26/11/2025
মানুষ দীঘায় জগন্নাথ মন্দির চেয়েছিল? মানুষ নিউটাউনে দুর্গা প্রাঙ্গণ চেয়েছিল? মানুষ মুর্শিদাবাদে বাবরি মসজিদ চেয়েছিল? মানুষ দুর্গাপুজোয় ক্লাবগুলোকে টাকা বিলোতে বলেছিল? ইমাম-পুরোহিতরা ভাতা চেয়েছিলেন? মানুষ রেড রোডে ভাসানের কার্নিভাল, রাজ্যের বিভিন্ন শহরে কার্নিভাল চেয়েছিল?
না। মানুষ এগুলোর কোনোটাই চায়নি। এগুলো কোনো মানুষের প্রাথমিক নেসিসিটি ছিল না।
মানুষ চেয়েছে শিক্ষা। স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, স্কুল ভেঙে পড়ছে, স্কুলের ডিজিটাইজেশন এগোচ্ছে না, শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না, শিক্ষকরা ডিএ পাচ্ছেন না, ড্রপ আউট বাড়ছে, শিক্ষার মান কমছে। কলেজে ছাত্র নির্বাচন নেই, বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার নেই, সরকারি বাজেট থেকে বরাদ্দ টাকা আসছে না। আজ বিপন্ন রাজ্যের গোটা শিক্ষাব্যবস্থা।
মানুষ চেয়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। সেখানে ধর্ষণ, নিগ্রহ, বেলাগাম দুর্নীতি, পরিকাঠামোর অভাব, ডাক্তারের অভাব, স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব। মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা বাড়ছে না, মুখ্যমন্ত্রীর পেঁয়াজির জন্য জয়েন্টের রেজাল্ট ঠিক সময়ে বেরোচ্ছে না। আর ডিএর ব্যাপারটা তো আছেই। সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালগুলো নামেই সুপারস্পেশালিটি, ডাক্তার নেই, বিভাগ নেই, যন্ত্রপাতি পুরোনো, ল্যাব ইন্সট্রুমেন্ট পুরোনো, ওষুধ নেই... দুর্দশা গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থায়।
মানুষ চেয়েছে, সরি, চেয়েছিল কর্মসংস্থান। সেটা নিয়ে লিখে আর লোক হাসাচ্ছি না। বদলে তারা জানে আজ বেঁচে থাকবার মতো রোজগার করতে হলে পরিযায়ী শ্রমিক হওয়া মোটামুটি বাধ্যতামূলক – কাজ বা পেশা যাই হোক, হোয়াইট কলার হোক বা ব্লু। বিভিন্ন ধরণের ভাতা আর দু'টাকার চাল দিয়ে সুষ্ঠুভাবে জীবন চালানো দুষ্কর।
মানুষ আরও অনেক কিছু চায়। সুষ্ঠু, কার্যকর, শস্তা গণপরিবহণ, ভালো রাস্তাঘাট, এফিশিয়েন্ট পরিকাঠামো, কম দামে জল, বিদ্যুৎ, অপরাধ থেকে সুরক্ষা, ইত্যাদি। মমতা ব্যানার্জি যেগুলো নিয়ে মানুষকে "আমি করলাম/করেছি" বলেছেন সেগুলো এই তালিকায় নেই।
তাহলে মমতা ব্যানার্জির সরকার মানুষের চাহিদা না মিটিয়ে আজগুবি, কল্পনাপ্রসূত সব খাতে রাজ্যের টাকা কেন খরচ করছেন? কারণ আরএসএস ওনাকে তাই করতে বলেছে। ধর্ম নিয়ে উদ্বাহু নেত্য, ক্রমাগত সাম্প্রদায়িক উস্কানি এবং তার থেকে উৎপন্ন রাজনীতি – এই রাজ্যে বিজেপির স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার জন্য জরুরি, মানুষকে তার প্রয়োজন, তার অভাব ভুলিয়ে বিদ্বেষ, ঘৃণা আর অর্থহীন, অপ্রয়োজনীয় উন্মত্ততার দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য জরুরি। এইভাবেই বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জন্য উর্বর জমি তৈরি করে রাজ্যের 'বিজেপি-বিরোধী' সরকার।
এই খেলাটা আপাতদৃষ্টিতে ধরা খুব কঠিন। কিন্তু তাও, এই রাজ্যে বিজেপির প্রভাব বৃদ্ধি এবং মানুষের রুজি-রুটি, দৈনন্দিন চাহিদার ইস্যুগুলোর মূলধারার রাজনীতির ন্যারেটিভ থেকে ক্রমশ হারিয়ে যাওয়ার দশ বছর হয়ে গেছে। এখনও কি ধরাটা অতটাই কঠিন?
জানিনা। আপনি বলুন।