11/03/2024
রমজান মাস পবিত্রতা এবং বরকতের মাস।
রমজান মাসে রোজা রাখার কারণে অনেকে দাঁতের সঠিকভাবে যত্ন নিতে পারেন না। ফলাফল- মুখে গন্ধ হয় বা পূর্বের কোন সমস্যা বৃদ্ধি পায় কিংবা রোজারত অবস্থায় ব্যথায় কাতর হয়ে পড়েন। তাই একবার চেকাআপ করিয়ে নিন অথবা আপনার বর্তমান দাঁতের সমস্যা সমাধান করিয়ে নিন।
যোগাযোগ:
টিথ্ কেয়ার সেন্টার
ঈদগাহ, বৌ-বাজার, দুলহান কমিউনিটি সেন্টারের পাশে, ২য় তলা হালিশহর রোড, চট্রগ্রাম।
০১৮৬১৬৩৩৬৪৪
রমজান মাসে চেম্বারের সময়: সকাল ১০টা - বিকাল ৫টা, সন্ধ্যা ৭টা - রাত ১০টা
রোজা রাখা অবস্থায় দন্ত চিকিৎসায় ইসলামের বিধান:
১. লোকাল এ্যানেসথেসিয়া (শরীরের অংশবিশেষ অবশকরণ): লোকাল এ্যানেসথেসিয়া ইনজেকশন দিলে রোজা ভাঙ্গবে না। যেহেতু এটি শক্তিবর্ধক বা পানাহার নয় কিংবা পানাহারের স্থলাভিষিক্তও নয়। লোকাল এ্যানেসথেসিয়া যে স্থানে দেয়া হয় শুধু সে স্থানটিকে অবশ করে; এটি পাকস্থলিতে পৌঁছায় না। সুতরাং কেউ নফল রোজাদার হন কিংবা ফরয রোজাদার হন তিনি যদি এ্যানেসথেসিয়া গ্রহণ করেন তার রোজা শুদ্ধ। তাকে পুনরায় কাযা রোজা রাখতে হবে না। [ফাতাওয়া নুরুন আলাদ-দারব থেকে সংকলিত]
কিন্তু, জেনারেল এ্যানেসথেসিয়া (পুরোপুরি অজ্ঞান করা) প্রয়োগ করা হলে এবং এতে রোগী গোটা দিন সম্পূর্ণ অজ্ঞান থাকলে তার উপর সে দিনের রোজা কাযা পালন করা আবশ্যক হবে।
শাইখ ইবনে উছাইমীন (রহঃ)
রেফারেন্স: ফাতাওয়াস শাইখ বিন বায (১৫/২৫৯)
https://islamqa.info/bn/95062
২. শরীর থেকে রক্ত বের হলে: শরীর থেকে রক্ত বের হলে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না এবং সিরিঞ্জ দিয়ে রক্ত বের করলেও রোজা ভাঙ্গে না। তবে ইচ্ছা করে এ পরিমাণ রক্ত দেওয়া ঠিক নয়, যার কারণে রোজা রাখার শক্তি হারিয়ে ফেলার আশংকা হয় বা রোজা রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। আর দাঁত থেকে রক্ত বের হওয়া রোজা ভঙ্গের কারণ নয়। তবে রোজা অবস্থায় রক্ত বের হলে তা যেন গলায় চলে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা গলায় রক্তের স্বাদ পাওয়া গেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব
রেফারেন্স: খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৩; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৪/৯৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৬
৩. দাঁত স্কেলিং করানো কিংবা ফিলিং করানো কিংবা কোন একটি দাঁত তুলে ফেলা (এক্সট্রাকশন): এই বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে রোজার শুদ্ধতার ওপর কোন (নেতিবাচক) প্রভাব নেই। বরং এগুলো ক্ষমার্হ (ক্ষমাযোগ্য)। তবে সাবধান থাকতে হবে যাতে করে কোন ঔষধ বা রক্ত যেন গিলে না ফেলেন।
শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায (রহঃ)
রেফারেন্স: মাজমুউ ফাতাওয়া ও মাকালাত মুতানাওয়িআ (১৫/২৫৯)
https://islamqa.info/bn/106495
