26/10/2025
আজকাল মেয়েদের মধ্যে অনেক বেশি শোনা যায় যে,
- পিরিয়ড সময় মতো হয় না, মাসের পর মাস লেট হয়।
- অনেক চেষ্টা করেও ওজন কমছেনা, অথবা ওজন বাড়ছেনা।
- হঠাৎ করেই প্রচণ্ড মুড সুইং হয়, রেগে যায় বা কান্না পায়।
- চেহারায় বা শরীরে অবাঞ্ছিত লোম দেখা যাচ্ছে।
- চুল পড়া বেড়ে গেছে।
এগুলোই PCOS (Polycystic O***y Syndrome) এর লক্ষণ। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS) একটি জটিল হরমোনাল ও মেটাবলিক সমস্যা। এটা এখন শুধু ১জন ২জনের সমস্যা না, পুরা একটা প্রজন্ম এর শিকার!
গবেষণা বলছে, গত ৩০ বছরে PCOS-এর হার প্রায় ২ গুণ বেড়েছে!
গ্লোবালি বর্তমানে প্রজননযোগ্য বয়সের প্রায় ৮-১৩% মেয়েদের মধ্যে PCOS ধরা পড়ে।
দক্ষিণ এশিয়ায় এই হার প্রায় ২০% বা তারও বেশি! বিশেষ করে, ১০–২৪ বছরের কিশোরী ও তরুণীদের মধ্যে এর হার বেশি!
এর জন্য দায়ী কি কি?
- অপ্রাকৃতিক জীবনযাপন, অতিরিক্ত মোবাইল-ল্যাপটপ ব্যবহার।
- কাজ, পড়ালেখা, সম্পর্ক, অভাব ইত্যাদি থেকে দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপযুক্ত ও হতাশাগ্রস্ত জীবন কাটানো।
- সারাদিন বসে থাকা, প্রকৃতিতে হাঁটাচলা না করা।
- চিনি ও চিনিযুক্ত খাবার, জাঙ্ক ফুড, প্রসেসড ফুড, রিফাইন্ড ফুড, ট্রান্সফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া।
- পুষ্টিকর খাবার, শাকসবজি, ফলমূল, আঁশযুক্ত খাবারের অভাব।
- ঘুমের ব্যাঘাত ও রাত জাগা থেকে শরীরের সার্কাডিয়ান রিদম নষ্ট হওয়া।
- আধুনিক পরিবেশ দূষণ, প্লাস্টিক, কীটনাশক, কৃত্রিম প্রসাধনী থেকে এন্ডোক্রাইন ডিসরাপ্টশন।
এর ফলে কি হচ্ছে?
- অনিয়মিত বা অনুপস্থিত ডিম্বস্ফুটনের কারণে গর্ভধারণে সমস্যা হওয়া (ইনফার্টিলিটি)।
- টাইপ-২ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে চর্বি বেড়ে যাওয়া, লিভারে চর্বি জমা এবং এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- হরমোনের ওঠানামা, শারীরিক অসৌন্দর্য (অনেক কম বা বেশি ওজন, লোম, ব্রণ ইত্যাদি), প্রজনন সংক্রান্ত দুশ্চিন্তা, ক্রনিক অসুস্থতা সব মিলিয়ে PCOS আক্রান্ত একটি মেয়ের মধ্যে ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি, প্যানিক ডিসঅর্ডার, ইটিং ডিসঅর্ডার এবং মারাত্মক আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা দেয়।
PCOS শুধু মেয়েদের রোগ নয়, এটা একটা সোশ্যাল হেলথ ক্রাইসিস হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ইতোমধ্যেই PCOS-এর ব্যাপকতা একটি বড় ধরনের পাবলিক হেলথ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরবর্তী প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে আমাদের এখনই জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
- লাইফস্টাইল পরিবর্তনই PCOS ম্যানেজমেন্টের প্রথম ও প্রধান স্তম্ভ। বাঁচতে হলে প্রাকৃতিক জীবনধারায় ফিরতে হবে।
- পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস শুরু করা। হোল ফুড, কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যুক্ত খাবার, শাকসবজি, ফল, পর্যাপ্ত প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট খাওয়া; যেমনটি আমাদের পূর্বপুরুষগণ খেয়েছেন।
- চিনি, রিফাইন্ড ফুড, জাঙ্ক ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলা।
- নিয়মিত ব্যায়াম করা। হাঁটা, দৌঁড়ানো, সাইকেল চালানো, সাঁতার ইত্যাদি সহ স্ট্রেংথ ট্রেনিংও গুরুত্বপূর্ণ।
- মেডিটেশন, মাইন্ডফুলনেস, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের চর্চা করা।
- রাতে পর্যাপ্ত ঘুমানো (৭-৮ ঘণ্টা) এবং নিয়মিত ঘুমের সময় মেনে চলা।
- ডিজিটাল টেকনোলজিস ব্যবহার থেকে দূরে থাকা।
- পরিবার ও সমাজের সহানুভূতি, সহযোগিতা এবং পজিটিভ মনোভাব PCOS-এ আক্রান্ত নারীদের ভালো করতে সাহায্য করবে।
অসুস্থতা, ওজন বা চেহারা নিয়ে মন্তব্য না করে বরং প্রাকৃতিক জীবনযাপন ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে উৎসাহ দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
©️