30/10/2025
"এক্সরে-তে যে ক্যান্সারটা দেখা যাচ্ছিল, দোকানদার সেটা এন্টিবায়োটিক দিয়ে ঢাকতে চেয়েছিল!"
ডান ফুসফুসের উপরে গোলাকার একটা ছায়া।
লাল বৃত্তে ঘেরা সেই অংশটা দেখে আমি থমকে যাই।
রোগী এসেছিলেন
কাশি
বুকে ব্যথা
কফের সাথে রক্ত যাওয়ার অভিযোগ নিয়ে।
আমার অভিজ্ঞতা বলছিল: এটা হতে পারে —
নিউমোনিয়া
টিবি
কিংবা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর — ফুসফুসের ক্যান্সার।
আমি রোগীকে পরীক্ষা করলাম।
প্রাথমিক রক্ত পরীক্ষা,
কফ পরীক্ষা,
GeneXpert করে নিশ্চিত হলাম — টিবি বা নিউমোনিয়া না।
তখন সামনে রইল কেবল একটাই সম্ভাবনা
ফুসফুসের ক্যান্সার।
রোগীর বয়স বেশি।
অনেক বছর ধরে ধূমপায়ী।
ওজন দ্রুত কমেছে।
কাশির সাথে রক্ত যাচ্ছে।
সব মিলিয়ে আমি সন্দেহ করলাম Bronchogenic Carcinoma
পরবর্তী করণীয়: CT-guided FNAC
তারপর রিপোর্ট অনুযায়ী কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি
কিন্তু রোগী শোনেননি আমার কথা।
তিনি বিশ্বাস করেছেন
পাড়ার ফার্মেসির দোকানদারকে
যিনি তাকে ১২০ টাকায় "Oditen 400" দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
বলেছেন
"রিপোর্ট-টিপোর্ট লাগবে না, আমি বুঝি!"
আর হ্যাঁ, আমার নামে দোকানেই কাটা হয়েছে:
“এইসব ডাক্তাররা রিপোর্ট ছাড়া ওষুধ দেয় না, শুধু টেস্ট করায়, খরচ বাড়ায়!”
আজ সন্ধ্যায় রোগীর মেয়ে আমাকে ফোন করে বলল,
"আব্বুর আবার রক্ত গেছে অনেক, আপনি যা বলছিলেন, তাই তো..."
আমি চুপ করে ছিলাম।
আমি আসলে বোকা হয়ে গেছি।
একজন এমবিবিএস গ্র্যাজুয়েট হয়েও
আমি হেরে গেছি সেই দোকানদারের কাছে
যার ডাক্তারি সার্টিফিকেট নেই,
কিন্তু রোগীর ‘আস্থা’ আছে।
আমাদের দেশে মানুষ ক্যান্সার চিকিৎসা নেয় ফার্মেসিতে,
আর প্রফেসরের প্রেসক্রিপশন নিয়ে আসে এমবিবিএস ডাক্তারের কাছে ব্যাখ্যার জন্য!
কি অদ্ভুত জাতি আমরা!
ডাক্তারদের গালি দিলে মনের জ্বালা কমে, বুঝি।
কিন্তু ভুল চিকিৎসায় মরে গেলে, সেই ডাক্তার আর কিছু করতে পারে না।
আর তখন কান্নাটা শুধুই আপনার হয়।
শেয়ার করুন, যাতে কেউ অন্তত সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়।
কেস সামারি : ডা: আহমেদ জুবায়ের
লেখা :
Dr-Abdur Rahman