24/11/2025
#প্যানিক অ্যাটাক হচ্ছে ভীতি ও উদ্বেগের অনুভূতি যা হঠাৎ করেই আমাদের হতবিহ্বল করে দিতে পারে এবং সাধারণত এর সঙ্গে হালকা মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও হার্টবিট বেড়ে যাওয়ার মতো তীব্র শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয়।
প্যানিক এট্যাক হলে কি কি হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন আসতে পারে
১. Aconite napellus (Acon.)
Aconite হলো সেই ধরনের রোগীদের জন্য শ্রেষ্ঠ ওষুধ যারা ভয়-এর ঢেউ বা হঠাৎ তীব্র প্যানিক অ্যাটাকে ভোগে। উপসর্গগুলো খুব হঠাৎ করে শুরু হয়, অত্যন্ত তীব্র হয়, এবং অনেক সময় কোনো হঠাৎ শক, যেমন—এক্সিডেন্ট, ভয়াবহ খবর, বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর দেখা দিতে পারে। রোগী অস্থির, ছটফট করে, ভয় পায়, মনে করে সে এখনই মারা যাবে—এমনকি কখন মারা যাবে তাও বলে দিতে পারে।
অন্যান্য লক্ষণঃ ত্বক ও মুখ শুকিয়ে যাওয়া, তৃষ্ণা, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া। আগের কোনো ট্রমাটিক ঘটনার পর দীর্ঘদিন ধরে থাকা উদ্বেগেও Aconite কাজে লাগে।
মনে রাখবেন: খুব দ্রুত শুরু, ভয়ঙ্কর তীব্র উপসর্গ, অস্থিরতা, মৃত্যুভয়, প্যানিক অ্যাটাক।
---
২. Argentum nitricum (Arg-n.)
যখন কেউ ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে তা না জানার কারণে ভীষণ উৎকণ্ঠায় ভোগে, তখন Arg-n. প্রয়োজন হতে পারে। যত বেশি চিন্তা করে, ভয় তত বাড়তে থাকে। তারা তড়িঘড়ি করে, গরম বেশি লাগে, এবং মিষ্টি খাবারের প্রবল আকাঙ্ক্ষা থাকে।
মিষ্টি খেলেই তাদের গ্যাস, ডায়রিয়া বা হজমের গন্ডগোল হয়—আর উদ্বেগ থাকলেই এগুলো বেড়ে যায়। এছাড়া, অদ্ভুত ধরণের চিন্তা কাজ করে—যেমন “যদি হঠাৎ রাস্তায় নেমে যাই”, “যদি নিজেকে ফেলে দিই”, “যদি সকেটের মধ্যে কিছু ঢুকিয়ে দিই”… এ রকম অবাঞ্ছিত ‘What if…’ চিন্তাগুলো থাকে।
গরমে উপসর্গ বাড়ে, ঠান্ডা হাওয়া ও কম ভিড় জায়গায় তাদের ভালো লাগে।
মনে রাখবেন: উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, অদ্ভুত ‘what if’ চিন্তা, মিষ্টির আকাঙ্ক্ষা, গরমে খারাপ।
---
৩. Arsenicum album (Ars.)
Arsenicum টাইপ উদ্বেগ সাধারণত নিরাপত্তা, ভবিষ্যৎ, স্বাস্থ্য, রাতে একা থাকা, বা চুরি-ডাকাতি—এসবকে কেন্দ্র করে থাকে। সবকিছু নিয়েই তারা ভয় করে, চিন্তা করে। এই নিরাপত্তাহীনতা কাটাতে তারা অত্যন্ত নিয়মকানুন মানে, পরিপাটি থাকে, এবং কখনো কখনো স্বার্থপরও মনে হয়।
তারা সঙ্গ চাই, কিন্তু সেই সঙ্গের মানুষদের সমালোচনা করেও থাকে। সাধারণত খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, শীতল প্রকৃতির এবং গরমে ভালো লাগে।
মনে রাখবেন: স্বাস্থ্য-নিরাপত্তা-ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ, পরিপাটি স্বভাব, শীতল প্রকৃতি, সঙ্গের প্রয়োজন।
---
৪. Calcarea carbonica (Calc.)
যাদের পরিবর্তনের ভয় বা নিয়ন্ত্রণ হারানোর ভয় বেশি, তাদের Calc. লাগে। রুটিন বদলাতে চায় না, সবকিছু একই রাখতে চায়, তাই তাদের অনেক সময় একগুঁয়ে মনে হয়।
এরা সাধারণত ভারী গড়নের হয়, হাঁটাহাঁটি বা সিঁড়ি ভাঙলে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে, এবং সহজেই ঘেমে যায়—বিশেষ করে ঘাড়ের পেছনে ঘুমের সময় ঘাম বেশি হয়।
অন্ধকার, পোকা, মাকড়সা, কুকুর ইত্যাদি প্রাণীর ভয় থাকে। কোনো রকম নিষ্ঠুরতা বা খারাপ কিছু দেখা বা শুনতে পারে না। কখনো কখনো বিভ্রান্ত হয়ে যায় এবং মনে হয় পাগল হয়ে যাচ্ছে।
মনে রাখবেন: পরিবর্তনের ভয়, সহজে ক্লান্ত হওয়া, বেশি ঘাম, খারাপ বা নিষ্ঠুর কিছু দেখলে উদ্বেগ।
