23/10/2022
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি
চোখ পরীক্ষা,চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের উপায়:
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি কি?
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি এক ধরনের চোখের রোগ। চোখের ভিতরে রেটিনা নামক অতিসংবেদনশীল একটি পর্দা আছে যা আমাদের দৃষ্টির জন্য অপরিহারর্য।এই রেটিনাতে কিছু অতিসুক্ষ রক্তনালী আছে।ডায়াবেটিসের কারণে রেটিনার এই সুক্ষ রক্তনালীগুলো বন্ধ হয়ে আসে।এতে রক্তস্বল্পতা অথবা অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দেয়।এর ফলে রেটিনাতে পানি জমে ফুলে যায় অথবা রেটিনার বিভিন্ন স্থানে নতুন রক্তনালীর সৃষ্ঠি হয়, এসব নতুন রক্তনালী স্বাভাবিক রক্তনালীর মত পরিপক্ক হয় না ও খুব সহজেই ভেঙ্গে যায়। এতে করে চোখের ভিতরে রক্তক্ষরণ হয়। ফলে দৃষ্টিশক্তি একেবারেই চলে যায়। দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে রেটিনার এই সমস্যাকেই ডায়বেটিক রেটিনোপ্যাথিক বলা হয়।
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাখি-এর লক্ষণঃ
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির কোন লক্ষণ নেই। রেটিনা আক্রান্ত হলেই কেবল কয়েক ধরণের লক্ষণ দেখা দেয়।
*ধীরে ধীরে বা হঠাৎ করে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে।
*দৃষ্টি সীমায় কালো কালো স্পট দেখা যেতে পারে।
* চোখের সামনে মাছির মতো কিছু ভেসে বেড়াচ্ছে এমন মনে হতে পারে।
* চশমা দিয়েও লেখা পড়ার কাজে বিঘ্ন দেখা দিতে পারে।
* চোখে কোন জিনিসের সম্পুর্ন না দেখে আংশিক দেখা দিতে পারে।
*চোখে চাপ বেড়ে গিয়ে ব্যাথা-বেদনা হতে পারে। চোখ একদম অন্ধ হতে পারে।
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিক যেভাবে সনাক্ত করা হয়ঃ
ডায়াবেটিস রোগ ধরা পরার সাথে সাথে চোখ পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ সনাক্ত করে থাকেন। চোখের মনি বড় করে বিশেষ যন্ত্রের দ্বারা নিম্নলিখিত পরীক্ষা গুলোর মাধ্যমে সাধারণত ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিক রোগটি সনাক্ত করা হয়ে থাকে।
*সিএফপি (CFP)
*ওসিটি (OCT)
*এফএফএ(FFA)
*বি-স্ক্যান (B-Scan)
প্রতি বছর কমপক্ষে একবার অথবা রোগের অবস্থা ভেদে চক্ষুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী রেটিনা পরীক্ষা করাতে হবে।
ডায়ানেটিক রেটিনোপ্যাথি-তে আক্রান্তের ঝুঁকি কাদের বেশী ?
ডায়াবেটিস আক্রান্ত যেকোন ব্যাক্তি ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি-তে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
*দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত।
*অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস।
*উচ্চ রক্তচাপ।
*কিডনী সমস্যা।
*তামাক জাতীয় দ্রব্য যেমন,ধুমপান,জর্দ্দা,গুল ইত্যাদি সেবন।
*ডায়াবেটিসে আক্রান্ত গর্ভবতী মহিলা।
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির চিকিৎসাঃ
রোগের অবস্থা ভেদে চিকিৎসার ধরণ নির্ধারণ করা হয়। রেটিনোপ্যাথির পর্যায় বিবেচনা করে চক্ষুবিশেষজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিবেন কোন ধরণের চিকিৎসা দিতে হবে। চিকিৎসা ব্যবস্থাগুলো হতে পারে-
ইনজেকশনের সাধ্যমে চিকিৎসাঃ
ঔষধ ইনজেকশনের মাধ্যমে চোখে দেওয়া হয়।এই চিকিৎসা ব্যবস্থা রেটিনাকে পানি জমা হতে রক্ষা করে।
অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসাঃ
রেটিনা ছিড়ে গেলে বা রক্তক্ষরণ হলে অনেক সময় শুধুমাত্র লেজার বা ইনজেকশনে কাজ হয় না। সেক্ষেত্রে,অপারেশন করে রক্তক্ষরণ পরিস্কার করা হয় এবং ছিড়ে যাওয়া রেটিনা জোড়া লাগানো হয়।
লেজার চিকিৎসাঃ
লেজার এক ধরণের আলোকরশ্মি যার মাধ্যমে রেটিনা চিকিৎসা করা হয়।লেজার রশ্মির মাধ্যমে দূর্বল ও ছিড়ে যাওয়া রেটিনাকে চিকিৎসা করে রক্তক্ষরণ বন্ধ ও পানি জমা থেকে বিরত রাখা হয়।
ডায়াবেটিস রোগীদের সবসময় মনে রাখতে হবেঃ
*ডায়াবেটিসের কারণে চোখের বিভিন্ন জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে,যার মধ্যে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি অন্যতম।এই রোগ দৃষ্টিশক্তির ক্ষতিসহ অন্ধত্বের কারণ হতে পারে।
*প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য বছরে অন্ততঃ একবার চোখের পরীক্ষা করানো।
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি প্রতিরোধের উপায়ঃ
*ডায়াবেটিস আছে কিনা জানা না থাকলে পরীক্ষা করানো।
*ডায়াবেটিস থাকলে বছরে কমপক্ষে একবার চোখ পরীক্ষা করানো।
*ডায়াবেটিসের কারণে দৃষ্টিশক্তি কমে গেলে জরুরী ভিত্তিতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে আছে কি না তা দেখার জন্য নিয়মিত রক্তের গুলুকোজ পরিমাপ করতে হবে।
হাসপাতালে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি রোগীদের সেবা সমূহঃ
*রেটিনার লেজার
*রেটিনার ইনজেকশন
*ডায়াবেটিক রোগিদের চক্ষু পরীক্ষা
*চোখের রক্তক্ষরণের চিকিৎসা
*রেটিনার সকল রোগের চিকিৎসা।
লেখকঃ
ডাঃ মোঃ এনামুল হাসান
এমবিবিএস,ডিসিও(বিএসএমএমইউ)
আইসিও (লন্ডন)
ফেলো ডিট্রিও-রেটিনা
ইস্পাহানি ইসলামিয়া আই হাসপাতাল-ঢাকা
রেটিনা চিকিৎসার জন্য(ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি,রেটিনার রক্তক্ষরণ,রেটিনার ইনজেকশন,রেটিনার লেজার)ইস্পাহানি ইসলামিয়া আই হাসপাতাল থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
কনসালটেন্ট,প্রফেসর এম.এ মতিন বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল, সিরাজগঞ্জ।