02/11/2025
একজন নেতার পাশে কিছু মুহূর্ত: হৃদয়ে রয়ে যাওয়া এক সাক্ষাৎ
নিউ ইয়র্ক সিটির এক শীতল বিকেল। মানুষের কোলাহল পেরিয়ে আমি যাচ্ছিলাম এক অনুষ্ঠানে—
শুধু একজন নেতার বক্তব্য শোনার জন্য।
তিনি কী ভাবেন দেশের জন্য,
কী স্বপ্ন দেখেন জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে—সেটা জানার গভীর ইচ্ছেই আমাকে টেনে নিয়েছিল সেখানে।
যখন পৌঁছালাম, তখন হলরুমে একটিও খালি আসন নেই।
চারপাশে মুখ ভরা শ্রদ্ধা, চোখে উজ্জ্বল প্রত্যাশা—
মানুষ যেন অপেক্ষা করছে এমন একজনের জন্য,
যিনি শুধু রাজনীতিবিদ নন,
বরং একজন আশার আলো, একজন মানবিক নেতা।
আল্লাহর অশেষ কৃপায়, আমি কখনো ভাবিনি
আমি তাঁর একদম পাশে বসতে পারবো।
ডঃ শফিকুর রহমান—
যাঁর নামের সঙ্গে আছে বিনয়, জ্ঞান,
আর এক অদ্ভুত মমতার আভা।
প্রথমবার যখন তাঁর চোখে তাকালাম, মনে হলো—
এই মানুষটি আলাদা,
এই মানুষটির মধ্যে কোনো ভান নেই, কোনো দম্ভ নেই।
আমি চারপাশের সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই—
যাঁদের নামও জানি না,
তবুও তাঁরা আমাকে যে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা দিয়েছেন,
তা আমার হৃদয়ে চিরদিন রয়ে যাবে।
মানুষের ভালোবাসা কোনো প্রটোকল মানে না—
এটি আসে হৃদয় থেকে, ঠিক যেমন এসেছিল সেদিন।
রাজনীতির মাঠে আমরা প্রায়ই দেখি ক্ষমতার লড়াই, বিভাজন, বিদ্বেষ।
কিন্তু ডঃ শফিকুর রহমানের মধ্যে আমি দেখেছি
একজন আত্মিক, প্রজ্ঞাবান ও সত্যিকার মানবিক মানুষ।
তিনি রাজনীতি করেন ক্ষমতার জন্য নয়,
বরং মানুষের মর্যাদার জন্য।
একই পেশায় থাকায় কিছুটা সহমর্মিতা থাকতেই পারে,
কিন্তু তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধা শুধু পেশাগত নয়—
এটি ব্যক্তিগত, হৃদয় থেকে উৎসারিত।
তাঁর বক্তব্যে তিনি স্মরণ করিয়ে দিলেন
যাঁরা দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের যোদ্ধা—
যাঁরা নিঃস্বার্থভাবে দেশের জন্য লড়েছিলেন,
তাঁদের অনেকেই আজও সংগ্রামে আছেন।
তিনি বললেন, তাঁর দল সীমিত সম্পদ নিয়েও
তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে—
এটাই তো প্রকৃত মানবসেবা,
এটাই একজন নেতার আসল পরিচয়।
তিনি বলেছেন—ন্যায়বিচার সবার জন্য।
আইন কারো জন্য আলাদা নয়,
অন্যায় তিনি সহ্য করবেন না।
এই দৃঢ়তার মধ্যেই আমি দেখেছি একজন নৈতিক নেতাকে—
যিনি ক্ষমতার সিঁড়ি বেয়ে ওঠেননি,
মানুষের আস্থা জিতে নিয়েছেন ভালোবাসা দিয়ে।
নারী ও সমাজ নিয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি আমার হৃদয় গভীরভাবে স্পর্শ করেছে।
তিনি বলেছেন—হিজাব বা ধর্মচর্চা কোনো জোরের বিষয় নয়, এটি বিশ্বাসের ব্যাপার।
এই বাক্যটি প্রমাণ করে তাঁর চিন্তা কতটা আলোকিত, ভারসাম্যপূর্ণ ও মানবিক।
তিনি চান নারীরা যেন কর্মক্ষেত্রে আরও আত্মনিবেদিত হয়,
আর এর জন্য প্রয়োজন একটি সহানুভূতিশীল পরিবেশ।
