29/09/2025
আজ ২৯ সেপ্টেম্বর, বিশ্ব হার্ট দিবস।
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে কিছু কথা।
-----------------------------------
★বাংলাদেশে প্রতি বছর দুই লক্ষ তিরাশি হাজার মানুষ বিভিন্ন ধরনের হার্টের রোগের কারণে মারা যায়।
★বাংলাদেশ হৃদরোগ চিকিৎসায় স্বয়ংসম্পুর্ন বলা হলেও মোটেও তা সঠিক নয়।
★যে সমস্ত হার্টের রোগির অপারেশন প্রয়োজন হয় তার ৯৫% হয় ঢাকাতে।
★দেশে হার্টের রোগির অপারেশনের জন্য মোট ৩৪ টি সেন্টার রয়েছে। এই ৩৪ টি সেন্টারের ২৬টিরই অবস্থান ঢাকাতে।
বাকি আটটি সেন্টার চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহীর মত বিভাগীয় শহরে আছে কিন্তু সেখানে খুবই সীমিত আকারের সেবা পাওয়া যায়।
★বাংলাদেশের কোন জেলা শহরেই তাৎক্ষণিকভাবে যথাযথ হার্টের চিকিৎসার সুব্যবস্থা নেই,অপারেশনের ব্যবস্থাতো সুদূর পরাহত।
এইজন্য জরুরি হার্টের রোগীদের জন্য পরামর্শ ঃ
------------------------------------------------
★ গ্রামে, উপজেলায় এবং জেলায় কালবিলম্ব না করে দ্রুত ঢাকায় পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে।
হার্ট অ্যাটাক ঃ
----------------
অনেক ধরনের হার্টের সমস্যার মধ্যে ' হার্ট অ্যাটাক ' সবচাইতে বিপজ্জনক ও জরুরী।
হার্টের রক্তনালি ব্লক হয়ে হার্টের নিজস্ব রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে যে সমস্যার সৃষ্টি হয় তাকে হার্ট অ্যাটাক বলে।
একে একিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কসনও বলা হয়।
ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হলে সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষ্মণ সমূহ ঃ
-------------------------------
★বুকের মাঝখানে তীব্র ব্যাথা হবে।
★ ব্যাথায় বুক পিঠ খিল লেগে আসার মত মনে হবে।
★ ব্যাথা কখনো কখনো বাম দিকার ঘাড়, চোয়াল, বাম হাতের দিকে এমনকি পিঠের দিকেও রেডিয়েট করতে পারে। কখনো কখনো পেটের উপরিভাগের ব্যাথা মনে হতে পারে।
★ সাধারণ মানুষ এমনকি চিকিৎসকেরাও অনেক সময় তথাকথিত গ্যাস্ট্রিকের ব্যাথা মনে করে ভুল করে।
★ বুক চেপে আসার সাথে সাথে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
★ গা ঘেমে যেতে পারে।
★ বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে।
★ রোগীর অস্থিরতা লাগবে। শুয়ে থাকলে উঠে বসতে চাইবে যেন উঠে বসলে তার ব্যাথা ও শ্বাসকষ্ট উপসম হবে।
হার্ট অ্যাটাক হলে করণীয় ঃ
-----------------------------
★দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে পৌছাতে হবে।
★ চিকিৎসক যদি মনে করে এটি হার্ট অ্যাটাক তাহলে তিনি রক্ত পাতলা করার ওষুধ যেমন এস্পিরিন ও ক্লোপিডগ্রেল বোলাস ডোজে দিবেন। নাইট্রোগ্লিসারিন স্প্রে জিহবার নিচে স্প্রে করা যেতে পারে। অক্সিজেন দেয়া যেতে পারে এবং অক্সিজেন ওয়ালা এম্বুল্যান্সে ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতি পরামর্শ ঃ
------------------------------------
গ্যাস্ট্রিকের ব্যাথাকে ভুলে হার্ট অ্যাটাকের ব্যাথা মনে করে সিদ্ধান্ত দেওয়া মারাত্মক অপরাধ নয়, কিন্তু হার্ট অ্যাটাককে গ্যাস্ট্রিকের ব্যাথা মনে করে কালক্ষেপণ করা মারাত্মক অপরাধ।
সকল সাধারণ মানুষের প্রতি পরামর্শ ঃ
----------------------------------------
হার্ট অ্যাটাকের যে সমস্ত লক্ষ্মণ আলোচনা করা হয়েছে, সেগুলি যদি মিলে যায় তাহলে দ্রুত এম্বুল্যান্স যোগে হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের মত ঢাকার কিছু হার্ট সেন্টারে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোন মতেই তথাকথিত গ্যাস্ট্রিকের ব্যাথা মনে করে কালক্ষেপণ করা যাবে না।
হার্ট অ্যাটাকের কারণ ঃ
------------------------
★ চল্লিশোর্ধ্ব বয়স।
★ উচ্চ রক্তচাপ।
★ ডায়াবেটিস।
★ কিডনির সমস্যা।
★ রক্তে কোলেস্টেরলের আধিক্য/ ডিসলিপিডিমিয়া
★ শরীরের ওজন বেশি ( ওবেসিটি) ।
★ ধুমপান/ জর্দা/ আলাপাতা / মদ্যপান।
★বংশে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোকের ইতিহাস
★শারীরিক পরিশ্রম না করা/ হাঁটাচলা না করা।
★:অস্বাস্থ্যকর খাদ্য / ফাস্ট ফুড / জাঙ্ক ফুড ।
★ চর্বিযুক্ত খাবার / সম্পৃক্ত চর্বি / ঘি / তেল
ভাত/ রুটি বেশি খাওয়া, ফল ও শাকসবজি কম খাওয়া।
★ নিয়মিত ও পরিমিত ঘুম না হওয়া।
★ টেনশন ও ডিপ্রেশনে ভোগা।
হার্ট অ্যাটাকের প্রতিকার ঃ
--------------------------
★ স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন।
★ শরীরের ওজন ঠিক রাখা।
★ নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা
★ নিয়মিত হাঁটা।
★ স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ( অতিরিক্ত লবন, চর্বি, মিষ্টি ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড বাদ। প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া) ।
★ নিয়মিত ও পরিমিত ঘুম
★ টেনশনমুক্ত ও হাসিখুশির জীবন যাপন।
★ নিয়মিত চেক আপ ও চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ
হাইপ্রেশার, কিডনি রোগ,ডায়াবেটিস, ডিসলিপিডিমিয়া, অন্য কোন রোগ আছে কিনা তা নির্ণয় করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ।
★ মদ্যপান, ধুমপান, জর্দা, আলাপাতা পরিহার।
★ আপনার একজন ফ্যামিলি ফিজিসিয়ান থাকা দরকার । কারণ ব্যাংকককে দেখান বা সিংগাপুরে চেক আপ করেন যাই করেন না কেন আপনার বিপদের সময় সবচেয়ে বড় জীবন রক্ষাকারী সিদ্ধান্তটি দিবেন আপনার ফ্যামিলি ফিজিসিয়ান।
বিভিন্ন স্পেশালিষ্ট ডাক্তারের চিকিৎসা পত্রের সমন্বয়ও করবেন আপনার ফ্যামিলি ফিজিসিয়ান।
আনন্দে থাকুন, সুস্থ থাকুন, নিরাপদ থাকুন।
ডাঃ সুকুমার সুর রায়।