12/11/2025
কাল ভৈরব জয়ন্তী
১. উৎপত্তি ও তাৎপর্য
শাস্ত্রে বর্ণিত মতে, ভগবান শিব যখন দেবলোক‑ব্রহ্মলোকে অধিষ্ঠিত “ব্রহ্মা”‑বিষয়ক বিতর্ক স্থির করছেন, তখন তিনি ক্রোধে রূপান্তর হয়ে কাল ভৈরব রূপ ধারণ করেন।
এই রূপে “কালের” (সময়‑মৃত্যু) দিক, বিচার, নিষ্ক্রিয়া শক্তি প্রতীকীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। যারা শত্রুপ্রভাব, অদৃশ্য ভয়, গ্রহদোষ, কাজের বাধায় ভোগে — তাঁদের কাছে কাল ভৈরবের উপাসনা বিশেষভাবে ফলদায়ক বলে বিবেচিত।
তাই, এই দিনটি শুধুই উৎসব নয় — আত্ম‑শুদ্ধি, ভয়হরণ এবং সৃষ্টিকর্তার সিদ্ধি‑প্রচেষ্টার সময়ও বলা হয়।
২. সময় ও শুভ মুহূর্ত
জয়ন্তী সাধারণত কৃষ্ণপক্ষ অষ্টমী তিথিতে পালন করা হয়।
পূজার মূল মুহূর্ত হলো ব্রহ্ম মূহূর্তে (ভোর অতি প্রারম্ভিক), প্রস্তুতি শেষে প্রাদোষ বা নিশা‑কাল।
শাস্ত্র অনুসারে, সময় ও তিথি নিশ্চিত হলে পূজা বেশি ফলপ্রসূ হয় — ভ্রুযুক্তি, নিরীক্ষণ সবকিছু মনোযোগ দিয়ে করা ভালো।
৩. পূজা‑বিধি (ধাপ‑ধাপে)
নিচে যেসব ধাপ দেওয়া হলো, সেগুলো আপনি নিজ বাড়িতে বা মন্দিরে প্রয়োগ করতে পারেন — তবে স্থানভেদে কিছু নিয়ম ভিন্ন হতে পারে, তাই স্থানীয় পুরোহিত বা যোগ্য साधক‑পরামর্শ গ্রহণ করা উত্তম।
ধাপ ১: প্রস্তুতি
ব্রহ্মমূহূর্তে উঠে স্নান ও পরিষ্কার লেবাস পরিধান করুন।
পূজাস্থল, মন্দির বা ঘরের প্রসিদ্ধ কোণ পরিষ্কার ও শুদ্ধ করুন। গঙ্গাজল বা শুদ্ধ জল দিয়ে ছিটিয়ে দিন।
একটি শুদ্ধ वेदी (ফলক) স্থাপন করুন যেখানে কাল ভৈরবের মূর্তি বা ছবি থাকবে। পাশাপাশি যদি ইচ্ছে হয়, শিব ও পার্বতী‑র ছবি বা মূর্তিও রাখতে পারেন।
ধাপ ২: প্রতিষ্টা ও অর্ঘ্য
মূর্তিতে চন্দন, কংকালিকা তিলকরূপে লাগান। ফুল‑মালা দিয়ে সাজান।
এক চারমুখী বা সাধারণ দীপ (বিশেষ করে সরষের তেলে) জ্বালান ও ধূপ দেওয়া শুরু করুন।
ধাপ ৩: মূল উপাসনা
“ॐ कालभैरवाय नमः” ইত্যাদি মূল মন্ত্র উচ্চারিত করুন।
পাঠ করুন भैरवाष्टकम् বা যে কোনো বিশিষ্ট স্তোত্র যা কাল ভৈরব‑সম্বন্ধিত।
नैবद्य (ভোগ) অর্পণ করুন — সরষের তেলে জ্বালানো দীপ, ফল, গুলি, মিষ্টি, নারকেল ইত্যাদি। উদাহরণস্বরূপ: জুঁলে (জলেবি), কালে তিলের মিষ্টি, উড়দ ডালের পাকাওয়া (উড়দ ডাল পকোড়া) ইত্যাদি।
ধাপ ৪: বিশেষ আচরণ ও দান
এক প্রচলিত রীতি হিসেবে, কুকুরকে (বিশেষ করে কালো বা দাম্পত্য নয় এমন সাধারণ কুকুরকে) রুটি বা দুধ খাওয়ানো হয়। কারণ কাল ভৈরবের বাহন কুকুর।
দান করুন — যেমন: সরষের তেল, কালো কাপড়, কালো তিল, উড়দ, যারা দরিদ্র তাদের জন্য খাদ্য, কুড়তা圾 etc. এই দান বিশেষভাবে শুভ বলে বিবেচিত।
ধাপ ৫: আরতি ও সমাপ্তি
পূজার শেষে আরতি উঠান। “जय भैरव देवा…” ইত্যাদি আরতি‑গান পড়া হয়।
তারপর সংক্ষেপে ভ্রতের ফলার্থে মনন করুন — “আমি ভ্রত রাখি, আপনার করুণায় মুক্কাম পাই” ইত্যাদি ভাবনাসহ।
পরদিন ভ্রমণ বা কঠোর কাজ উদ্বিগ্নভাবে করা এড়িয়ে শান্তমনা হোন।
৪. নিষেধ ও সতর্কতা
পূজার সময় মাংস বা মদ্যপান এড়িয়ে চলা উত্তম।
পূজা‑কার্য মাঝে বিবাদ, কুটকিনা বা অশান্তি না করা উত্তম — শান্ত ও দয়া‑মূলক মনোভাব রাখুন।
তন্ত্রীয় বা অজ্ঞ মত সঞ্চালিত কার্যক্রম (যেমন শক্তিহীন বা অপরিষ্কৃত সাধনা) করলেও ঝুঁকি থাকতে পারে — বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধান ছাড়া পরিচালনা করা ঠিক নয়।
৫. ফল ও উপকারিতা
বিশ্বাস অনুযায়ী, এই পূজা করলে সব‑ধরনের ভয়, গ্রহদোষ, শত্রুপ্রভাব, কালবৈশাখী প্রভৃতি থেকে মুক্তি মিলতে পারে।
জীবনে সাহস ও প্রতিরোধশক্তি বৃদ্ধি পায়; সময় ও মৃত্যুর ভয়ের বিমোচন হয়।
ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও মানসিক শান্তি আসে — বিশেষ করে যারা বাধা‑সম্বন্ধিত সমস্যায় ভোগে।
মা কল্যানেশ্বরী শক্তিপীঠ আশ্রম
মাতৃ সাধক সপ্তদ্বীপানন্দ জ্ঞানাচার্য