তাহলে সহজে বুঝা যাচ্ছে রোজা রেখে দাঁত উঠানো, স্কেলিং, ফিলিং, রুট ক্যানাল করা যাবে। তবে কেমিক্যাল বা পানি যেন গলার ভিতরে না যায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে রুয়াত ক্যানাল বা ফিলিং করার ক্ষেত্রে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির অংশ রাবার ড্যাম ব্যবহার করলে গলার ভিতরে কেমিক্যাল বা পানি যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। আর দাঁত উঠানো বা স্কেলিং এর ক্ষেত্রে হাই সাকশন (মুখের ভেতর থেকে দ্রুত পানি টেনে নেওয়ার যন্ত্র) ব্যবহার করা শ্রেয়।
অনেকেই রোজা রাখা অবস্থায় চিকিৎসায় ইসলামের নিয়মগুলো সঠিকভাবে জানেন না, ফলে দ্বিধাদন্দ্বে ভুগেন। আসুন এই নিয়মগুলো জেনে নেই:
১. অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে রোজা ভঙ্গ হবেনা। তবে ইচ্ছা করে বমি করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
২. স্যালাইন, গ্লুকোজ বা শক্তিবর্ধক কিছু শিরাপথে নেওয়া যাবে না। এগুলো ছাড়া যেকোনো ওষুধ ইনজেকশন হিসেবে নিলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না।
৩. যেকোনো ধরণের চোখ, নাক ও কানের ড্রপ, ইনহেলার ব্যবহার করা যাবে। ওষুধ মুখে চলে আসলে তা না গিলে কুলি করে বাহিরে ফেলতে হবে। হার্টের রুগীর ব্যথা উঠলে নাইট্রোগ্লিসারিন ট্যাবলেট বা স্প্রে জিহ্বার নিচে ব্যবহার করা যাবে।
৪. রোজা রেখে কেউ বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে, তিনি চাইলেই রোজা ভেঙ্গে ফেলতে পারবেন। এই জন্য তাকে কাফফারা (একটানা ৬০ টি রোজা রাখা) দিতে হবেনা। তবে পরে অবশ্যই রমজান শেষে যেকোনো সময় একটি কাজা রোজা আদায় করে নিতে হবে।
৫. পায়খানার রাস্তায় কিংবা যোনিপথে ট্যাবলেট, সাপোজিটরি ব্যবহার করা যাবে। প্রসাবের রাস্তায় ক্যাথেটার করলে রোযা নষ্ট হয় না। তবে পায়খানার রাস্তায় সাপোজিটরি ব্যবহার একান্ত প্রয়োজন না হলে তা পরিহার করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
৬. ল্যাব পরীক্ষা- নিরীক্ষার জন্য রক্ত দিলে রোজা নষ্ট হবেনা।
৮. সুস্থ সবল ব্যক্তির রক্ত দান করলে রোজা ভঙ্গ হয় না। তবে রক্তদাতা দুর্বল অনুভব করলে রোজা ভেঙ্গে ফেলতে পারেন। এই জন্য কাফফারা দিতে হবে না, পরে শুধু একটি রোজা কাজা করলেই হবে।
৯. ইনসুলিন নিলেও রোজা ভংগ হবেনা। কিন্তু ইনসুলিন নেওয়ার পর যেহেতু খাবার খেতে হয়, তাই রোজা থাকাকালীন অবস্থায় তা নেওয়া যাবে না। তাই সকালের ডোজ হিসেবে ইফতার এবং রাতের ডোজ সেহেরির সময় এডজাস্ট করে নিতে হবে।
১০. অনিচ্ছাকৃতভাবে যেমন আহত হয়ে কিংবা নাক দিয়ে রক্ত পড়লে রোজা নষ্ট হবেনা।
রেফারেন্স:
১. 9th Fiqh Medical Seminar, Morocco. (সারা বিশ্ব থেকে নামকরা আলেমগন ও মুসলিম চিকিৎসকগন মরক্কোর এই সেমিনারে সবাই একমত হয়ে এই বিষয়ে ফতোয়া দেন)
২. প্রশ্নোত্তরে সিয়াম- ডঃ আবু বকর মুহম্মদ জাকারিয়া
৩. Standing committee for issuing fatwa, Kingdom of Saudi Arabia.