28/10/2025
সংগৃহীত : ডেল এইচ খান
সম্প্রতি আমি ফেসবুক আর লিঙ্কডইনে একটা প্রশ্ন রেখেছিলাম—
“আমরা কেমন শিক্ষা ব্যবস্থা চাই?”
তাতে আপনারা সাড়া দিয়েছেন—তাই আপনাদের সম্মানে বাধ্য হলাম আপনাদের দেয়া মতামত আর পরামর্শগুলো সব একত্র করতে। সেই তালিকার নাম দিলাম- “শিক্ষায় জনতার প্রত্যাশা”।
এই প্রত্যাশা থেকে একটি বার্তাটি খুব স্পষ্টঃ
আমরা কেবল সার্টিফিকেট সর্বস্ব হতে চাই না, আমরা ‘জীবনের জন্য শিক্ষা’ চাই।
তাহলে আপনাদের “শিক্ষায় জনতার প্রত্যাশা” প্রেক্ষিতে আমাদের স্বপ্নের শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন হবে?
আমাদের স্কুলগুলো এমন হবে যেখানে শিশুরা আত্মবিশ্বাসী, ব্যবহারিক ও সৃজনশীলভাবে বড় হবে।
যেখানে শিক্ষা মানে হবে—বাঁচতে শেখা, কাজ করতে শেখা, এবং সমাজে অবদান রাখতে শেখা।
মূল লক্ষ্য:
প্রতিটি শিশুর জন্য এমন শিক্ষা ব্যবস্থা গড়া, যা ৫ বছর বয়স থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত তাদের ব্যবহারিক জ্ঞান, জীবন দক্ষতা এবং কর্মজীবনের জন্য প্রস্তুত করবে—
নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং স্থানীয় বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে।
জনতার দাবীর ভিত্তিতে মূল নীতিঃ
👉শিশু-কেন্দ্রিক শিক্ষা: ক্লাস ৫ পর্যন্ত কোনো বইয়ের ভারী ব্যাগ নয়, কোনো পরীক্ষা নয়। মানসম্মত টিফিন, খেলাধুলার ব্যবস্থা, ললিতকলা শিক্ষার সুযোগ। রেগুলার হেলথ চেক আপ ও কাউন্সেলিং এর সুব্যাবস্থা।
👉জীবন দক্ষতা: ব্যাংকিং থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা, নাগরিক অধিকার পর্যন্ত।
👉বৃত্তিমূলক পথ: ক্লাস ৮ থেকে হাতে-কলমে শেখার সুযোগ। কোডিং, এ আই, ২য় বা ৩য় ভাষা শিক্ষার পাশাপাশি হাতেকলমে কারিগরি শিক্ষা, স্কিল ট্রেনিং, ও ধর্মভিত্তিক নৈতিকতা শিক্ষা)
👉নিরাপদ স্কুল: প্রতিটি ক্লাস্টারে স্কুল নার্স, নিরাপদ খেলার মাঠ ও স্বাস্থ্যসেবা।
👉পেশাদার শিক্ষক: রাজনীতিমুক্ত, দক্ষ, ও প্রশিক্ষিত।
👉স্কুল–শিল্প সংযোগ: শেখা আর কাজের বাস্তব যোগসূত্র।
👉ডিজিটাল স্বচ্ছতা: নো রোল নাম্বার বিজনেস। প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য ইউনিক আইডি ও জাতীয় শিক্ষা ড্যাশবোর্ড।
👉ন্যায়বিচার ও সমান সুযোগ: গ্রামীণ শিশু, দরিদ্র পরিবার, ও মেয়েদের জন্য বিশেষ সহায়তা।
ভবিষ্যতের রোডম্যাপঃ
১ম বছর:
🔹 “No school bag” পাইলট শুরু
🔹 স্কুল নার্স ও ইউনিক স্টুডেন্ট আইডি চালু
🔹 শিক্ষক প্রশিক্ষণের নতুন পথ নির্ধারণ
২–৪ বছর:
🔹 প্রতিটি উপজেলায় বৃত্তিমূলক কেন্দ্র
🔹 ক্লাস ১১–১২ তে কর্মস্থল প্রশিক্ষণ
🔹 জাতীয় শিক্ষা ড্যাশবোর্ড চালু
৫–৮ বছর:
🔹 ক্লাস ৫ পর্যন্ত পরীক্ষা বন্ধ
🔹 সারাদেশে “Learning for Life” মডেল একীভূত করা
পুনশ্চঃ
এঞ্জিওদের ফরেন ফান্ডের একটা বড় অংশই আসে শিক্ষা খাতে। হালে গ্লোবাল এইড বাজেটের প্রায় ৭% থেকে ৯% বরাদ্দ (১২.৭ বিলিয়ন ডলার) দেয়া আছে শিক্ষা খাতে। আগে এর পরিমান ছিল আরো বেশি। কেন এই সরকার শিক্ষা কমিশন করেনি, তার একটা আন্দাজ পাবেন এই শিক্ষা লইয়া এঞ্জিও পলিটিক্স বুঝলে। পলিটিশিয়ানদের মত তারাও চায় না আমাদের বাচ্চারা শিক্ষিত হোক, নিজের পায়ে দাঁড়াক। কারন তাদের সন্তানেরা তো সবাই অক্সফোর্ড হার্ভার্ডেই পড়ে। আমাদের শিশুরা অশিক্ষিত থাকলে বরং লাভেই লাভ। রাজনীতিবিদরা অপেক্ষায় থাকে কবে এরা ১৮ হবে আর ভোটার হবে। আর এঞ্জিওরা এদের দেখিয়ে আনবে আরো আরো ফান্ড।
দেখেন যা ভাল বোঝেন আপনারা!
পুনশ্চঃ রাজনীতিবিদ আর এঞ্জিও মাফিয়া বলতে আমি সাধারণ কর্মীদের বোঝাইনি। তাদের বাচ্চারা অক্সফোর্ড ক্যাম্ব্রিজ হার্ভাডে পড়েনা। বরং চারপাশে তাকান, কাদের বাচ্চারা ঐসব বিদেশী স্কুল, কলেজ আর ভার্সিটিতে পড়ে? তা জানার চেষ্টা করুন। কিভাবে পড়ে? জানুন। তাদের জিজ্ঞেস করুন কেন তারা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাটা এত দিনেও ঠিক করেন নি। ধন্যবাদ।