18/09/2025
জনস্বার্থে প্রচারঃ
বিষয় ---পলিফার্মেসী, অর্থাৎ একসাথে অনেকগুলি ঔষধ প্রয়োগ করা।
★ প্রশ্ন ---হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে পলি ফার্মেসি করা অর্থাৎ প্রতি দিনে চার পাঁচ রকম ঔষধ খাওয়া, এইভাবে অনেকে ঔষধ দেন, তা কি ঠিক? তাতে রোগ পুরো সারে কি?
উত্তর ---না, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে এইভাবে ঔষধ দেওয়া যায় না। এইভাবে চিকিৎসা করলে রোগ পুরোপুরি সারে না। রোগীর সময় নষ্ট হয়, অর্থ নষ্ট হয়, তার শারীরিক সুস্থতা আরও বেশি নষ্ট হয়, আর অনেক রকম ঔষধ খেয়ে অন্যান্য অনেক রকম কৃত্রিম রোগের সৃষ্টি হয়, চিকিৎসা পরিভাষায় নতুন করে তৈরি হওয়া এইসব কৃত্রিম রোগগুলিকে বলা হয় ---আরটিফিশিয়াল ড্রাগ ডিজিজ।
প্রশ্ন ---এই সব ডাক্তারের কাছে এইভাবে ঔষধ খেয়ে আমি তো মাঝে মাঝে ভালো থাকি। তাহলে কি বলবেন?
উত্তর ---এই ভাবে চিকিৎসা করা ডাক্তারদের কাছে পাঁচ দশ রকম মেশানো ঔষধ খেলে মাঝে মাঝে অল্পসল্প ভালো থাকা যেতেই পারে, কারণ যে চার-পাঁচটি ঔষধ দেওয়া হয়, তার মধ্যে কোন কোন ঔষধ সুপারফিসিয়ালি অর্থাৎ খুব হালকাভাবে অল্প কিছু কাজ করতে পারে। চিকিৎসা ভাষায় একে বলা হয় সারফেস প্যালিয়েশন। কিন্তু পুরোপুরি রোগ আরোগ্য হয় না, রোগী সম্পূর্ণভাবে কখনো সুস্থ হয় না।
★ আজকাল বেশিরভাগ ডাক্তাররা এইরকম প্রেসক্রিপশন করছে, তাহলে হোমিওপ্যাথিক কলেজগুলিতে কি এইরকম প্রেসক্রিপশন করা শেখানো হচ্ছে, বা এইসব পড়ানো হচ্ছে?
উত্তর ---না, কোন হোমিওপ্যাথিক কলেজে এইভাবে প্রেস্ক্রিপশন করতে শেখানো হয় না, বা পড়ানো হয় না। কিন্তু দুঃখের বিষয় অনেক শিক্ষকরা যারা পড়ায় --তারা ক্লাসে পড়ানোর সময় এক সময় একটি মাত্র ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে হ্যানিম্যানের এই নীতি পড়ায়, বা শেখায়, কিন্তু নিজেরা তাদের ব্যবহারিক জীবনে তা করে না। এরা ভন্ড বা হিপোক্রেটিক। এমন চিকিৎসকের সংখ্যা আজকাল অনেক দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।
★ প্রশ্ন ---এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসায় তো সবসময় চার-পাঁচটা ওষুধ মিশিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে তাদের ঔষধে রোগ কমে কি করে, বা তারা এমন করে কেন?
উত্তর ---এ্যলোপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতির নীতি এইরকম। তাদের ঔষধগুলি এই ভাবেই তৈরী করা হয়েছে। এক একটা উপসর্গ কিভাবে কমানো যায়, সেইভাবে বিভিন্ন কম্পোজিশনে তাদের ঔষধগুলি বানানো হয়েছে।
★ হোমিওপ্যাথিক ঔষধ তাহলে কিভাবে বানানো হয়েছে, বা কিভাবে তৈরি করা হয়েছে?
উত্তর ---হোমিওপ্যাথিক প্রত্যেকটা ঔষধ সুস্থ মানুষকে খাওয়ানো হয়, তখন যা লক্ষণ পাওয়া যায়, তা লিপিবদ্ধ করা হয়। লক্ষণ লিপিবদ্ধ করা বইটির নাম মেটিরিয়া মেডিকা। চেম্বারে রোগী আসলে তার লক্ষণ মিলিয়ে এই মেটিরিয়া মেডিকা বইয়ের যে ঔষধের সাথে মিলবে, সেই ঔষধটি দিতে হবে।
আগেই বলেছি এ্যালোপ্যাথিক ঔষধগুলি রোগ লক্ষণ কমানোর জন্য সেইভাবে আলাদা আলাদা ফর্মুলায় তৈরি করা হয়, কিন্তু হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সেইভাবে তৈরি হয়নি বা হয় না, এক সময় একটিমাত্র ঔষধ পরীক্ষা করা হয়েছে। তাহলে একসাথে ৫টি বা ১০ টি ওষুধ কিভাবে একজন রোগীকে আমি দেব?
