29/05/2025
ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD) বিস্তারিত
কিডনির কাজ কি?
কিডনি দুটি বীণাকৃতির অঙ্গ, যা শরীরের পেছনে মেরুদণ্ডের দুই পাশে অবস্থিত। এর প্রধান কাজ হলো:
• রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ ও অতিরিক্ত পানি ফিল্টার করা
• রক্তের অ্যাসিড-বেজ ভারসাম্য বজায় রাখা
• রক্তে ইলেক্ট্রোলাইট ও মিনারেলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা
• রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করা হরমোন তৈরি করা
• রক্তে লোহিত কণিকা তৈরির জন্য ইরিথ্রোপোয়েটিন হরমোন উৎপাদন করা
ক্রনিক কিডনি ডিজিজ কীভাবে হয়?
কিডনির ক্ষতি ক্রমাগত বাড়তে থাকে, ফলে তার কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যায়। সাধারণত যখন কিডনির কার্যক্ষমতা ৩০% এর নিচে নেমে আসে, তখন রোগীর লক্ষণগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
CKD এর ধাপসমূহ (Stages):
১. স্টেজ ১: কিডনির কার্যক্ষমতা ৯০% বা তার বেশি, কিন্তু ক্ষতি বা সমস্যা আছে।
২. স্টেজ ২: কার্যক্ষমতা ৬০-৮৯%, হালকা সমস্যা।
৩. স্টেজ ৩: কার্যক্ষমতা ৩০-৫৯%, মাঝারি সমস্যা।
৪. স্টেজ ৪: কার্যক্ষমতা ১৫-২৯%, গুরুতর সমস্যা।
৫. স্টেজ ৫: কার্যক্ষমতা ১৫% বা তার কম, যা কিডনি ফেলিওর বা শেষ ধাপ।
কারণসমূহ (বিস্তারিত):
• ডায়াবেটিস: দীর্ঘমেয়াদী উচ্চ রক্তে গ্লুকোজ কিডনির ফিল্টারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত করে।
• উচ্চ রক্তচাপ: কিডনির ছোট রক্তনালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফিল্টারিং ক্ষমতা কমে যায়।
• মূত্রনালীয়ের সমস্যাঃ সংক্রমণ বা পাথর কিডনির ক্ষতি করতে পারে।
• জেনেটিক কারণ: পরিবারে কিডনি রোগ থাকলে ঝুঁকি বেশি থাকে।
• অন্যান্য রোগ: যেমন লুপাস, গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস ইত্যাদি।
লক্ষণগুলো:
শুরুতে লক্ষণগুলো অস্পষ্ট বা অনুপস্থিত থাকে। রোগ বাড়ার সাথে সাথে:
• শরীরের ফোলা, বিশেষ করে পা ও চোখের চারপাশ
• ক্লান্তি ও দুর্বলতা
• ঘুমে বিঘ্ন
• মূত্রের পরিমাণ কমে যাওয়া বা পরিবর্তন
• মুখে ধাতব স্বাদ
• পেটে বা পিঠে ব্যথা
• উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি
• ত্বকে চুলকানি
• অস্বাভাবিক রক্তাক্ততা বা যন্ত্রণার অনুভূতি
নির্ণয়:
• রক্ত পরীক্ষা: ক্রিয়েটিনিন, ব্লাড ইউরিয়া নাইট্রোজেন (BUN)
• ইউরিন পরীক্ষা: প্রোটিন বা রক্তের উপস্থিতি
• ইমেজিং: আলট্রাসাউন্ড ইত্যাদি
• গ্লোমেরুলার ফিল্টারেশন রেট (GFR) নির্ণয় করা হয় কিডনির কার্যক্ষমতা বুঝতে।
চিকিৎসা:
• মূল কারণ নিয়ন্ত্রণ: ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি।
• জীবনযাত্রার পরিবর্তন: স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার।
• ওষুধ: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও প্রোটিন ইউরিয়ার জন্য ওষুধ।
• ফলো-আপ: নিয়মিত ডাক্তারি পরামর্শ ও পরীক্ষা।
• শেষ ধাপে: ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন প্রয়োজন হতে পারে।
প্রতিরোধ:
• নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো, বিশেষ করে যারা ঝুঁকিতে আছেন (ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ রোগী)
• স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা (কম লবণ, কম প্রোটিন, পর্যাপ্ত পানি)
• ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়ানো
• ওষুধ সঠিকভাবে খাওয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা...