02/08/2021
নাক কান গলার ক্যান্সারঃ-
-------------------
ক্যান্সার রোগটির কথা শুনলেই আমরা এক ধরনের আতঙ্কে আক্রান্ত হই। মনে করি, বোধ হয় জীবনটা শেষ হয়ে গেল, জীবনের আলো বুঝি নিভে গেল। ক্যান্সার রোগীদের নিয়ে আমরা অনেকেই বাস্তব অভিজ্ঞতা পেয়ে থাকি, যা আমাদের জন্য অনেক বড় ধাক্কা।
দেশে প্রতিনিয়ত ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।
নাক-কান-গলার ক্যান্সারের কারণঃ-
১. তামাক ও মদ্যপান মূল কারণ বিবেচ্য হলেও আমাদের দেশের জন্য পান-সুপারি-জর্দা অনেকাংশে দায়ী। বলা হয়ে থাকে নাক-কান-গলার ক্যান্সারের মধ্যে ৭৫ শতাংশই তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের কারণে হয়। বেশিরভাগ ‘ওরোফ্যারেনজিয়াল’ ক্যান্সারের প্রধান ঝুঁকিপূর্ণ কারণ হল তামাকের ব্যবহার। মদ্যপানের সঙ্গে ধূমপান যৌথভাবে ওরোফ্যারেনজিয়াল ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়াতে পারে।
২. অতিরিক্ত রেডিয়েশনের সংস্পর্শে আসার ইতিহাস।
৩. সুপারি চিবানোর অভ্যাস। দীর্ঘক্ষণ সুপারি পাতা গালের চিপায় রেখে চিবানো থেকে এই ধরণের ক্যান্সার হতে পারে।
৪. অতিরিক্ত ঝাল এবং মসলা জাতীয় খাবার (spicy food) নিয়মিতভাবে খাওয়ার অভ্যাস থেকে হতে পারে মুখ এবং মুখ গহ্বরের ক্যান্সার।
৫. হিউম্যান প্যাপিলমা ভাইরাস (HPV-16) নামে এক ধরনের ভাইরাস এর সংক্রমণকে ইদানিং ওরোফ্যারেনজিয়াল ক্যান্সারের জন্য দায়ী বলে ধরা হচ্ছে। এই ভাইরাস গলা ছাড়াও মহিলাদের জরায়ু ক্যান্সারের কারণ হতে পারে ।
৬. এছাড়া কিছু নির্দিষ্ট প্যাকেটজাত লবনাক্ত খাবার, এবং যারা বিভিন্ন ফার্নিচার কারখানায় কাঠ ও রং এর কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে নাক এবং নাকের পিছনের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা বা ঝুঁকি থাকে।
৭. জেনেটিকস বা বংশগত কারণ থেকে হতে পারে তবে খুব কম।
৮. GERD (Gastro oesophsgul Reflex Disorder) অর্থাৎ এসিডিটি সমস্যা হতে খাবার পাকস্থলী থেকে বেরিয়ে আসার রোগে দীর্ঘদিন ভুগলে গলার ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।
৯. সবুজ শাক-সবজি এবং ভিটামিন সি জনিত পুষ্টিকারক খাবার নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহন না করলে।
১০. Bad oral hygiene অর্থাৎ মুখের ভিতর অপরিষ্কার রাখলে এবং দাঁতের ক্রনিক ইনফেকশন। ১১. মহিলাদের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে রক্তশূন্যতায় (Iron defficiency) ভুগলে।
নাক, কান ও গলার ক্যান্সারের উপসর্গগুলোঃ-
১. মুখের এবং গলার ভিতরে বা বাইরে ঘা,ক্ষত, আলসার যা প্রাথমিক চিকিৎসা সত্ত্বেও সহজে শুকায় না,বরং দিনে দিনে বেড়ে যায়। এই ক্ষতের কারণে খাবার চিবাতে বা গিলতে কষ্ট হয় এবং জলপান করতেও অসুবিধা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে মনে হয় গলায় কিছু আটকে আছে।
২. গলা বা হেড-নেক আক্রান্ত অঞ্চলে ফোলাভাব অর্থাৎ লাম্প যাকে টিউমার বলে থাকি। মুখ-গলা এবং ঘাড়ের পিছনে ফোলা অংশ সৃষ্টি।
৩. এক পাশে গলা ব্যাথা যা স্বাভাবিক খাবার গ্রহন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে।
৪. জিহ্বা নাড়াতে অসুবিধা।
৫. দাঁত নড়ে যাওয়া বা দাঁতে ব্যথা এবং ফোলা।
৬. এই অঞ্চলের টিউমার এর সঙ্গে কানে ব্যথা।
৭. কর্কশ কণ্ঠ। অর্থাৎ কোন কোন সময় গলার স্বরভঙ্গ নিয়েও রোগী আসতে পারেন। তবে স্বরভঙ্গ হলেই যে ক্যান্সার মনে করে আতংকিত হয়ে পরবেন তা কিন্তু নয়। গলার কন্ঠের পরিবর্তন বা গলা ভাঙা যেকোন কারণে হতে পারে। প্রাথমিক ওষুধ খাওয়ার পরও তিন সপ্তাহের অধিক স্বরভঙ্গ থাকলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই দেরি না করে একজন নাক-কান-গলা এবং হেড-নেক বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। এই গলা ভাঙা থেকে হঠাৎ করে শ্বাস কষ্ট দেখা দেওয়া।
৮. অস্বাভাবিকভাবে ওজন হ্রাস। সঙ্গে অরুচি এবং ক্ষুধামান্দা।
৯. জিহ্বা অথবা মুখের ভিতরের উপরিত্বকে সাদা-লাল ছোপ বা প্যাচ।
১০. নাকের ক্যান্সার এর ক্ষেত্রে নাক দিয়ে রক্ত আসা। হঠাৎ মুখের গঠনগত পরিবর্তন।
১১. মুখ দিয়ে অস্বাভাবিক রক্তপাত। কাশির সঙ্গে রক্ত।
১২. চোয়াল শক্ত হয়ে যাওয়া এবং মুখ খুলতে অসুবিধা।
১৩. থাইরয়েড গ্রন্থি যেটা গলার সামনের দিকে থাকে, সেটা দীর্ঘদিন ফুলে শক্ত হয়ে থাকা। অনেক সময় এই থাইরয়েড গ্রন্থির ফুলার সঙ্গে গলার কণ্ঠস্বর ভেঙ্গে যেতে পারে।
১৪. মুখের উভয় পাশে কানের ঠিক নিচে যে লালা গ্রন্থি আছে সেটা ধীরে ধীরে বড় হয়ে শক্ত হয়ে গিয়ে যদি মুখ বেঁকে যায় এবং সঙ্গে এই লালা গ্রন্থির ফোলায় ব্যথা থাকতে পারে।
তবে ৩ সপ্তাহের অধিক সময় যদি এ স্বরভঙ্গ
স্থায়ী থাকে, তা হলে তা নিয়ে ভাবা উচিত।
আপনার নিকটতম একজন হোমিওপ্যাথি
চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়।