04/12/2025
নিপলের চারপাশে সোরিয়াসিস একটি জটিল সমস্যা হতে পারে, কারণ এই এলাকায় ত্বক তুলনামূলকভাবে পাতলা এবং অতিরিক্ত ঘর্ষণ বা কাপড়ের চাপের কারণে এর অবস্থার অবনতি হতে পারে। সোরিয়াসিস এমন একটি ত্বকসংক্রান্ত রোগ, যা সম্পূর্ণভাবে নিরাময়যোগ্য নয়, তবে সঠিক চিকিৎসা ও যত্নের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নিপল এলাকায় সোরিয়াসিসের উন্নতির সম্ভাবনা সাধারণত ভালো, তবে এর জন্য কিছুটা সময় লাগে এবং রোগীভেদে ফলাফল পরিবর্তিত হতে পারে।
সোরিয়াসিসের প্রকৃতি
সোরিয়াসিস কখনোই পুরোপুরি সারতে পারে না, তবে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এটি একটি ইমিউন সিস্টেম–সম্পর্কিত রোগ, যা কখনো কমে, কখনো বেড়ে যেতে পারে। নিপলের মতো জটিল জায়গায় সোরিয়াসিস দ্রুত ভালো হতে না-ও পারে, কারণ এই অঞ্চলের ত্বক পাতলা এবং সেখানে ঘর্ষণ ও আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকে।
সোরিয়াসিসের বাড়ার কারণ
নিপলের চারপাশে সোরিয়াসিসের সমস্যা বৃদ্ধির কিছু বাস্তব কারণ রয়েছে:
ত্বক পাতলা হওয়া: নিপলের ত্বক সাধারণত পাতলা হয়, ফলে স্টেরয়েড বা অন্য কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি কম পরিমাণে ব্যবহার করা যায়।
ঘর্ষণ ও ঘাম: এই অঞ্চলে বারবার ঘর্ষণ হয়, যা ত্বকে ইরিটেশন সৃষ্টি করে এবং সোরিয়াসিসের ফ্লেয়ার-আপ বাড়াতে পারে।
আর্দ্রতা বা ঘাম: ঘাম বা আর্দ্রতা ত্বকের স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে, যা সোরিয়াসিসের অবস্থাকে খারাপ করতে পারে।
হরমোনাল পরিবর্তন: বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রেগন্যান্সি বা বাচ্চা জন্মের পর হরমোনাল পরিবর্তন সোরিয়াসিসের সমস্যা বাড়াতে পারে।
স্ট্রেস এবং অসুস্থতা: স্ট্রেসও সোরিয়াসিসের একটি বড় ট্রিগার হতে পারে, কারণ এটি ত্বকের প্রতিক্রিয়া খারাপ করে দিতে পারে।
সোরিয়াসিসের উন্নতি কিভাবে ঘটানো যায়?
সোরিয়াসিসের উন্নতির জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম ও চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে, যা অনুসরণ করা উচিত:
স্টেরয়েড অয়েন্টমেন্ট: সোরিয়াসিসের চিকিৎসায় মাইল্ড বা মাঝারি স্টেরয়েড অয়েন্টমেন্ট ডাক্তারের পরামর্শে ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে দীর্ঘদিন একটানা ব্যবহার করা যাবে না।
ভিটামিন D অ্যানালগ (Calcipotriol): এটি সোরিয়াসিসের উন্নতির জন্য কার্যকরী হতে পারে, তবে নিয়মিত ব্যবহার প্রয়োজন।
ঘর্ষণ কমানো: টাইট গেঞ্জি বা সিনথেটিক কাপড় পরিধান থেকে বিরত থাকা উচিত। নরম, শ্বাসপ্রশ্বাসযোগ্য কটন কাপড় ব্যবহার করা ভালো।
ত্বক শুষ্ক না রাখা: ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বক হাইড্রেটেড থাকবে এবং ফ্লেয়ার কমবে। গোসলের পর ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগানোর অভ্যাস তৈরি করা উচিত।
ঘাম কমানো: অতিরিক্ত গরমে কাজ করলে জায়গাটি ভিজে যায়, ফলে ফ্লেয়ার বাড়ে। ঘাম কমানোর জন্য ঠাণ্ডা ও শুষ্ক পরিবেশে থাকুন।
স্ট্রেস কন্ট্রোল: সোরিয়াসিসের জন্য স্ট্রেস অনেক বড় ট্রিগার। তাই মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করা উচিত।
ফাঙ্গাল ইনফেকশন প্রতিরোধ: সোরিয়াসিসের উপর ফাঙ্গাল ইনফেকশন বসলে রোগের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে, তাই প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
ব্রেস্টফিডিংয়ে সোরিয়াসিসের সমস্যা
ব্রেস্টফিডিংয়ের সময় কিছু ভুল টেকনিক নিপল এবং অ্যারিওলার ত্বককে বিরক্ত করে, যা সোরিয়াসিস বা একজিমা বাড়াতে পারে। এই সমস্যা সাধারণত চুলকানি, জ্বালা এবং ফাটল সৃষ্টি করে।
কেন চুলকানি হয়?
