05/10/2025
▪️▪️▪️সিওপিডি রোগীর চিকিৎসা নিয়ে কিছু কথা:
➡️সিওপিডি হচ্ছে সম্মিলিত রোগ, যা ক্রনিক ব্রংকাইটিস, এমফাইসিমা ও ক্রনিক অ্যাজমা—এই তিনটির যেকোনো একটি, দুটি বা তিনটির সহাবস্থান। একসঙ্গে একে সিওপিডি বলে।
বর্তমানে সিওপিডিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৭০ লাখ। এ রোগে বছরে মারা যায় প্রায় ৬৩ হাজার মানুষ। সিওপিডি একটি জটিল ও জীবনব্যাপী সমস্যা। কাজেই এ রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজন ব্যাপক সচেতনতা
✔️প্রথম কথা রোগীকে সিওপিডি রোগ সম্পর্কে , রোগের উপসর্গগুলো সম্পর্কে ধারণা দেয়া এবং ছোট ছোট সমস্যাগুলো মোকাবেলা করতে শেখানো।
✔️ধূমপান বন্ধ ও ধোঁয়ামুক্ত কাজের পরিবেশ তৈরি করা।
✔️নিয়মিত ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন দেয়া।
✔️নিয়মিত ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধের ব্যবহার নিশ্চিত করা
✔️ইনফেকশনের কারণে উপসর্গগুলো বেড়ে গেলে যেমন- কফের পরিমাণ বেড়ে গেলে, কফের রং পরিবর্তন হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।
✔️রোগীর অন্যান্য অসুখ যেমন- ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, উচ্চরক্তচাপ, দুশ্চিন্তা-হতাশা, ঘুমের সমস্যা, অ্যাসিডিটি ইত্যাদির ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া।
✔️ শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম (Breathing exercises):
রোগীকে নিয়মিত পিউরসড লিপ ব্রিদিং (Pursed-lip breathing) এবং ডায়াফ্র্যাগমেটিক ব্রিদিং (Diaphragmatic breathing) শেখানো উচিত। এটি ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ায় ও শ্বাসকষ্ট কমায়।
✔️ শরীরচর্চা ও হালকা ব্যায়াম:
প্রতিদিন ২০–৩০ মিনিট হাঁটা, সিঁড়ি ওঠানামা, বা হালকা ফিজিওথেরাপি রোগীর সহনশক্তি বাড়ায়। তবে অতিরিক্ত ক্লান্তি হলে বিশ্রাম নিতে হবে।
✔️ পুষ্টিকর ও ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস:
কম চর্বিযুক্ত ও উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার (যেমন মাছ, ডিম, ডাল) খাওয়া উচিত।
অতিরিক্ত লবণ, তেল ও মিষ্টিজাত খাবার এড়িয়ে চলা দরকার।
✔️ ওজন নিয়ন্ত্রণ:
অতিরিক্ত ওজন শ্বাস নিতে কষ্ট বাড়ায়, আবার অতিরিক্ত ওজন কমে গেলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই সঠিক ওজন বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
✔️ পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও মানসিক প্রশান্তি:
ঘুমের ঘাটতি, মানসিক চাপ ও উদ্বেগ সিওপিডির উপসর্গ বাড়াতে পারে। মেডিটেশন, হালকা সংগীত, বা শ্বাস প্রশ্বাসের ধ্যান চর্চা মানসিক শান্তি দেয়।
✔️ নিয়মিত ফলো-আপ:
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ফলো-আপে থাকা উচিত, যাতে ওষুধের ডোজ, ইনহেলার বা অক্সিজেন থেরাপি সঠিকভাবে চলছে কি না তা নিশ্চিত করা যায়।
✔️ ইনহেলার বা নেবুলাইজারের সঠিক ব্যবহার শেখানো:
অনেক রোগী ইনহেলার ঠিকভাবে ব্যবহার না করায় ওষুধের কার্যকারিতা কমে যায়। তাই চিকিৎসকের কাছ থেকে সঠিক কৌশল শেখা জরুরি।
✔️ অক্সিজেন থেরাপির সঠিক ব্যবহার:
যাদের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকে, তাদের চিকিৎসকের পরামর্শে নির্দিষ্ট সময় অক্সিজেন ব্যবহার করতে হবে। নিজে থেকে বাড়িয়ে বা কমিয়ে ফেলা বিপজ্জনক হতে পারে।
✔️ পরিবারের সদস্যদের প্রশিক্ষণ:
রোগীর পরিবারকে রোগের প্রকৃতি, জরুরি পরিস্থিতিতে করণীয় ও ইনহেলার ব্যবহারের নিয়ম শেখানো দরকার।
✔️ জরুরি অবস্থায় করণীয় জানা:
যদি রোগীর হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়, ঠোঁট বা আঙুল নীলচে হয়ে যায়, অজ্ঞান বা বিভ্রান্ত লাগে—তাহলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
➡️ফুসফুসের পুনর্বাসন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করানো:
ফুসফুসের পুনর্বাসন কার্যক্রম হল ফুসফুসের কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস, রোগ সম্পর্কে অবহিতকরণ ইত্যাদির সম্মিলিত প্রয়াস, যার মাধ্যমে রোগী তার শারীরিক ও মানসিক উদ্যম ফিরে পায়।
ডা:আবুল ফয়সাল মো: নুরদ্দীন চৌধুরী, এফসিপিএস (মেডিসিন), এফএসিপি( ইউ এস এ), মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ।