12/06/2023
অপুষ্টিই ঘটাতে পারে শিশু-মৃত্যু! সচেতন হোন আজই!
এক বছর হয়েছে কিন্তু এখনও বাবু সোজা হয়ে দাঁড়াতেই পারে না, এক-দুটো শব্দও ঠিক করে বলতে পারে না। আধো-আধো যে এক-দুটো অক্ষর আওড়াতে পারে, মা ছাড়া তার মর্মোদ্ধার করার উপায় নেই কারও।
কিন্তু পাশের বাড়ির তো ওই ওরই বয়সি! টলমল পায়ে হেঁটেচলে বেড়াচ্ছে সে। কথাও বলে যাচ্ছে!
এমন কেন হলো? কেন হলো, এই প্রশ্নটাই আপনাকে নিয়ে যাবে সমস্যার গভীরে।কারণ একটাই, অপুষ্টির শিকার হচ্ছে আপনার বাবু।
শিশুর অপুষ্টি: পরিস্থিতি ও করণীয়---
আমাদের আশপাশেই অসংখ্য আছে অপুষ্টির শিকার হচ্ছে যারা। সুষম খাবারের ঘাটতি, ঘন ঘন অসুস্থতা ও প্রয়োজনীয় দেখভালের অভাবে যাদের বাড়-বৃদ্ধি থমকে যাচ্ছে একবারে কচি বয়সেই।
আর আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে লাফিয়ে বাড়ছে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা! না, আপনাকে ঘাবড়ে দেওয়ার কোনও উদ্দেশ্য আমাদের নেই!
আজকের পোস্ট একটাই কারণে, যাতে খানিক সতর্ক থাকেন আপনি। আর সুস্থ থাকে আপনার বাচ্চা।
আসুন, সবার আগে দেখে নিই অপুষ্টির কারণ আসলে কী;
অপুষ্টি শুনলেই হয়তো আপনার মনে হতে পারে এ তো গরিব-গুর্বদের ব্যাপার। আমার ঘরে খাবারের অভাব কোথায় যে থাবা বসাবে অপুষ্টি!
ভুলটা তো এখানেই করি আমরা। অপুষ্টি যে শুধুমাত্র পরিমাণমতো খাবারের অভাবেই হানা দেয় তা নয়, আপনার শিশুর শরীরে সুষম পুষ্টির অভাব থাকলেও অপুষ্টির শিকার হতে পারে সে। দিনভর ওকে দুধ, ডিম, মাছ-মাংস খাইয়ে যাচ্ছেন আর ভাবছেন খুব পুষ্টি পাচ্ছে একরত্তি, বিষয়টা কিন্তু এক্কেবারে তেমন নয়!
সুস্থ থাকতে প্রয়োজন সুষম খাবার। যা হবে আমিষ, শর্করা, স্নেহজাতীয় উপাদান আর ভিটামিনের সম-বণ্টন।
এবার তবে দেখে নিন, অপুষ্টির কারণে শিশুর শরীরে কী কী উপাদানের ঘাটতি হতে পারে। আর ঘরোয়া উপায়ে কীভাবেই বা সেগুলোর প্রতিকার করতে পারি আমরা!
শিশুর শরীরে পুষ্টির ঘাটতি এবং প্রতিকারের উপায় ---
১. আয়রনের কমতি ও সমাধানঃ
শরীরে আয়রনের মাত্রার হেরফের হলে রক্তাল্পতার মতো রোগের প্রকোপে পড়তে পারে আপনার শিশু। আয়রনের কমতিই ওর শরীরে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা কমিয়ে দেয়। যার জেরে শরীরজুড়ে অক্সিজেন সঞ্চালনের কাজটাই আর ঠিকঠাক করে হয়ে ওঠে না। শিশু হয়ে পড়ে দুর্বল, ক্লান্ত। রোগ-ভোগ সহজেই হানা দেয় শরীরে, থমকে যায় মস্তিষ্কের বিকাশও!
