25/01/2023
খাওয়ার স্যালাইনঃ সরবত নয়, ঔষধ।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
প্রাসঙ্গিক ঘটনাঃ
************
তখন আমি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ এর সহকারী রেজিস্ট্রার। বিকেলে ওয়ার্ড এ ভর্তিকৃত রোগীগুলো দেখছিলাম। সেই মুহূর্তে মহাখালী কলেরা হাসপাতাল থেকে ২ টা ডায়রিয়ার রোগী রেফার হয়ে আসে। দুজনেই অজ্ঞান, খিচুনি হচ্ছে! সাথে থাকা serum electrolyte এর রিপোর্ট থেকে জানলাম, একজনের সোডিয়াম ১৬৫, আরেকজনের ১৯৩! (সোডিয়াম শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ লবণ যার স্বাভাবিক মাত্রা ১৩৫-১৪৫, কম বা বেশি জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ)। প্রথম রোগী ডায়ালিসিস এর সাহায্যে বেঁচে গেলেও দ্বিতীয় রোগী মারা গেল।
কেন এমন হলো??
***************
ডায়ারিয়ার রোগীর তো সোডিয়াম কমে যাবার কথা! তাহলে বেড়ে গেলো কেন??
আসলে, দুজন ই খাবার স্যালাইন এর গুঁড়ার সাথে সঠিক পরিমাণে পানি মিশান নাই! একটু গুঁড়ার সাথে একটু পানি মিশিয়ে (পরিমাপ না করে) স্যালাইন বানিয়েছেন। আর এখানে গুড়োর তুলনায় পানির পরিমাণ কম ছিলো।
এমনটা কেন করেন?
****************
খবর স্যালাইন যে একটা ঔষধ, এটা অনেকেই মনে করেন না, মনে করেন সরবত! যার ফলে, এখানে যে স্যালাইনের গুঁড়ার সাথে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি মেশাতে হয় তা ই অনেকে জানেন না।
আর, বাচ্চাদের তো পুরোটা স্যালাইন এক বারে কাজে লাগে না। তাছাড়া, শীতকালে স্যালাইন বানিয়ে রেখে দিলে তা ঠান্ডা হয়ে থাকবে। তাই, অনেকেই একটু স্যালাইন এর গুঁড়ার সাথে পরিমাপ না করেই একটু পানি দিয়ে অল্প পরিমাণ স্যালাইন বানান। আবার, অনেকেই বেশি পাউডার দিয়ে স্যালাইন বানিয়ে খাওয়ালে ডায়রিয়া তাড়াতাড়ি ভালো হবে বলেও মনে করেন।
সঠিক নিয়ম?
***********
প্যাকেট এর পুরোটা গুড়া/পাউডার একবারে ঠিক ৫০০মিলি/আধা লিটার পানির সাথে ভালো করে মিশাতে হবে। সেখান থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী স্যালাইন নিয়ে বাচ্চাকে খাওয়াতে হবে।
একবার বানানো স্যালাইন ১২ ঘণ্টা সংরক্ষণ করা যাবে। এর মধ্যে ব্যাবহৃত না হলে বাড়তি স্যালাইন ফেলে দিতে হবে।
কেমন পানি দিয়ে স্যালাইন বানাতে হবে?
*********************************
স্বাভাবিক তাপমাত্রার নিরাপদ খাবার পানি।
কতটুকু স্যালাইন একবারে খাওয়াতে হবে?
**********************************
যদি পানিশূন্যতা (dehydration ) না থাকে, তবে প্রতিবার পাতলা পায়খানার পরে —
—> ২ বছরের ছোট বাচ্চার ক্ষেত্রে, ৫০-১০০মিলি (১ চা চামচ এ ধরে ৫ মিলি।সুতরাং ১০-২০ চা চামচ)।
—>২-৫ বছরের বাচ্চার ক্ষেত্রে, ১০০-২০০ মিলি (২০-৪০ চামচ)।
আরও একটি প্রচলিত ভুলঃ
**********************
অনেকেই মনে করেন, স্যালাইন এ থাকা গ্লুকোজ শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। এজন্য অনেকেই শক্তি আরও বেশি পাওয়ার জন্য extra চিনি যোগ করেন।
প্রকৃত পক্ষ্যে স্যালাইন এ থাকা গ্লুকোজ রোগীর শরীরে কোন শক্তি দেয় না। বরং, এই গ্লুকোজ কোষের ভিতরে লবণ ঢুকাতে সহায়তা করে। আর, extra চিনি যোগ করলে তা ডায়রিয়া/ পাতলা পায়খানা (osmotic diarrhoea) আরও বাড়িয়ে দিতে পরে।
মোটকথাঃ
********
—>স্যালাইন বানানোর সময় প্যাকেট এ বিদ্যমান সবটুকু গুড়া/পাউডার একবারে ঠিক ৫০০মিলি/ আধা লিটার নিরাপদ খাবার পানির সাথে মিশাতে হবে।
—> স্যালাইন বানানোর সময় কোন অবস্থাতেই প্যাকেট এ বিদ্যমান পাউডার এর বাইরে অন্য কিছু (যেমনঃ চিনি , গুড়, লবণ, লেবু) মেশানো যাবে না।
—> বানানো স্যালাইন সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবহৃত না হলে তা ফেলে দিতে হবে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ডাঃ খালিদ আহমেদ সাইফুল্লাহ
সহকারি অধ্যাপক (শিশু)
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ, ফরিদপুর।