তাই হোমিওপ্যাথিক ঔষধের প্রস্তুতি ও রোগীতে অ্যাপ্লিকেশন এবং এ্যলোপ্যাথিক ঔষধের প্রস্তুতি ও রোগীতে অ্যাপ্লিকেশন এক নয়।
★ প্রশ্ন --তাহলে এ্যলোপ্যাথিক ঔষধ খেতে থাকলে আর্টিফিশিয়াল ড্রাগ ডিজিজ হতে পারে?
উত্তর --অবশ্যই হতে পারে, অবধারিতভাবে হয়, এবং প্রতিটা রোগীর রাতদিন তা হচ্ছে। চিকিৎসকরা তা জানেন, কারণ এ্যালোপ্যাথিক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলি যারা এইসব ঔষধগুলি বানায় তারাও তা জানে, পরীক্ষা করে পেয়ে থাকে। তাই তাদের অনেক ঔষধের গায়ে সাইড এফেক্টস লেখাও থাকে। আজকাল গুগলে এ্যলোপ্যাথিক প্রত্যেকটা ওষুধের সাইড এফেক্ট দেওয়াও থাকে। এই সাইড এফেক্ট কমাতে আজকাল অ্যালোপ্যাথিক বইগুলিতে বলাও থাকছে --- Polypharmacy should be avoided, one reason being the dangers of counter action of medicines.
★ তাহলে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক যারা এমন ভাবে ঔষধ মিশিয়ে দেয়, বা দিনে চার-পাঁচবার এই রকম ঔষধ খেতে দেয়, তাদের থেকে কি বিরত থাকা ভালো?
উত্তর --অবশ্যই। কোন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক উপাধিধারী ব্যক্তিদের প্রেসক্রিপশনে যদি এমনভাবে চার-পাঁচ বা দশটা ঔষধ লেখা থাকে, তাহলে বুঝতে হবে সেই চিকিৎসক আসল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক নয়। সে আসল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বোঝে না, বা করে না। যত তাড়াতাড়ি এদের থেকে মানুষ সরে যাবে ততই তাদের মঙ্গল হবে, তত আর্টিফিশিয়াল ড্রাগ-ডিজিজের হাত থেকে বাঁচবে।
তবে মানুষের মঙ্গল কামনায় এই ব্যাপারে বর্তমানে আমি যতটা সরব হয়েছি, তাতে এই ধরনের চিকিৎসকরা তাদের স্বরূপ পাল্টানোর চেষ্টা করবে। হয়তো আর ওপেন প্রেসক্রিপশনে তারা পাঁচটা ঔষধ লিখে রোগীর হাতে না দিয়ে নিজের চেম্বার থেকে ঐরকম মিশ্রপ্যাথি পাঁচমিশালী ঔষধগুলি সরবরাহ করবে। তাই আগে যদি এইসব ব্যক্তিরা এমন চিকিৎসা করতেন, হঠাৎ প্রেসক্রিপশন না দিয়ে নিজের চেম্বার থেকে ঔষধ বানিয়ে দিচ্ছেন, তাহলে সন্দেহের অবকাশ থাকবেই। অর্থাৎ সে ৫-১০টি ঔষধ মিশিয়ে দেবেই, কারণ সে তার পুরানো স্বভাব পাল্টাতে পারবে না।
আর স্বভাব পাল্টাবেই বা কি করে --রোগীর সামগ্রিক লক্ষণ মিলিয়ে একটা ঔষধ দেওয়ার মতন পড়াশোনা বা যোগ্যতা তো তার নেই, সেই পড়াশোনা বা যোগ্যতা থাকলে সে প্রথম থেকেই একটি মাত্র ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করতো। বলা ভালো সেই যোগ্যতা তার আগের থেকে তৈরি হয়নি।
★ হোমিওপ্যাথির নীতি মেনে যারা একসময় একটিমাত্র ঔষধ প্রয়োগ করে, তাদেরকেও কখনো দেখা যায় কোন একজন রোগীকে দুইটি বা তিনটি ঔষধ দিয়েছে, কি বলবেন?
উত্তর ---কোন বিশেষ ক্ষেত্রে, ইনকিউরেবল কেস, অর্থাৎ যে সব কেস আর আরোগ্য হবে না, রোগী আর বাঁচবে না, যেমন --ক্যান্সারের শেষ স্টেজ, ইত্যাদি ---এমন সব কেসে প্রয়োজনে যে কোন ভাল চিকিৎসক বা এক সময় একটি মাত্র ঔষধ প্রয়োগ করা চিকিৎসকও রোগীকে আশু শান্তি দেওয়ার জন্য এমনভাবে দুই তিনটি ওষুধ দিতে পারেন। এক্ষেত্রে সাইড এফেক্টস, বা আর্টিফিশিয়াল ড্রাগ ডিজিজ এসব ভাবার কোন প্রয়োজন হয় না, কারণ রোগী অবধারিতভাবে কিছুদিন পরেই মারা যাবে। বর্তমানে তাকে শান্তিতে মরতে দেওয়াটাই চিকিৎসা।
Post: Dr. Rabin Barman.