07/10/2025
স্তন ক্যান্সার নারীদের মধ্যে সবচেয়ে কমন ক্যান্সারগুলোর একটি। কিন্তু সুখবর হলো — প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে এটি সম্পূর্ণভাবে নিরাময়যোগ্য এবং এই প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করার একটি কার্যকর উপায় হলো — ম্যামোগ্রাফি (Mammography)।
*** ম্যামোগ্রাফি কী?
ম্যামোগ্রাফি হলো স্তনের একটি বিশেষ এক্স-রে পরীক্ষা যা খুব সূক্ষ্ম পরিবর্তন বা অস্বাভাবিকতা ধরতে পারে — এমনকি যখন কোনো লক্ষণও বোঝা যায় না। এটি স্তনের অভ্যন্তরীণ টিস্যুর উচ্চ-রেজোলিউশনের ছবি দেয়, যার মাধ্যমে চিকিৎসক ছোট ছোট ক্যালসিফিকেশন বা অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি সনাক্ত করতে পারেন।
*** কেন ম্যামোগ্রাফি জরুরি?
১. স্তন ক্যান্সার যখন খুব ছোট অবস্থায় থাকে, তখন চিকিৎসা সহজ ও সফলতার হার প্রায় ৯৫% পর্যন্ত।
২. টিউমার ছোট অবস্থায় ধরা পড়লে স্তন সংরক্ষণ করে চিকিৎসা সম্ভব হয় (Breast Conserving Surgery)
৩. গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ম্যামোগ্রাফি করানো নারীদের স্তন ক্যান্সারজনিত মৃত্যুহার ৩০–৪০% পর্যন্ত কম।
৪. দীর্ঘ চিকিৎসা বা কেমোথেরাপি ছাড়াই প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা শেষ করা সম্ভব হয়।
৪০ বছর বা তার বেশি বয়সী নারীদের প্রতি ১–২ বছর অন্তর ম্যামোগ্রাফি করা উচিত।
*** ম্যামোগ্রাফি কিভাবে করা হয়?
অনেকে ভাবেন এই পরীক্ষা খুব জটিল বা ব্যথাদায়ক — আসলে তা নয়।পুরো প্রক্রিয়াটি নিরাপদ, দ্রুত, এবং সাধারণত ১৫–২০ মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়।
প্রস্তুতি ধাপ:
রোগীকে একটি বিশেষ গাউন পরানো হয়।
গলার চেইন, ব্রা খুলে ফেলতে বলা হয়, কারণ এগুলো ছবিতে দাগ (artefact)ফেলতে পারে।
ছবি তোলার ধাপ (Imaging):
রোগীকে একটি বিশেষ মেশিনের সামনে দাঁড়াতে বা বসতে বলা হয়। মেশিনের দুটি সমতল প্লেটের মধ্যে স্তনটি কয়েক সেকেন্ডের জন্য হালকা চাপে ধরা হয়, যাতে ভেতরের টিস্যুগুলো পরিষ্কারভাবে দেখা যায়। সাধারণত প্রতি স্তনের দুই দিক থেকে (উপরে–নিচে ও পাশ থেকে) ছবি তোলা হয়। কিছু সময়ের জন্য অল্প চাপ লাগলেও এটি সহনীয় এবং খুব দ্রুত শেষ হয়।
বিশ্লেষণ ধাপ (Interpretation):
তোলা ছবিগুলো একজন রেডিওলজিস্ট বা ব্রেস্ট ইমেজিং বিশেষজ্ঞ বিস্তারিতভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। প্রয়োজনে তুলনা করার জন্য আগের ম্যামোগ্রাফি ছবিও দেখা হয়। রিপোর্টে স্তনের গঠন, ঘনত্ব, কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কিনা—তা উল্লেখ করা হয়।
রিপোর্ট ও পরবর্তী ধাপ:
সাধারণত ২৪–৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট পাওয়া যায়।
রিপোর্টে কোনো অস্বাভাবিকতা থাকলে ডাক্তার আল্ট্রাসাউন্ড বা বায়োপসি করার পরামর্শ দিতে পারেন।
স্তন ক্যান্সার মানেই শেষ নয়।
সচেতনতা, নিয়মিত পরীক্ষা, এবং প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা—এই তিনটি বিষয় জীবন বাঁচাতে পারে।