সলিড খাবার শুরুর পর থেকেই তাই যথেষ্ট পরিমাণ আয়রন-সমৃদ্ধ খাবার দিন ওকে। আমিষের ভিতর মাংস, মাছ থেকেই চাহিদামাফিক আয়রন পেতে পারে শিশুর শরীর। তবে ওর খাবার তালিকায় রাখুন বিনস, ব্রোকলি, বাদাম এসব।
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া আয়রন সাপ্লিমেন্ট খাওয়াতে যাবেন না যেন। হিতে বিপরীত হবে এতে।
পাশাপাশি ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবারও ( ক্যাপসিকাম) দিতে থাকুন ওকে। ভিটামিন-সিই শিশুর শরীরে আয়রন গ্রহণের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেবে!
২. আয়োডিনের কমতি ও সমাধানঃ
থাইরয়েড গ্রন্থির স্বাভাবিক কাজকর্মই কমে যায় যদি আয়োডিনের ঘাটতি হয় শরীরে। জানেন কি, এই থাইরয়েড হরমোনই শরীরকে সচল রাখতে সক্রিয় ভূমিকা নেয় নানা ভাবে। এই যেমন ধরুন, মস্তিষ্কের বিকাশ কিংবা হাড়ের গঠন! আয়োডিনের ঘাটতিই এক কথায় অচল করে দেয় গোটা শরীরটাকে।
বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়তে পারে মারাত্মক! বাড়-বৃদ্ধি তো থমকে যাবেই, হানা দিতে পারে মানসিক অসুস্থতাও।মাছ, ডিম, দই রাখুন খাদ্য তালিকায়।
৩. ভিটামিন-ডি’র ঘাটতি ও সমাধানঃ
রিকেট রোগের নাম শুনেছেন নিশ্চয়? এর এক এবং অন্যতম কারণ শরীরে ভিটামিন-ডি’র ঘাটতি। এই ভিটামিন-ডি-ই শরীরে স্টেরয়েড হরমোনের মতো কাজ করে।
শিশুর শরীরে ভিটামিন-ডি’র ঘাটতিই ব্যাঘাত আনে সার্বিক বিকাশে। কচি বয়সেই ওর হাড় হয়ে পড়ে দুর্বল। আর তা থেকেই আশঙ্কা বাড়ে রিকেট রোগের!
শেষ নয় এখানেই। ভিটামিন-ডি’র ঘাটতিতেই এক ঝটকায় কমে যেতে পারে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা। জটিল অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে ছোট্ট প্রাণের! কিন্তু যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন, খুব কম খাবারেই যথেষ্ট জোগান থাকে ভিটামিন-ডি’র। কডলিভার অয়েল, চর্বিযুক্ত মাছ, ডিমের কুসুম- এসব খাবারে পেয়ে যাবেন তার সন্ধান। তা বাদে আরেকটা সহজ উপায়ও আছে। স্রেফ টাটকা রোদ থেকেও ভিটামিন-ডি শুষে নিতে পারে শিশুর শরীর!
