02/02/2023
অ্যালার্জি কি? জানতে হবে:::
অ্যালার্জি অনেক মানুষের কাছে এক অসহনীয় ব্যাধি। কারো ক্ষেত্রে অ্যালার্জি সামান্যতম অসুবিধা করে, আবার কারো ক্ষেত্রে অ্যালার্জি জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। সিজনাল অ্যালার্জি হচ্ছে এমন একটি অসুখ যেখানে প্রধানত নাকের ভিতরে অ্যালার্জি হয়। এর ফলে হাঁচি হওয়া, চোখ, গলা ও মুখের ভেতর চুলকানি, খুসখুসে কাশি, নাক ও চোখ লাল হয়ে যাওয়া, নাক ও চোখ দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত এটি বসন্তকাল এবং শীতে বেশী হয় তবে কারো কারো ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী বা স্থায়ীও হতে পারে। প্রত্যেক মানুষের শরীরে এক একটি প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেম থাকে, কোনো কারণে এ ইমিউন সিস্টেমে সমস্যা দেখা দিলে তখনই অ্যালার্জির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। শীতকাল আসলেই ধূলাবালির পরিমাণ বেড়ে যায়, মানুষ সহজেই অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হয়। তবে কিছু নিয়ম কানুন মেনে চললে অ্যালার্জির হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যাদের ঠান্ডার সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে শীতে অ্যালার্জির পরিমাণ আরো বেড়ে যায় এবং এক সময় শরীর অনেক অসুস্থ হয়ে যায়। আমাদের শরীর সবসময়ই ক্ষতিকর বস্তুকে (পরজীবী, ছত্রাক, ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া) প্রতিরোধের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের চেষ্টা করে। এ প্রচেষ্টাকে রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া বা ইমিউনিটি বলে। কখনও কখনও আমাদের শরীর সাধারণত ক্ষতিকর নয়। এমন অনেক ধরণের বস্তুকেও ক্ষতিকর ভেবে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। সাধারণত ক্ষতিকর নয়, এমন সব বস্তুর প্রতি শরীরের এ অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াকে অ্যালার্জি বলা হয়। অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী বহিরাগত বস্তুগুলোকে অ্যালার্জি উৎপাদক বা অ্যালার্জেন বলা হয়। অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী কিছু উপাদান যেমন ধূলা, ফুলের বা শস্যের রেণু, ঠান্ডা ইত্যাদি আমাদের নাকে ঢোকে তখন শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৎপর হয়ে উঠে এবং শরীরে হিস্টামিন নামক পদার্থ তৈরী হয়। এই হিস্টামিন অ্যালার্জি লক্ষণগুলির জন্য দায়ী।
অ্যালার্জির উপাদান:
ফুলের রেণু বা পরাগ
ঘরের ধূলা-ময়লা, প্রাণীর পশম
ওষুধসহ কিছু রাসায়নিক দ্রব্যাদি
কিছু কিছু খাদ্যদ্রব্য
পোকামাকড়ের কামড়
ঠান্ডা এবং শুষ্ক আবহাওয়া
বিভিন্ন ধরণের অ্যালার্জি:::
অ্যালার্জিজনিত সর্দি বা অ্যালার্জিক রাইনাইটিস
এই রোগের উপসর্গ হচ্ছে অনবরত হাঁচি, নাক চুলকানো, নাক দিয়ে পানি পড়া বা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, চোখ দিয়েও পানি পড়ে এবং চোখ লাল হয়ে যায়।
অ্যালার্জিক রাইনাইটিস দুই ধরণের
১ঃসিজনাল অ্যালার্জিক রাইনাইটিসঃ বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস হলে একে সিজনাল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস বলা হয়।
যেমনঃ ঘন ঘন হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া
নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া
চোখ দিয়ে পানি পড়া
চোখ ফুলে লাল হয়ে যাওয়া
২ঃপেরিনিয়াল অ্যালার্জিক রাইনাইটিসঃ সারা বছর ধরে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস হলে একে পেরিনিয়াল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস বলা হয়।
যেমনঃ খাবারে অ্যালার্জি
গলা, মুখ, জিহ্বা, ঠোঁট ফুলে যাওয়া
