22/10/2025
এটা সত্যিই বেদনাদায়ক! যেকোনো বিবাহিত জীবনে সন্তান থাকলে বিচ্ছেদ বা ডিভোর্স শুধু স্বামী–স্ত্রীর নয়, পুরো পরিবারের জন্য আজীবন এক দুঃসহ স্মৃতি হয়ে থাকে। স্বামী বা স্ত্রী হয়তো নতুন জীবনসঙ্গী পেয়ে অতীত ভুলে যায়, কিন্তু সন্তানরা বেড়ে ওঠে অনাদরে, অবহেলায়, ভালোবাসা ও যত্নহীন পরিবেশে।
তাদের শৈশবের আনন্দ মলিন হয়ে যায় আর ভবিষ্যৎ হয় অনিশ্চিত। অনেক সময় ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তানরা ভালো পরিবেশ ও বিয়েশাদীতে গ্রহণযোগ্যতা থেকেও বঞ্চিত হয়।
দেশের উদীয়মান ইসলামি বক্তা আবু ত্ব হা আদনান ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন্নাহারের জীবনে ঘটে যাওয়া দাম্পত্য জটিলতা এই বাস্তবতাকেই নতুন করে সামনে এনেছে। তাদের সম্পর্কের শেষ প্রান্তে এসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সন্তানরা যাদের ভবিষ্যৎ এখন এক অনিশ্চিত পথে।
দাম্পত্য জীবনে কলহ না থাকাই বিরল। কিন্তু ইসলামি সেলিব্রিটি হওয়ায় তাদের বিচ্ছেদ ভক্তদের মধ্যে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সাবিকুন্নাহারের ভাষ্যমতে আদনান তাকে শারীরিকভাবে পৈশাচিক নির্যাতন করেছে যা নিঃসন্দেহে অন্যায়। অন্যদিকে, সাবিকুন্নাহারের অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ ও ঈর্ষাও তাদের সম্পর্কে তিক্ততা এনেছে। তিনি চাননি আদনান তার প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতি কোনো ভালোবাসা প্রদর্শন করুক যা বাস্তবে সম্ভব নয়। আবার আদনান তৃতীয় বিবাহ করার ইচ্ছা পোষণ করলে সেটিও কোনভাবে মেনে নিতে চাইনি সাবিকুন্নাহার।
শুরুতে সংসার ঠিকঠাক চললেও জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে সাথে সাবিকুন্নাহারের আচরণ আদনানের কাছে অসহনীয় হয়ে ওঠে। পুরুষ মানুষকে ভালোবাসা দিয়ে বেঁধে রাখা যায়, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ দিয়ে নয়। ভালোবাসা মানে স্বামীকে বোঝা, তার প্রতি সহানুভূতিশীল থাকা, তাকে সম্মান দেওয়া যাতে সে সন্তুষ্ট থাকে। দুঃখজনকভাবে, ভালোবাসার নামে স্বামীকে হাতের মুঠোয় রাখতে চাওয়ার প্রবণতা থেকেই অনেক সংসারে অশান্তি জন্ম নেয়।
সাবিকুন্নাহারের প্রথম স্বামী ছিলেন আওয়ামী পরিবারভুক্ত একজন মানুষ। মুলত প্রথম স্বামী তার পছন্দ ছিল না, মন থেকে মেনে নিতে পারে নি সে।সাবিকুন্নাহার নিজের কথায় বলেছেন মওলানা বাবা মারা যাবার পরে মায়ের ইচ্ছায় বিয়ে করেছিলেন, কিন্তু ক্রমে সেই সংসার বিষিয়ে উঠেছিল। শাশুড়ী ভালো না, ননদ ভালো না, পরিবারে পর্দা নেই নানা অজুহাতে সাবিকুন্নাহার বিচ্ছেদ ঘটায়।
তার স্বামী অভিযোগ করেছেন স্ত্রীর চাহিদা পূরণে বাড়িঘর ছেড়ে আলাদা বাসায় উঠেছিলেন, কিন্তু তবুও সংসার টেকেনি। দুটি সন্তান রয়ে গেছে বাবার কাছে, আর মা তাদের খোঁজও রাখেননি এটাও এক চিন্তার বিষয়।
এরপর নিজের পছন্দে আরেক জনকে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন, সেই সংসারও টিকে নি। তাহলে মায়ের পছন্দের প্রথম স্বামীর দোষটা আসলে কোথায় ছিল?
আদনানের প্রতি তার যত্ন ও ভালোবাসার গভীরতা তার নিজের কথাতেই প্রকাশ পায়। সব কিছুতেই তিনি আদনানের পাশে ছিলেন। আন্ডারওয়্যার কাপড় চোপড় নিয়ে ওয়াশরুমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন৷ আদনানের জন্য সাজতেন, সাজাতেন। যদি এই একই ভালোবাসা ও যত্ন প্রথম স্বামীর প্রতিও দেখাতে পারতেন, শরীয়তের দৃষ্টিতে স্বামীর অধিকার বুঝে চলতেন, তাহলে হয়তো সেই স্বামীই আজ একজন আদর্শ আল্লাহওয়ালা মানুষ হতে পারতেন।
দুনিয়ায় অসংখ্য দ্বীনি বোন আছেন যারা তাদের দ্বীনহীন স্বামীদের চরিত্র, ভালোবাসা ও মহব্বতের মাধ্যমে বদলে দিয়েছেন। তাদের সংসারগুলো আজ প্রশান্তির দৃষ্টান্ত।
যাহোক, আদনান-সাবিকুন্নাহারের জন্য আমার তেমন মায়া নেই, আমার মায়া সেই নিরীহ শিশুদের জন্য,
যারা বাবা-মায়ের কলহ, বিচ্ছেদ আর অহংকারের শিকার হয়ে বড় হচ্ছে। আল্লাহ যেন তাদের উত্তম অভিভাবক হয়ে যান, তাদের জীবনে প্রশান্তি ও দয়া বর্ষণ করেন।....