14/09/2025
©
হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি করবেন? এনিমিয়া সম্পর্কে জানুন সবকিছু!
🧑⚕️ হিমোগ্লোবিন কি?
হিমোগ্লোবিন হলো এক ধরনের প্রোটিন যা আমাদের রক্তের লাল কণিকায় (RBC) থাকে। এটি ফুসফুস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে শরীরের প্রতিটি কোষে পৌঁছে দেয়। পাশাপাশি শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও এটি বহন করে।
⭐ হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্তশূন্যতা?
✅পুরুষদের ক্ষেত্রে: হিমোগ্লোবিন ১৩.৫ g/dL এর কম হলে
✅নারীদের ক্ষেত্রে: ১২ g/dL এর কম হলে
✅শিশুদের ক্ষেত্রে: বয়স অনুযায়ী কম হলে রক্তশূন্যতা ধরা হয়।
🚨 রক্তশূন্যতা বা এনিমিয়া কেন হয়? বিস্তারিত কারণ:
১. আয়রনের ঘাটতি – খাদ্যে পর্যাপ্ত লৌহ না থাকলে।
২. ফলেট ও ভিটামিন B12 এর অভাব – বিশেষত নিরামিষভোজীদের মধ্যে।
৩. রক্তক্ষরণ – দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ঋতুস্রাব বা পেটের ভিতরে রক্তপাত।
৪. জেনেটিক রোগ – যেমন থ্যালাসেমিয়া, সিকল সেল।
৫. ক্রনিক অসুখ – কিডনি, ক্যান্সার বা হরমোনের সমস্যা।
৬. গর্ভাবস্থা – এই সময়ে রক্তের চাহিদা বেড়ে যায়।
৭. পরজীবী সংক্রমণ – কৃমি বা ম্যালেরিয়ার কারণে রক্তশূন্যতা হতে পারে।
🚨 রক্তশূন্যতার (Anemia) প্রকৃত কারণ নির্ণয় করতে রোগীর উপসর্গ অনুযায়ী নিচের মোট ৮–১২টি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা করা যেতে পারে। এতে বোঝা যায় এনিমিয়া কোন ধরনের এবং কেন হচ্ছে।
১. Complete Blood Count (CBC)
•হিমোগ্লোবিন (Hb)
•হেমাটোক্রিট (Hct)
•RBC কাউন্ট
•MCV, MCH, MCHC (রক্ত কণিকার আকার ও গঠন বিশ্লেষণ)
→ এনিমিয়ার ধরন (মাইক্রোসাইটিক/ম্যাক্রোসাইটিক) বুঝতে সাহায্য করে।
২. Peripheral Blood Smear (PBS)
মাইক্রোস্কোপে রক্তের কোষ পরীক্ষা
→ থ্যালাসেমিয়া, সিকল সেল, হেমোলাইটিক এনিমিয়া শনাক্ত করতে সহায়ক।
৩. Serum Ferritin
শরীরে আয়রনের মজুত আছে কিনা বোঝার জন্য।
→ আয়রন-ঘাটতি এনিমিয়া নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
৪. Serum Iron, TIBC (Total Iron Binding Capacity), Transferrin Saturation
আয়রনের শোষণ ও পরিবহনের সক্ষমতা নির্ণয় করে।
→ আয়রনের ঘাটতি নাকি অতিরিক্ত আয়রন—তা বোঝা যায়।
৫. Vitamin B12 এবং Folate লেভেল
মেগালোব্লাস্টিক এনিমিয়া নির্ণয়ের জন্য অপরিহার্য।
→ নিরামিষভোজী বা বৃদ্ধদের মধ্যে ঘাটতির প্রবণতা বেশি।
৬. Reticulocyte Count
নতুন রক্তকণিকার উৎপাদনের হার জানাতে সাহায্য করে।
→ হাড়ের অস্থিমজ্জা কাজ করছে কিনা বোঝা যায়।
৭. Liver Function Test (LFT)
জন্ডিস বা হেমোলাইটিক এনিমিয়ার কারণে এনিমিয়া হচ্ছে কিনা বোঝা যায়।
৮. Kidney Function Test (KFT / Creatinine, Urea)
কিডনি কাজ না করলে ইরিথ্রোপয়েটিন হরমোন কমে গিয়ে এনিমিয়া হতে পারে।
৯. Hemoglobin Electrophoresis
