৎসার ধাপসমূহ:
১) তীব্র পর্যায় (Acute Phase)
বিশ্রাম: ১–৩ দিনের স্বল্প বিশ্রাম।
ফিজিওথেরাপি :
বরফ (Ice)।
ইলেক্ট্রো থেরাপির বিভিন্ন ধরনের ফিজিও চিকিৎসা যেমন TENS অথবা IFT ইত্যাদি।
পজিশনিং: McKenzie prone lying (পেটে শোয়া বা কনুই ভর দিয়ে উঠা)।
সামনে ঝুঁকে বসা এড়ানো।
২) উপ-তীব্র পর্যায় (Subacute Phase):
McKenzie Exercises: পেটে শোয়া → কনুই ভর দেওয়া → প্রেস-আপ → দাঁড়িয়ে এক্সটেনশন ইত্যাদি।
Core Stabilization: ট্রান্সভারসাস অ্যাবডোমিনিস ও মাল্টিফিডাস পেশি শক্ত করা।
Stretching: হ্যামস্ট্রিং ও হিপ ফ্লেক্সর প্রসারিত করা।
Joint Mobilization: ব্যথা না থাকলে কোমরের জয়েন্টে হালকা মবিলাইজেশন।
Postural Training: সঠিক বসা, দাঁড়ানো ও কাজের ভঙ্গি শেখানো।
Shock wave Therapy and
Clinical Dry Needling.
৩) দীর্ঘস্থায়ী / ফাংশনাল পর্যায় (Chronic / Functional Phase):
Strengthening: কোর, ব্যাক এক্সটেনসর, গ্লুটিয়াল ও অ্যাবডোমিনাল পেশি শক্ত করা।
Flexibility: শক্ত বা সংকোচিত পেশি স্ট্রেচ করা।
Functional Training: সঠিকভাবে ভার তোলার কৌশল শেখানো, দৈনন্দিন কাজের সঠিক অঙ্গভঙ্গি শেখানো সহ ইত্যাদ।
Aerobic Exercise: হাঁটা, সাঁতার বা সাইক্লিং ইত্যাদি।
✅ কখন অপারেশন করাবেন?
ক্রমবর্ধমান স্নায়বিক দুর্বলতা।
দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, যা মেডিসিন ও ফিজিওথেরাপিতে কমে না। মল-মূত্র নিয়ন্ত্রণ হারানো, যৌন অসাড়তা, পায়ুপথে অনুভূতি কমে যাওয়া (Cauda equina syndrome)।
মোঃ ওমর ফারুক
ফিজিওথেরাপিস্ট
বিপিটি (ডিইউ)
ফেলো অর্থোপেডিক মেডিসিন জিসিআই
ফিজিওথেরাপিস্ট উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স লাকসাম কুমিল্লা
চেম্বার: ওমর'স ফিজিওথেরাপি এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার
ডাক্তার মুবিন ডি ল্যাব, পশ্চিমগাঁও, লাকসাম কুমিল্লা।