17/09/2025
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এই গবেষণায় দেখা গেছে, ১৮৩৫ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে নদী, উপনদী, পাহাড়ি উপত্যকা ইত্যাদির পানি আটকাতে প্রায় ৭০০০ টি বড় বাঁধ তৈরি হয়েছে। এসব বাঁধে জমে থাকা জলের ওজন এতটাই বেশি যে, তা পৃথিবীর ভারসাম্যে প্রভাব ফেলেছে। যার ফলে ইতিহাসে দুই দফায় উত্তর মেরু সরে গেছে।
প্রথম দিকের (১৮৩৫-১৯৫৪) বাঁধগুলো উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে তৈরি হয়েছিল, যার ফলে উত্তর মেরু ৮ ইঞ্চি পূর্ব দিকে সরে যায়। পরে, এশিয়া ও আফ্রিকায় বাঁধ নির্মাণ শুরু হলে মেরু আরও ২২ ইঞ্চি পশ্চিম দিকে সরে যায়।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁধ চীনের থ্রি গর্জেস বাঁধ। ২০০৫ সালে নাসার বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন ফং চাও দেখিয়েছিলেন, এই বাঁধে জল ভর্তি থাকলে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি ০.০৬ মাইক্রোসেকেন্ড কমে যায়!
বাঁধগুলোতে আটকে রাখা জলের কারণে বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠ ২৩ মিলিমিটার (প্রায় ০.৯ ইঞ্চি) পর্যন্ত কমে গেছে। গবেষকরা বলছেন, ২০শ শতকে সমুদ্রপৃষ্ঠ ১২ থেকে ১৭ সেন্টিমিটার বেড়েছে, তার মধ্যে প্রায় এক-চতুর্থাংশ জল বর্তমানে বাঁধে আটকে আছে । অর্থাৎ যদি বাঁধ না থাকতো তাহলে সমুদ্রের জলের উচ্চতা বেড়ে যেতো।
এখানেই শেষ নয়, বরফ গলা এবং ভূগর্ভস্থ পানি তোলাও মেরুর অবস্থান বদলে দেয়। যেমন, ১৯৯৩ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে অতিরিক্তভাবে ভূগর্ভস্থ জল তোলার কারণে প্রতিবছর মেরু প্রায় ৪ সেন্টিমিটার করে সরে গেছে। এমনকি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বরফ গলার কারণে এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ মেরু ৯০ ফুট পর্যন্ত সরে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কিন্তু এই ঘটনা কীভাবে সম্ভব? বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করেন, পৃথিবীর বাইরের স্তর (crust) একটা শক্ত খোলসের মতো। যা বসে আছে ভেতরের নরম, গলে থাকা আবরণ (mantle) এর ওপর। যখন পৃথিবীর কোথাও অতিরিক্ত ওজন যুক্ত হয় তখন ভারসাম্য হারিয়ে বাইরের স্তর এক দিক থেকে আরেক দিকে একটু সরে যায়। এই সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পৃথিবীর ঘূর্ণনের অক্ষ এবং মেরুর অবস্থানও বদলে যায়। বিজ্ঞানীরা এই প্রক্রিয়াকে বলেন “ট্রু পোলার ওয়ান্ডার”।
অন্যদিকে, বাঁধে পানি আটকে রাখাকে ভালো দিকও বলা যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠ বাড়ছে, আর তার সঙ্গে বাড়ছে ঝড়ের সময় ভয়ংকর জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা। কিন্তু বাঁধগুলো যেহেতু বিপুল পরিমাণ পানি আটকে রাখছে, সেজন্য কিছুটা হলেও সেই পানি সমুদ্রে না গিয়ে জলোচ্ছ্বাসের মাত্রা কমিয়ে দিচ্ছে।
তবে চৌম্বক মেরু নড়ার পাশাপাশি আরও অনেক কিছুই বদলে যাচ্ছে। বায়ুমণ্ডলের স্তর কমছে, সমুদ্রের স্রোত বদলে যাচ্ছে, এমনকি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতও বাড়ছে। এ কারণে বিজ্ঞানীরা পরামর্শ দেন, ভবিষ্যতের সমুদ্রপৃষ্ঠের হিসাব করতে গেলে বাঁধগুলোতে জমে থাকা জল ও তাদের অবস্থান অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে।
তথ্যসূত্র: পপুলার মেকানিক্স, লাইভ সায়েন্স।