অ্যানাফাইলেক্সিস
অ্যাজমা বা হাঁপানি:
এর উপসর্গ হচ্ছে কাশি, ঘন ঘন শ্বাসের সঙ্গে বাঁশির মতো শব্দ হওয়া বা বুকে চাপ চাপ লাগা, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মাঝে মাঝেই ঠান্ডা লাগা ।
আর্টিকেরিয়া:
আর্টিকেরিয়ার ফলে ত্বক লাল হয়ে ফুলে যায় এবং ভীষণ চুলকায়। ত্বকের গভীর স্তরে হলে মুখ, হাত-পা ফুলে যেতে পারে। আর্টিকেরিয়ার ফলে সৃষ্ট ফোলা অংশগুলো মাত্র কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী থাকে এবং বারবার হতে দেখা যায়। যেকোন বয়সে আর্টিকেরিয়া হতে পারে। তবে স্বল্পস্থায়ী আর্টিকেরিয়া বাচ্চাদের মধ্যে এবং দীর্ঘস্থায়ী আর্টিকেরিয়া বড়দের মধ্যে দেখা যায়।
অ্যালার্জিক কন্ট্যাক্ট ডারমাটাইটিসঃ
এ রোগে চামড়ার কোথাও কোথাও শুকনো, খসখসে, ছোট ছোট দানার মত হয়। বহিরাগত উপাদান বা অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে ত্বকে প্রদাহ হয় বলে একে অ্যালার্জিক কন্ট্যাক্ট ডারমাটাইটিস বলা হয়।
লক্ষণ ও উপসর্গ:
*ত্বকে ছোট ছোট ফোসকা পড়ে এবং ফোসকাগুলো ভেঙে যায়
*চুয়ে চুয়ে পানি পড়ে এবং ত্বকের বহিরাবরণ উঠে যায়
*ত্বক লালচে হয় এবং চুলকায়, চামড়া ফেটে আঁশটে হয়
অ্যাকজিমাঃ
অ্যাকজিমা বংশগত চর্মরোগ যার ফলে ত্বক শুষ্ক হয়, চুলকায়, আঁশটে এবং লালচে হয়। খোঁচানোর ফলে ত্বক পুরু হয় ও কখনও কখনও উঠে যায়। এর ফলে ত্বক জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং ত্বক থেকে চুয়ে চুয়ে পানি পড়ে এবং দেখতে ব্রণ আক্রান্ত বলে মনে হয়। এটি সচরাচর বাচ্চাদের মুখে, ঘাড়ে, হাত ও পায়ে বেশি দেখা যায়।
অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিসঃ
এটা হলে চোখ লাল হয়ে যায়। চোখ দিয়ে পানি পড়ে ও ব্যথাও করে। ৬-১২ বছরের শিশুদের এটি বেশি দেখা দেয়। যাদের শরীর কোনও নির্দিষ্ট অ্যালার্জেনের প্রতি অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখায় তাদের অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস হতে পারে। কিছু শিশুদের দেখা যায় পুকুরে গোসল করলে বা বাইরে খেলাধুলা করলে চোখ লাল হয়ে যায়, পানি পড়ে এবং চোখ চুলকায়। এটা অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিসের কারণে হয় ।
ফুড অ্যালার্জিঃ
মাংস, বেগুন বা বাইরের খাবার খেলেই অনেকের চুলকানি দেখা দেয়। বমি বমি ভাব হয়। এটা হলো ফুড অ্যালার্জি।তাদের শরীর ওই সব খাবারের জন্য উপযোগী নয়।
ড্রাগ অ্যালার্জি:
কিছু মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা কোনও অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করার পর শরীর চুলকাতে থাকে। এতে বোঝা যায় ওই অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি তার হাইপারসেনসিটিভিটি রয়েছে এবং ওষুধটা তার শরীরে অ্যালার্জেনের কাজ করছে। এমনটা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ বদলে নিতে হবে। কোন ওষুধ ব্যবহারের ফলে যদি হাইপেরসেনসিটিভিটি রিঅ্যাকশন শুরু হয় তবে সেটা হলো ড্রাগ অ্যালার্জি।
অ্যানাফাইলেকটিক রিঅ্যাকশন:
অ্যানাফাইলেকটিক রিঅ্যাকশন হচ্ছে এক প্রকার ইমারজেন্সি অ্যালার্জিক কন্ডিশন। কারো শরীরে পোকাকামড় বা মশা কামড় দিলে, কিছুক্ষণ পরে দেখা যায় তাদের শরীর লাল লাল চাকায় ভরে গেছে। এ সময় প্রচন্ড চুলকানিও হয়। এই অবস্থাগুলোকে অ্যানাফাইলেকটিক রিঅ্যাকশন বলে। যাদের শরীর হাইপারসেনসিটিভ তাদেরক্ষেত্রে মশা কিংবা পোকামাকড় এর কামড়ে এ রিঅ্যাকশন দেখা দিতে পারে।
এটপিক একজিমা:
এটি এক প্রকার অ্যালার্জিক চর্মরোগ, যা অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশনের কারণে হয়।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াজনিত অ্যালার্জি:
