27/10/2025
গলার স্বরভঙ্গ বা গলা বসে যাওয়া একটি খুব পরিচিত সমস্যা। এটি নানা কারণে হতে পারে এবং এর জন্য সঠিক প্রতিকার জানা খুব জরুরি।
স্বরভঙ্গকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় 'হোরসনেস' (Hoarseness) বলা হয়, এবং এর মানে হলো গলার স্বরের অস্বাভাবিক পরিবর্তন—যা ফ্যাসফেসে, কর্কশ, দুর্বল বা নিচু হতে পারে।
🎤 স্বরভঙ্গের প্রধান কারণসমূহ
স্বরভঙ্গ সাধারণত স্বরযন্ত্র (Larynx) এবং স্বররজ্জু বা ভোকাল কর্ডের (Vocal Cords) স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত হওয়ার কারণে ঘটে। প্রধান কারণগুলো নিচে দেওয়া হলো:
১. ল্যারিনজাইটিস বা স্বরযন্ত্রের প্রদাহ:
এটি স্বল্পমেয়াদী (Acute) হতে পারে, যা সাধারণত ঠান্ডা লাগা, ফ্লু বা শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের কারণে হয়। স্বররজ্জু ফুলে যায় এবং স্বর বসে যায়।
এটি দীর্ঘমেয়াদী (Chronic) হতে পারে, যা ধূমপান, এসিড রিফ্লাক্স (GERD), অ্যালার্জি বা অতিরিক্ত কথা বলার কারণে হতে পারে।
২. স্বরযন্ত্রের অতিরিক্ত ব্যবহার: শিক্ষক, গায়ক, বক্তা, বা কনডাক্টরের মতো পেশার লোকেরা, যারা জোরে বা দীর্ঘ সময় কথা বলেন বা চিৎকার করেন, তাদের গলা বসে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
৩. ভোকাল কর্ডে সিস্ট, নডিউল বা পলিপ: স্বররজ্জুতে ছোট ছোট মাংসপিণ্ড বা বৃদ্ধি তৈরি হতে পারে (যা ক্যান্সার নয়), যা স্বরের কম্পনকে ব্যাহত করে।
৪. আঘাত বা ট্রমা: গলায় আঘাত লাগা বা হঠাৎ খুব জোরে আওয়াজ করার কারণে স্বরযন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৫. বয়ঃসন্ধিকাল (Puberty): ছেলেদের ক্ষেত্রে এই সময় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে স্বরযন্ত্র দ্রুত বাড়ে, যার ফলে স্বর পরিবর্তন হয় এবং সাময়িকভাবে গলা ভেঙে যায়।
৬. অন্যান্য রোগ: থাইরয়েড সমস্যা, নিউরোলজিক্যাল রোগ (যেমন পারকিনসন রোগ), বা গ্যাস্ট্রোএসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD) এর কারণেও স্বরভঙ্গ হতে পারে।
৭. স্বরনালির ক্যান্সার: দীর্ঘস্থায়ী স্বরভঙ্গের অন্যতম মারাত্মক কারণ হলো স্বরনালি বা ভোকাল কর্ডের ক্যান্সার।
🤒 স্বরভঙ্গ হলে করণীয় ও ঘরোয়া প্রতিকার
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বরভঙ্গ ঘরোয়া উপায়ে এবং বিশ্রামের মাধ্যমে সেরে যায়।
১. কথা বলা কমিয়ে দিন: স্বরযন্ত্রকে বিশ্রাম দিন। সম্ভব হলে কথা বলা বন্ধ রাখুন বা ফিসফিস না করে খুব নিচু স্বরে কথা বলুন।
২. গরম বাষ্প টানা (স্টিম ইনহেলেশন): গরম পানির বাষ্প মুখ ও নাক দিয়ে টানা গলার জন্য খুবই উপকারী। দৈনিক অন্তত ১০ মিনিট এটি করতে পারেন।
৩. গার্গল: হালকা গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গার্গল করলে গলার উপকার হয়। লবঙ্গযুক্ত গরম জল দিয়েও গার্গল করতে পারেন।
৪. তরল পান: প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন এবং গলাকে ভেজা রাখুন।
৫. আদা, মধু ও তুলসী: আদা, মধু ও তুলসী পাতার রস মিশ্রণ করে চায়ের সাথে বা গরম পানির সাথে পান করতে পারেন। এটি গলার আরাম দিতে সাহায্য করে।
৬. ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার: এগুলো স্বরযন্ত্রের প্রদাহ আরও বাড়াতে পারে, তাই এগুলো এড়িয়ে চলুন।
৭. ক্যাফিন ও ঝাল খাবার: এগুলো পরিহার করা উচিত, বিশেষত যদি এসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা থাকে।
🚨 কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
যদি আপনার স্বরভঙ্গ তিন সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় বা এর সাথে নিচের উপসর্গগুলো থাকে, তবে দ্রুত একজন নাক,কান,গলা রোগে অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:
শ্বাস নিতে বা গিলতে কষ্ট হওয়া।
গলায় ব্যথা বা তীব্র জ্বর।
গলায় কোনো পিণ্ড বা ফোলা অনুভব করা।
কারণ, দীর্ঘস্থায়ী স্বরভঙ্গ কখনও কখনও ভোকাল কর্ড নডিউল বা পলিপ কিংবা ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের লক্ষণ হতে পারে।
গলার স্বরের যত্নে মনোযোগ দেওয়া এবং এর স্বাভাবিক পরিবর্তনগুলোকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া প্রয়োজন।
আপনি যদি এ ধরনের সমস্যায় ভুগে থাকেন তা হলে যোগাযোগ করতে পারেন -শাহজালাল হোমিও হল ঢাকা ০১৭১৬৩১৩৭৪৩ চট্টগ্রাম ০১৯৩৭২৭২৩৮০