ব্রেস্টফিডিংয়ের সময় ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে এবং কিছু ভুল টেকনিকের কারণে চুলকানি সৃষ্টি হতে পারে। এর মূল কারণগুলো হলো:
ভুল latch
ঘর্ষণ
দুধ বা লালার শুকিয়ে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া।
কোন কোন ব্রেস্টফিডিং টেকনিকে সমস্যা হতে পারে?
Shallow Latch: বাচ্চা যদি শুধু নিপল ধরে খায়, তাহলে নিপল ও অ্যারিওলার চারপাশের ত্বক বারবার টেনে ধরে, ফলে ফাটল বা চুলকানি সৃষ্টি হতে পারে।
একই পজিশনে দীর্ঘ সময় খাওয়ানো: এক পজিশনে দীর্ঘ সময় খাওয়ালে ঘর্ষণ বাড়ে এবং ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।
বাচ্চার নিচের ঠোঁট ভিতরের দিকে ভাঁজ হয়ে থাকা: এই ভুল টেকনিকটি অনেক মা বুঝতেও পারেন না, কিন্তু এতে ছোট ছোট মাইক্রো-ট্রমা হতে পারে।
বারবার নিপল বের করে দেওয়া: এর ফলে ঘর্ষণ ও শুষ্কতা বৃদ্ধি পায় এবং ত্বক চুলকায়।
দুধ বা লালা শুকিয়ে থাকা: দুধ বা লালা শুকিয়ে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, ফলে ত্বকে বিরক্তিকর চুলকানি সৃষ্টি হতে পারে।
Synthetic ব্রা বা টাইট ব্রা পরিধান: এগুলো ঘাম সৃষ্টি করে এবং নিপলের চারপাশে আর্দ্রতা রেখে চুলকানি বাড়ায়।
সোরিয়াসিস ও ব্রেস্টফিডিংয়ের সমাধান
Latch ঠিক করা: বাচ্চার মুখ যেন অনেকটা বড় করে খোলা থাকে এবং অ্যারিওলার বড় অংশটি বাচ্চার মুখে আসতে হয়।
Feeding শেষে নিপল পরিষ্কার করা: খাওয়ানোর পর নিপল পরিষ্কার করে শুকনো করতে হবে। কটন পেপার দিয়ে হালকা ট্যাপ করে শুকিয়ে নিলেই হবে।
Breast Milk মেখে শুকাতে দেওয়া: খাওয়ানোর পর কয়েক ফোটা দুধ নিপলে মাখিয়ে শুকাতে দেওয়া যেতে পারে। এতে প্রাকৃতিক "healing barrier" তৈরি হয়।
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার: দিনে ২–৩ বার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বক আর্দ্র থাকে এবং ফাটল কমে। বিশেষ করে ল্যানোলিন (Purelan, Lansinoh) সবচেয়ে ভালো।
টাইট ব্রা বাদ দেওয়া: শ্বাসপ্রশ্বাসযোগ্য, শুষ্ক কটন ব্রা ব্যবহার করা উচিত।
রাতে সুরক্ষা দেওয়া: রাতে নিপলে হালকা সুরক্ষা হিসেবে ভ্যাসেলিন ব্যবহার করলে ইরিটেশন কমে।
এইভাবে সঠিক ব্রেস্টফিডিং টেকনিক এবং নিয়মিত যত্নের মাধ্যমে নিপলের চারপাশে সোরিয়াসিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।