থ্যালাসেমিয়া বা সিকল সেল এনিমিয়া শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়।
১০. Coombs Test (Direct & Indirect)
অটোইমিউন হেমোলাইটিক এনিমিয়া নির্ণয়ে ব্যবহৃত।
১১. Bone Marrow Aspiration (প্রয়োজনে)
অ্যাপ্লাস্টিক এনিমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সার সন্দেহ হলে হাড়ের অস্থিমজ্জা পরীক্ষা।
১২. Stool Occult Blood Test / Endoscopy / Colonoscopy
গোপনে রক্তক্ষরণ (পেট বা অন্ত্র থেকে) হচ্ছে কিনা বোঝার জন্য।
💊 শীর্ষ ১০ টি খাবার যা রক্তশূন্যতা কমায়:
১. পালং শাক
২. কলা
৩. ডিম
৪. লাল মাংস (লিভার সহ)
৫. আপেল
৬. বীটরুট
৭. কিশমিশ
৮. ডাল ও ছোলা
৯. গ্রিন পেঁয়াজ
১০. আয়রন-ফর্টিফায়েড সিরিয়াল
✅ রক্তশূন্যতা কিভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব?
⭐সুষম খাদ্য গ্রহণ
⭐আয়রন ও ভিটামিন C যুক্ত খাবার একসাথে খাওয়া (শোষণ বাড়ায়)
⭐নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
⭐কৃমির ঔষধ সঠিক সময়ে খাওয়া
⭐গর্ভবতী নারীদের আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট খাওয়া
⭐ পিরিয়ড কালীন অতিরিক্ত রক্ত প্রবাহ অথবা পাইলস অথবা পেটে আলসার থাকলে তার দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া।
🧑⚕️ কোন কোন ক্ষেত্রে বারবার রক্ত দিতে হয়?
⭐থ্যালাসেমিয়া রোগীদের
⭐ক্যান্সার বা কিডনি রোগীদের
⭐বড় অপারেশনের পরে
⭐দুর্ঘটনায় গুরুতর রক্তক্ষরণ হলে
🚨 থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য বিশেষ বার্তা:
আপনারা নিয়মিত রক্ত গ্রহণ করেন। তাই প্রতিবার রক্ত নেয়ার আগে হিমোগ্লোবিন, আয়রন স্তর এবং লিভার/হার্টের কার্যকারিতা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। আয়রনের মাত্রা বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে চিলেশন থেরাপি নিতে হবে।
🧑⚕️ রক্তশূন্যতা কয় ধরনের?
১. আয়রন ঘাটতিজনিত
২. ভিটামিন B12 বা ফলেট ঘাটতিজনিত
৩. অ্যাপ্লাস্টিক এনিমিয়া
৪. হেমোলাইটিক এনিমিয়া
৫. সিকল সেল ও থ্যালাসেমিয়া
✅ কি কি সাপ্লিমেন্ট খেতে হয় এবং কত দিন খেতে হয়?
⭐আয়রন ট্যাবলেট: সাধারণত দিনে ১–২ বার, ৩–৬ মাস।
⭐ফলিক অ্যাসিড: গর্ভবতী নারীদের প্রতিদিন।
⭐ভিটামিন B12: ইনজেকশন বা মুখে খাওয়ার বড়ি, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
⭐ক্যালসিয়াম ও জিঙ্ক: কিছু ক্ষেত্রে পরিপূরক হিসেবে দেওয়া হয়।
উপসংহার:
রক্তশূন্যতা একটা উপসর্গ, রোগ নয়। তাই এর পেছনের কারণ নির্ভর করে রোগীর বয়স, খাদ্যাভ্যাস, ও অন্যান্য উপসর্গের ওপর। উপযুক্ত পরীক্ষা করে চিকিৎসক সঠিক কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা পরিকল্পনা করেন। আপনার হিমোগ্লোবিন কম কিনা জানার জন্য রক্ত পরীক্ষা করুন। রক্তশূন্যতা গোপন শত্রু—তা অবহেলা করলে বিপদ ডেকে আনতে পারে। সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন!
©