এটি খুবই মারাত্মক। অ্যালার্জেন শরীরের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে এটি শুরু হয়ে যেতে পারে। নিচে উল্লিখিত উপসর্গগুলো হতে পারে-
চামড়া লাল হয়ে ফুলে উঠে ও চুলকায়
শ্বাসকষ্ট, নিঃশ্বাসের সঙ্গে বাঁশির মতো আওয়াজ হয়
মূর্ছা যেতে পারে
রক্তচাপ কমে গিয়ে রোগী শকে চলে যেতে পারে
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াজনিত অ্যালার্জি
এটি খুবই মারাত্মক। অ্যালার্জেন শরীরের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে এটি শুরু হয়ে যেতে পারে। নিচে উল্লিখিত উপসর্গগুলো হতে পারে-
চামড়া লাল হয়ে ফুলে উঠে ও চুলকায়
শ্বাসকষ্ট, নিঃশ্বাসের সঙ্গে বাঁশির মতো আওয়াজ হয়
মূর্ছা যেতে পারে
রক্তচাপ কমে গিয়ে রোগী শকে চলে যেতে পারে
প্রতিরোধ
সুনির্দিষ্ট কারণ জানা থাকলে তা পরিহার করে চললেই সহজ উপায়ে অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রন করা যায়
ওষুধ প্রয়োগ করে সাময়িকভাবে অ্যালার্জি থেকে অনেকটা উপশম পাওয়া যায়
ওষুধের পাশাপাশি ভ্যাকসিন বা ইমিউনোথেরাপি অ্যালার্জিক রাইনাইটিস রোগীদের সুস্থ থাকার অন্যতম চিকিৎসা পদ্ধতি
পরীক্ষা
রক্ত পরীক্ষাঃ বিশেষত রক্তে ইয়োসিনোফিলের মাত্রা বেশি আছে কিনা তা দেখা হয়
• সিরাম আইজিইর মাত্রাঃ সাধারণ অ্যালার্জি রোগীদের ক্ষেত্রে আইজিইর মাত্রা বেশি থাকে
স্কিন প্রিক টেস্টঃ এ পরীক্ষায় রোগীর চামড়ার ওপর বিভিন্ন অ্যালার্জেন দিয়ে পরীক্ষা করা হয় এবং এ পরীক্ষাতে কোন কোন জিনিসে রোগীর অ্যালার্জি আছে তা ধরা পড়ে
• প্যাঁচ টেস্টঃ এ পরীক্ষা রোগীর ত্বকের ওপর করা হয়
• বুকের এক্স-রেঃ হাঁপানি রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসা শুরু করার আগে অবশ্যই বুকের এক্স-রে করে নেয়া দরকার, যে অন্য কোনো কারণে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কিনা
স্পাইরোমেট্রি বা ফুসফুসের ক্ষমতা দেখাঃ এ পরীক্ষা করে রোগীর ফুসফুসের অবস্থা সম্পর্কে সঠিক ধারণা করা যায়
চিকিৎসা
অ্যালার্জির লক্ষণগুলো কতটা গুরুতর তার উপর ভিত্তি করে যে কয়েক ধরণের চিকিৎসা দেয়া হয় তা নিচে দেয়া হলো-
অ্যালারজেন পরিহারঃ অ্যালার্জির চিকিৎসার ক্ষেত্রে অ্যালারজেন পরিহার করা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে অ্যালার্জির লক্ষণ ও উপসর্গগুলোও কম দেখা যায়।
ওষুধঃ অ্যালার্জি উপশমের জন্য ওষুধগুলো বিভিন্ন উপায়ে যেমন- ট্যবলেট, তরল আকারে, নাকের স্প্রে বা চোখের ড্রপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
ইমিউনোথেরাপিঃ অ্যালার্জির তীব্রতা যদি খুব বেশী থাকে এবং অ্যালার্জির বিভিন্ন ঔষধ দিয়েও যদি অ্যালার্জি থেকে উপশম না পাওয়া যায় তাহলে অ্যালারজেন ইমিউনোথেরাপি দিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়।
ইমারজেন্সি ইপিনেফ্রিনঃ অ্যালার্জির তীব্রতা যাদের খুব বেশী তাদের সবসময়ের জন্য জরুরি ইপিনেফ্রিন সাথে রাখতে হবে।
ঝুঁকি:
অ্যালার্জির পারিবারিক ইতিহাস আছে হে ফিভার, একজিমা। হাঁপানি বা অন্য ধরণের অ্যালার্জি থাকলেশিশুদের ক্ষেত্রে
জটিলতা :
অ্যানাফাইল্যাক্সিসঃ খাবারের অ্যালার্জি এবং পোকামাকড়ের কামড় অ্যানাফাইল্যাক্সিস নামে পরিচিত। এটি গুরুতর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। খাদ্য, ওষুধ এবং পোকামাকড়ের কামড় হলো অ্যানাফাইল্যাক্সিসের অন্যতম কারণ ।
হাঁপানিঃ যদি কারো অ্যালার্জি থাকে তবে হাঁপানি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অনেক ক্ষেত্রে, পরিবেশে অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসার কারণে হাঁপানি শুরু হয়।
সাইনুসাইটিস এবং কান বা ফুসফুসের সংক্রমণঃ যদি কারো হে ফিভার বা হাঁপানি থাকে তবে এই অবস্থাগুলি পাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।