08/07/2025
ডাক্তার সুপর্ণা বড়ুয়া এবং ডাক্তার অসীমা বড়ুয়া। ফটিকছড়ির দুটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের 'মাঠ উন্নয়ন পরিদর্শক' হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত আছেন। অবসরের কাছাকাছি চলে এসেছে। এই দুইজনের গল্প করি আজকে।
একজন ধর্মপুর ইউনিয়নে কাজ করেন, আরেকজন কাজ করেন বখতপুর ইউনিয়নে। স্থানীয়ভাবে এরা ডাক্তার হিসেবে বিখ্যাত। গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আমি ভিজিট করতে যেতাম সুপর্ণা বড়ুয়াকে। আমার সাথে ভালই সম্পর্ক। গিয়ে দেখতাম রোগীরা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে, আর সে তার ব্যক্তিগত আয়াকে দিয়ে চা-নাস্তা বানিয়ে খাচ্ছে। আমি গিয়ে বাইরে দাঁড়াতে চাইলেও ডেকে চেম্বারে ঢুকিয়ে ফেলতেন। চা-নাস্তা দিয়ে আপ্যায়ন করতেন। আমি কোম্পানির দেওয়া গিফট দিয়ে ভিজিট করতাম। রোগীদের দিকে তার কোন ভ্রুক্ষেপ নাই। কোন রোগী চেম্বারে ঢুকার জন্য আগ্রহ দেখালেই রাগ দেখিয়ে কথা বলেন। তারপর তার মর্জি অনুযায়ী ডাকতেন। তাকিয়ে দেখি প্রায় সবার কাছ থেকে ফি নেয়। অফিস টাইমে সরকারি অফিসে বসে গাইনি চিকিৎসক হিসেবে প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়ে ১০০ টাকা করে ফি নেয়!
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ডিউটি কতক্ষণ তা আমার জানা নাই। কিন্তু তাকে একটার পরে কদাচিৎ অফিসে দেখা যায়। বাসার সাথে লাগানো প্রাইভেট চেম্বার আছে। সেখানে বিকেলের দিকে রোগীর সিরিয়াল বসে। রোগীদের ধারণা তারা শ্রেষ্ঠ ডাক্তারের কাছে আসেন। যথারীতি প্রাইভেট চেম্বারেও রোগীদের সাথে তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মত আচরণ করেন। তবুও তারা খুশি। কারণ, শ্রেষ্ঠ গাইনি চিকিৎসকের সেবা পাওয়া যাচ্ছে নিজের এলাকাতেই। তাও মাত্র ২০০ টাকা ফি।
সুপর্ণা কোন ডাক্তার না। ধাত্রী ও নারী স্বাস্থ্যের উপরে একটা ট্রেইনিং দিয়ে তাদেরকে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয়। আর সে হয়ে গেছে গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার।
সুপর্ণাকে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি টাকা দেয় মাসে ১২০০০ টাকা। এরিস্টোফার্মা, অপসোনিন, রেডিয়েন্ট, স্কয়ার, এসকেএফ, ম্যাক্স কোম্পানি দেয় গড়ে ৫০০০ টাকা। এছাড়াও তার বিশেষ চাহিদা মিটাতে হয় হঠাৎ হঠাৎ। বাড়িতে ফ্যান নষ্ট হয়ে গেছে? কোন সমস্যা নাই। কোন না কোন এক কোম্পানি কিনে দেয়। মোবাইল নষ্ট হয়ে গেছে? তাও দেয়। হেলথকেয়ার থেকে আমি নিজে একবার ১৫০০০ টাকা দিয়েছিলাম মোবাইলের জন্য।
এত দ্রুত অবাক হবেন না প্লিজ। হাটহাজারি থেকে শুরু করে ফটিকছড়ি পর্যন্ত যত হাসপাতাল আছে তারা সবাইতো আসেই, সাথে চট্টগ্রাম শহরের শেভরণ পর্যন্ত তার কাছে মার্কেটিং করতে আসে। প্যাথলজিক্যাল টেস্টের জন্য সবাই এসে অনুরোধ করেন। রোগী পাঠালেই মাস শেষে কমিশন চলে আসে খামে ভরে।
এই অ-শিক্ষিত মহিলা ডাক্তারি করে মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভদের সাথে কীরকম আচরণ করে তা একটু বলি এবার। একদিন কল দিয়ে আমাকে চেম্বারে ডাকল। গেলাম। হাতে ১ লাখ টাকার চেক একটা ধরিয়ে দিয়ে বলল রাউজান থেকে টাকা উঠিয়ে তাকে এনে দিতে। দিলাম। আরেকদিন আবার কল দিল। বাজারে যেতে বলল। গেলাম। মাছ ও তরকারির ব্যাগ একটা ধরিয়ে দিয়ে তার ভাগনির বাসায় দিয়ে আসার জন্য বলল। অনেক কিছু করা গেলেও অনেক কিছু আবার করা যায় না। বাধ্য হয়ে দিয়ে আসছিলাম।
সুপর্ণা নিজের চিকিৎসার জন্য গিয়েছিল ভারতে। সেখানে তাকে এন্টিহিস্টামিন লিখেছিল অলপাটাডিন। বাংলাদেশের বাজারে তখনও অলপাটাডিন আসেনি। অবশ্যই চোখের ড্রপ ছিল। হঠাৎ তার অসুখ বেড়ে যাওয়ায় ইন্ডিয়ান প্রেসক্রিপশনের ঔষধগুলি খেতে গিয়ে অলপাটাডিন ট্যাবলেটটা কী তা বুঝতে না পেরে আমাকে কল দিয়ে বাসায় যেতে বলল। অলপাটাডিন যে এন্টিহিস্টামিন তা সে জানেই না। অথচ গুগল করলেও সব জানা যায়।
একটা প্রোগ্রামে বক্তব্য দিতে হবে। নব্বইয়ের দশকে এসএসসি পাশ করেছিল। ব্যাচমেটরা শহরে মিলনমেলার আয়োজন করেন। সেখানে অংশগ্রহণ করে বক্তব্য দিতে হবে। আমাকে ডাক দিল। বক্তব্য লিখে দিতে। তার স্কুল, তার বন্ধু-বান্ধব। নব্বইয়ের দশকে আমি যখন শিশু তখনকার সময়ে এসএসসি পাশ করা সুপর্ণার স্মৃতি নিয়ে আমাকে বক্তব্য লিখে দিতে হবে। দিয়েছিলামও।
বঙ্গে কারা ডাক্তারি করে তার একটি চিত্র দেখালাম জাস্ট। আমি যদি কি_ম জং উ-ন হতাম তাহলে পারমাণবিক বো*_মা মেরে আগে ব-ঙ্গ-কে দুনিয়া থেকে বি-লুপ্ত করে দিতাম।
~ মামুন আল আজাদ!