৫. Gelsemium sempervirens (Gels.)
যাদের Gelsemium প্রয়োজন, তারা পারফরম্যান্স অ্যাংজাইটি বা কোনো কাজের আগে ভয় পেলে মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যায়। সামান্য পরিশ্রমেই হাত-পা কাঁপতে থাকে—হাঁটু কাঁপে, পা ঢলে যায়, হাত কেঁপে ওঠে। উদ্বেগ এত তীব্র হয় যে মনে হয় শরীর অসাড় হয়ে গেছে, কিছুই করতে পারছে না, শুধু লুকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।
Gelsemium agoraphobia (মুক্ত জায়গার ভয়) ও ইনফ্লুয়েঞ্জা–র সময় প্রচণ্ড দুর্বলতা ও কাঁপুনি থাকলে খুব কার্যকর।
মনে রাখুন: উদ্বেগ, দুর্বলতা, হাত-পা কাঁপা, নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চাওয়া, পরিস্থিতি সামলাতে না পারা।
---
৬. Kali arsenicosum (Kali-ar.)
এই ওষুধ তাদের জন্য যাদের উদ্বেগ বিশেষ করে হৃদযন্ত্র নিয়ে—হার্ট অ্যাটাক হবে, হার্টে সমস্যা আছে—এই ভয় স্থায়ী থাকে। এর ফলেই বারবার প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে বা তারা ঘুমানোর সময় হাত বুকে রেখে ঘুমায়।
রাতে উদ্বেগ বাড়ে, তাই ঘুমাতে যেতে ভয় পায়। কখনো কখনো মৃত মানুষ দেখার মতো ভ্রমও হতে পারে। এরা সাধারণত শীতল প্রকৃতির হয়।
মনে রাখুন: হৃদযন্ত্র নিয়ে উদ্বেগ, রাতে উদ্বেগ বাড়ে, শীতল প্রকৃতি।
---
৭. Kali phosphoricum (Kali-p.)
যারা সবকিছুতে সহজেই ওভারওয়েল্মড হয়ে উদ্বেগে ভোগে, তাদের Kali-p. লাগে। তারা খুব সংবেদনশীল, সহজে ভয় পায়, চমকে ওঠে, নার্ভাস হয়।
অতিরিক্ত চাপ, বেশি কাজ, টেনশন বা চিন্তা থেকে শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়। অতিরিক্ত ক্লান্তির কারণে বিরক্তি ও উদ্বেগ বাড়ে। অনেক সময় ভয় হয়—“আমি কি নার্ভাস ব্রেকডাউন করে ফেলব?” বা “খারাপ কিছু হবে।”
মনে রাখুন: অতিসংবেদনশীল, চাপ সহ্য করতে না পারা, উদ্বেগ, ক্লান্তি ও বিরক্তি।
---
৮. Lycopodium clavatum (Lyc.)
Lycopodium–এর রোগীরা সাধারনত anticipation anxiety—আগে থেকে ভয় পাওয়া—এ ভোগে, বিশেষ করে স্টেজ ফ্রাইট। তাদের আত্মবিশ্বাস কম থাকে, কিন্তু কাজের মাঝপথে এলে বেশ ভালোভাবেই সামলে নিতে পারে।
নতুন মানুষ বা নতুন পরিবেশে ভয় পায়, কিন্তু তা ঢাকার জন্য বেশি কথা বলে বা আত্মবিশ্বাসী সেজে থাকে। উদ্বেগের সঙ্গে অনেক সময় পেট ফাঁপা থাকে। মিষ্টির প্রতি আকর্ষণ বেশি।
মনে রাখুন: আত্মবিশ্বাসের অভাব, বাড়াবাড়ি আত্মপ্রদর্শন, পেট ফাঁপা, মিষ্টির প্রতি আকর্ষণ।
---
৯. Phosphorus (Phos.)
Phosphorus টাইপদের অনেক ধরনের ভয় ও উদ্বেগ থাকে, কিন্তু সবচেয়ে বেশি একাকীত্বের ভয়। কেউ পাশে থাকলেই তারা ভালো থাকে। তাই তারা খুব সংবেদনশীল, মিশুক, বন্ধুসুলভ হয়।
অন্ধকার, ভূত, ঝড়-বৃষ্টির ভয় থাকে। খুব সহজে চমকে ওঠে। গন্ধ, শব্দ—সবকিছুর প্রতি অতিসংবেদনশীল। কল্পনাশক্তি খুব জোরালো। তারা খুব সহানুভূতিশীল—অন্যের আবেগ খুব দ্রুত গ্রহণ করে।
কোল্ড ড্রিঙ্কস, মিষ্টি (বিশেষ করে চকলেট), আইসক্রিম, ঝাল খাবার খুব পছন্দ করে।
মনে রাখুন: একা থাকতে ভয়, সঙ্গ পেলে ভালো, অতিসংবেদনশীল, কল্পনাশক্তি প্রবল, চমকে ওঠা।
Dr-Esrat Jahan Metu
Govt Homeopathic Medical College and Hospital, Mirpur 14
BHMS (DU)