৪. ভিটামিন-বি১২’র ঘাটতি ও সমাধানঃ
নতুন রক্ত তৈরি, পাশাপাশি মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রকে সচল রাখতে ভিটামিন-বি১২’এর কোনও বদলি নেই! স্বাভাবিক কাজকর্ম জারি রাখতে আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষই ভিটামিন-বি১২’র উপর নির্ভরশীল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, শরীর নিজে থেকে এর উৎপাদন করতে পারে না। সে কারণেই দরকার পড়ে প্রয়োজনীয় খাবার আর সাপ্লিমেন্টের।
আরও একটা বিষয় হলো, এই ভিটামিন-বি১২ মিলবে কেবল প্রাণীজ খাবার থেকেই। শুধুমাত্র সব্জি খেলে এর ঘাটতি হয় ! আর যার ভয়ানক প্রভাব পড়তে পারে শিশুর সার্বিক স্বাস্থ্যে।
ভিটামিন-বি১২’র ঘাটতিতেই কমে যাবে ওর রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা, আশঙ্কা বাড়বে রক্তাল্পতার। মাছ-মাংস, দুধ-ডিম তাই দিন শিশুকে।
৫. ক্যালসিয়ামের কমতি ও সমাধানঃ
রিকেট রোগের একটা কারণ আগেই বলেছি, দ্বিতীয়টা হল এই ক্যালসিয়ামের ঘাটতি! হাড়-দাঁত সুস্থ-সবল রাখতে এর ভূমিকা অপরিসীম। শিশুর বেড়ে ওঠার দিনগুলোয় এই ক্যালসিয়ামের ঘাটতিই ডেকে আনে নানা বিপদ।
শুধু দাঁত-হাড় কী বলছি, এর অভাবে ভয়ঙ্কর ক্ষতি হতে পারে হৃদযন্ত্র, পেশি ও স্নায়ুতন্ত্রেরও! হয়তো ঠিকঠাক কাজ করাই বন্ধ করে দিল তারা!
শিশুর খাবারে আজ থেকেই তাই মাছ রাখুন রোজ। এরই সঙ্গে দুধ, আর গাঢ় সবুজ শাক-সবজি!
৬. ভিটামিন-এ’র ঘাটতি ও সমাধানঃ
স্বাস্থ্যজ্জ্বল ত্বক, ঝকঝকে দাঁত আর সবল হাড়- এই তিনের জন্য আমাদের শরীরে ভিটামিন-এ’র ভূমিকা অস্বীকার করতে পারি না আমরা। আর তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো দৃষ্টিশক্তি! শরীরে ভিটামিন-এ’র ঘাটতিই সাময়িক এবং কখনও সখনও স্থায়ী অন্ধত্ব ডেকে আনতে পারে।
শিশুদের চোখের সমস্যার প্রধান ও মূল কারণই হলো এই ভিটামিন-এ’র কমতি! তা-ছাড়া প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমতে পারে শরীরে এর অভাব হলে। মিষ্টি আলু, গাজর, শাক-সবজিতে ভিটামিন-এ থাকে ভরপুর মাত্রায়। এগুলো তাই থাকুকই থাকুক আপনার শিশুর রোজের খাবারে।
৭. ডিএইচএ’র কমতি ও সমাধানঃ
শিশু বুদ্ধিমান, তুখোড়, চটপটে আর দারুণ স্মার্ট হবে, এমন স্বপ্ন কোন মা-বাবা দেখেন না! কিন্তু জানেন কি, ঠিক কোন কোন খাবার বাড়ন্ত বয়সেই আগামীর পথটা মসৃণ করে দেবে আপনার শিশুর জন্য?
একদমই ঠিক ধরেছেন, ডিএইচএ’র কথাই বলছি আমরা। শিশুর মস্তিষ্কের কাজকর্ম স্বাভাবিক-সচল রাখতে, ওর মনোযোগ-স্মৃতিশক্তি প্রখর করতে, সর্বোপরি মানসিক ভাবে ওকে সুস্থ রাখতে ডিএইচএ’র ভূমিকা অপরিসীম। গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ হয় সবচেয়ে দ্রুত। আর এই বিকাশের পুরোটাই নির্ভর করে খাবারের উপর!
বাড়ন্ত শিশুর খাবারের তালিকায় তাই অবশ্য রাখুন মাছ, ডিম, দই, পিনাট বাটার।
নিজে সুস্থ থাকুন, বাচ্চাকে সুস্থ রাখুন।
গোপালগঞ্জ সেন্ট্রাল হসপিটালে ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রাইভেট লিমিটেড ।
৮৭, ডিসি রোড ,গোপালগঞ্জ।
যোগাযোগ:০১৭০১১১৩১৩২