28/08/2025
ট্রাইগ্লিসারাইড...
রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড বেড়ে গেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। একে হাইপারট্রাইগ্লিসারাইডেমিয়া বলা হয়। ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেশি হলে হৃদরোগ,স্ট্রোক এবং প্যানক্রিয়াটাইটি সের(অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ)ঝুঁকি বেড়ে যায়।অনেক সময় কোনো নির্দিষ্ট লক্ষণ বোঝা যায় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে কিছু শারীরিক পরিবর্তন দেখা যেতে পারে:
লক্ষণ
পেটে ব্যথা: খুব উচ্চ মাত্রার ট্রাইগ্লিসারাইড থাকলে প্যানক্রিয়াটাইটি সের (অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ) কারণে পেটের ওপরের দিকে তীব্র ব্যথা হতে পারে।
ফ্যাটি ডিপোজিট: চোখের পাতার ওপর বা শরীরের অন্যান্য অংশে হলুদ বা কমলা রঙের চর্বির স্তর (xanthelasma) দেখা যেতে পারে।
লিভার বা প্লীহা বড় হওয়া: গুরুতর ক্ষেত্রে লিভার বা প্লীহা স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হয়ে যেতে পারে।
ক্লান্তি এবং দুর্বলতা: ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি থাকলে শরীরে অস্বস্তি এবং ক্লান্তি অনুভব হতে পারে।
এই লক্ষণগুলো অন্যান্য রোগের কারণেও হতে পারে, তাই নিশ্চিত হওয়ার জন্য রক্ত পরীক্ষা করানো জরুরি।
ট্রাইগ্লিসারাইড কমানোর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচে দেওয়া হলো:
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন:-
চিনি ও রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট কম খান: মিষ্টি পানীয়, প্যাকেটজাত জুস, সাদা রুটি, পেস্ট্রি, এবং অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া কমান।
স্বাস্থ্যকর চর্বি গ্রহণ: ট্রান্স ফ্যাট এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট (যেমন, লাল মাংস, মাখন) কমিয়ে দিন। এর পরিবর্তে ভালো ফ্যাট, যেমন - অলিভ অয়েল, অ্যাভোকাডো, বাদাম, এবং ফ্যাটি ফিশ (স্যামন, টুনা) খান।
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার: বেশি করে ফল, সবজি, শস্য এবং ডাল খান। ফাইবার ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে সাহায্য করে।
অ্যালকোহল পরিহার: অ্যালকোহল ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়, তাই এটি সীমিত পরিমাণে বা একেবারেই এড়িয়ে চলা উচিত।
জীবনযাত্রার পরিবর্তন:-
নিয়মিত ব্যায়াম: সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি ধরনের ব্যায়াম করুন, যেমন - brisk walking, জগিং, বা সাইক্লিং।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: -ওজন বেশি থাকলে তা ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়াতে পারে। ওজন কমানোর চেষ্টা করুন। ৫-১০% ওজন কমালেই অনেক পার্থক্য দেখা যায়।
ধূমপান ত্যাগ: - ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়াতে সাহায্য করে।
যদি জীবনযাত্রার পরিবর্তন সত্ত্বেও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা না কমে তবে এখানে কিছু সাধারণ প্রাকৃতিক ও হোমিওপ্যাথিক উপাচার সম্পর্কে বলা হলো, যা ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।
প্রাকৃতিক উপাচার:-
অশ্বগন্ধা: এটি মানসিক চাপ কমাতে এবং বিপাক প্রক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে, যা ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে সহায়ক।
মেথি: মেথির বীজ ফাইবারে পরিপূর্ণ এবং কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে সাহায্য করে।
রসুন: রসুন রক্তের চর্বি কমানোর জন্য পরিচিত। প্রতিদিন এক বা দুই কোয়া কাঁচা রসুন খেলে উপকার পেতে পারেন।
দারুচিনি: দারুচিনি রক্তে শর্করার মাত্রা এবং ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
গ্রিন টি: গ্রিন টি-তে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিপাক প্রক্রিয়াকে উন্নত করে।
হোমিওপ্যাথিক উপাচার:-
যা ট্রাইগ্লিসারাইড কমানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে:
Pulsatilla: এই ঔষধটি সাধারণত সেইসব রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, যাদের চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা থাকে এবং যারা সহজেই মোটা হয়ে যান।
Lycopodium: এটি হজম সংক্রান্ত সমস্যা এবং লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
Cholesterinum: এটি কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে ব্যবহৃত হয়।
গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা: যেকোনো প্রাকৃতিক বা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শুরু করার আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা জরুরি। তারা আপনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে সঠিক চিকিৎসা ও ডোজ নির্ধারণ করবেন।
#হার্ট
#ট্রাইগ্লিসারাইড