21/09/2025
বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয় গ্রীষ্মকালীন পানীয়গুলির মধ্যে অন্যতম হলো- আখের রস। এটি খুব সহজলভ্য এবং উপকারী একটি পানীয়। রিপোর্ট অনুযায়ী, আখের রসের বিশ্বব্যাপী বাজার মূল্য 2021 সালে প্রায় 1,145 কোটি টাকা ছিল, যা 2028 সালে প্রায় 1,937 কোটি টাকা হবে বলে অনুমান করা হয়েছে।
কিন্তু, কেন এর এত জনপ্রিয়তা? হাজার হাজার কোমল পানীয়ের ভিড়ে আখের রসের এত চাহিদা কেন?
আখ (Saccharum officinarum) বা আখের রসে যেসকল পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় তার মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ক্রোমিয়াম, কোবল্ট, তামা, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও জিঙ্ক। এ ছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রোটিন (সামান্য), আয়রন ও ভিটামিন এ, সি, বি১, বি২, বি৩, বি৫ ও বি৬।
শীর্ষ স্বাস্থ্য উপকারিতা–
ক্যান্সার প্রতিরোধ
আখের রসে উচ্চমাত্রার ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ ও ক্যালসিয়াম থাকার কারণে এটিকে ক্ষারীয় বলে মনে করা হয়। ক্যান্সারের মতো রোগ একটি ক্ষারীয় পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে না এবং গবেষণায় জানা গেছে—ক্যান্সার, বিশেষ করে প্রস্টেট এবং স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ক্ষেত্রে এটি খুবই কার্যকর।
মূত্রবর্ধক গুণ
আখের রস শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ এবং টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। ফলস্বরূপ, কিডনিতে পাথর বা মূত্রনালীর সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এটি কিডনির স্বাভাবিক কার্যকারিতায়ও অবদান রাখে। কেউ যদি মূত্রনালীর অভ্যন্তরে জ্বালাপোড়া অনুভব করেন, তাহলে আখের রস খেয়ে কিছুটা স্বস্তি লাভ করতে পারেন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
আখ আমাদের শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস থাকলেও পরিমিত পরিমাণে আখের রস পান করা নিরাপদ। কেননা, আখে ফাইবার থাকে যা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এছাড়া রয়েছে প্রাকৃতিক মিষ্টি যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। এতে ফ্যাটের পরিমাণ খুব কম।
লিভার ভাল রাখে
আখের রস অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা লিভারের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে এবং হারানো প্রোটিন পুনরুদ্ধার করে বিলিরুবিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। জন্ডিস হলে ব্যক্তিকে আখের রস দেওয়া উচিত। এটি লিভার সুস্থ রাখে এবং লিভারকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা
আখের রস অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্ল্যাভোনয়েডের একটি চমৎকার উৎস। আখের রস পান করলে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শরীর অন্যান্য রোগের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারে।
ওজন কমায়
আখের মধ্যে থাকা ফাইবার ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি শরীরের বিপজ্জনক কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হার্ট ভালো রাখে।
উজ্জ্বল ত্বক
গ্রীষ্মকালে কড়া রোদ এবং ঘামের কারণে ত্বক উজ্জ্বলতা হারায়। আখের রস ত্বককে সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। আখের রসে রয়েছে আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড (AHAs), যা ত্বক সংক্রান্ত সমস্যা দূর করে,দাগ দূর করে এবং শরীরের বিষাক্ত বা টক্সিক উপাদান পরিষ্কার করে।
শক্তহাড়
আখের রসে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন এবং পটাশিয়াম রয়েছে- এই সমস্ত উপাদান হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। আখ চিবিয়ে খেলে দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
বার্ধক্যকে ধীর করে
ত্বককে যদি তরুণ, উজ্জ্বল এবং উজ্জ্বল দেখতে চান তবে খাবারে আখের রস রাখুন। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্ল্যাভোনয়েড, ফেনোলিক অ্যাসিড এবং গ্লাইকোলিক অ্যাসিড আপনার ত্বককে নরম ও চকচকে রাখতে সাহায্য করবে।
হজম শক্তির বৃদ্ধি
প্রচুর পটাশিয়াম থাকায় আখের রস পাকস্থলীর পিএইচ মাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। পরিপাক রসের নিঃসরণ বৃদ্ধির পাশাপাশি, কোষ্ঠকাঠিন্য হ্রাস করে। এর ফাইবারগুলো পরিপাকতন্ত্রকে পরিষ্কার করে।
গর্ভাবস্থায় আখের রস
আখের রসে উপস্থিত ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জন্মগত স্নায়বিক ব্যাধিগুলোর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। যেমন- স্পাইনা বিফিডা, মেরুদণ্ডের গঠনে জন্মগত ত্রুটি৷
পানিশুন্যতা রোধ
গরমে ঘামের কারণে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। গ্রীষ্মে নিয়মিত আখের রস পান করলে এই পানিশূন্যতা দূর হয়। আখে থাকা ম্যাংগানিজ, আয়রন, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রোলাইট সরবরাহ করে থাকে।
ডায়াবেটিকস রোগি কি আখের রস খেতে পারবেন?
আখের রসের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) কম হলেও গ্লাইসেমিক লোড (GL) বেশি। তাই ডায়াবেটিক রোগীদের এটি পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিৎ (১০০-১৫০ মিলি এর বেশি নয়) । সরাসরি রস করে না খেয়ে আখ চিবিয়ে খাওয়াটা তাদের জন্য বেশি উপযোগি। এতে করে একবারে অনেক বেশি খাওয়া হবে না আবার হুট করে রক্তে সুগারও বাড়বে না। তবে হাইপোগ্লাইসেমিক হয়ে গেলে ব্লাড সুগার পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আখের রস উপকারি ভুমিকা পালন করে।