দেশের প্রশাসন সম্পর্কেও তাঁর ভাবনা ছিল অসাধারণ স্পষ্ট—
তিনি বলেন, সৎ, যোগ্য ও দক্ষ মানুষই নেতৃত্বে আসুক, দলীয় আনুগত্য নয়, যোগ্যতাই হোক প্রধান মানদণ্ড।
তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের আহ্বান জানিয়েছেন—
তাঁদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও আত্মত্যাগ যেন দেশের কল্যাণে কাজে লাগে।
এই কথাগুলো আমার হৃদয়ে গভীর রেখা এঁকে গেছে।
সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত হয়েছি তাঁর ভোটের বার্তায়—
“প্রত্যেক নাগরিক যেন নিজের বিবেক অনুযায়ী ভোট দিতে পারেন—
এটাই গণতন্ত্রের প্রকৃত রূপ।”
একজন রাজনীতিক নয়, একজন চিন্তাশীল নেতা এই কথা বলতে পারেন।
লাঞ্চের সময় তাঁর আচরণ আমাকে নতুনভাবে মানুষকে দেখা শিখিয়েছে।
তিনি ছিলেন হাস্যোজ্জ্বল, বিনয়ী, এবং অত্যন্ত যত্নশীল।
তিনি বারবার জানতে চেয়েছেন—
প্রবাসীরা কীভাবে দেশের উন্নয়নে আরও ভূমিকা রাখতে পারে।
একজন চিকিৎসক হিসেবে তাঁর কাছ থেকে যে সম্মান আমি পেয়েছি,
তা আমার জন্য সত্যিকারের গর্বের বিষয়।
আমার স্ত্রীও তাঁর উষ্ণতা, হাস্যরস এবং বিনয়ী আচরণে মুগ্ধ হয়েছেন।
সেই মুহূর্তগুলো আজও আমাদের মনে গভীর দাগ কেটে আছে।
ডঃ শফিকুর রহমান কেবল একজন রাজনৈতিক নেতা নন—
তিনি একজন আদর্শ মানুষ,
যিনি আমাদের শেখান যে নেতৃত্ব মানে ক্ষমতা নয়—
বরং দায়িত্ব, নৈতিকতা এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসা।
তিনি প্রমাণ করেছেন—
রাজনীতি যদি নীতির আলোয় পরিচালিত হয়,
তাহলে সেটিও হতে পারে মানবতার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম।
এই সাক্ষাৎ আমার জীবনে এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
আমি বিশ্বাস করি—
তাঁর মতো নেতারা থাকলে
বাংলাদেশ একদিন সত্যিই হবে ন্যায়পরায়ণ, মানবিক ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র।
আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত যে ব্যস্ততার কারণে স্যারকে বিদায় জানাতে বা যথেষ্ট সময় দিতে পারিনি। স্যার যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন, কিন্তু আমার অত্যন্ত ব্যস্ত সময়সূচির কারণে ব্যক্তিগতভাবে বিদায় জানাতে পারিনি—এ জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত।
স্যার, আপনি সুস্থ থাকুন—এটাই আমার প্রার্থনা। আমি সর্বদা আপনার দোয়া কামনা করি। আল্লাহ যেন আপনাকে সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু এবং অফুরন্ত বরকত দান করেন। আপনার নেতৃত্ব, প্রজ্ঞা এবং মানবিকতা আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।
আমার হৃদয়ের গভীর থেকে দোয়া করি—
আল্লাহ তাঁকে সুস্থ রাখুন, দৃঢ় রাখুন,
আর যেন তাঁর আলো বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে পথ দেখায়।
🌿 লেখক:
ডাঃ মনজুর মোরশেদ, MD, FACC
Cardiologist, New York