02/10/2020
★ যারা সিজারিয়ান ডেলিভারি পরবর্তী বেবি নরমাল ডেলিভারি চেষ্টা করতে চান, তাদের উদ্দেশ্যে সচেতনতা মূলক এই লেখা ★
৬ বছর আগে রোগীর প্রথম ডেলিভারী হয়েছিল সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে। এরপর তার দ্বিতীয় ডেলিভারী হয় নরমাল ডেলিভারীর মাধ্যমে।ডেলিভারীর পর পর তাকে কয়েক ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছিল। এরপর রোগীর কোন জটিলতা না থাকায় তাকে ছুটি দেয়া হয়েছিল।
কিছুদিন পর আবার অতিরিক্ত রক্তক্ষরন নিয়ে রোগী ভর্তি হন আমাদের কোভিড ইউনিট এ। এবার ও তাকে কয়েক ব্যাগ রক্ত, ভালো এন্টিবায়োটিক দেয়া হয় এবং জরায়ুর ভিতর কিছু রয়ে গিয়েছে কি না দেখার জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাফী করা হয়েছিল, সাথে রক্তপাত বন্ধ হওয়ার চিকিৎসা।
আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট নরমাল ছিল।
আমার কোভিড ডিউটির সময় যখন রোগীকে পেলাম তখন দেখলাম রোগীর রক্তপাত খুব একটা নেই, শুধু হিমোগ্লোবিন কম।
আমরা তাই রোগীর অন্যান্য চিকিৎসার পাশাপাশি রক্ত দিয়ে যাচ্ছিলাম।
১৬/০৭/২০ তারিখ ভোর ৪ টায় আমার একজন রেজিস্ট্রার ডিউটি ডাক্তার আমাকে ফোন এ জানালো রোগীর আবার ও প্রচুর রক্তপাত হচ্ছে।
আমি রোগীকে রক্ত এবং আনুষঙ্গিক সব চিকিৎসা দিতে বললাম আর অপারেশনের জন্য রোগীকে রেডি করতে বললাম।
রোগীর পি ভি(যোনিপথ পরীক্ষা) করে দেখলাম জরায়ুর মুখ অনেকটা খোলা এবং রক্তের চাকার সাথে জরায়ুর ছোট টিসু খসে খসে আসছে।
যদিও আমার টিমের তখনকার ডিউটি ডাক্তার রা বলছিলো.....
" ম্যাডাম রোগীর আরেকবার আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে দেখে নিলে হয় না ভিতরে কিছু আছে কি না?"
আমি বললাম না।
আর অপেক্ষা করা যাবে না।
কারণ আমার পূর্ব অভিজ্ঞতায় এর আগে যেগুলো রোগীর আগে সিজারিয়ান এর ইতিহাস ছিল এবং পরে কয়েক এপিসোড ব্লিডিং নিয়ে বারবার ভর্তি হয়েছে সবার অপারেশন করে দেখা গেছে তাদের জরায়ুর সিজারিয়ান এর আগের সেলাই এ ইনফেকশন হয়ে ফেটে গিয়ে জরায়ু খোলা হয়ে আছে!
সেখানেই কোনো না কোনো রক্তনালী ফেটে যেয়ে হয়ে বারবার ব্লিডিং হয়।
অপারেশনের টেবিলে রোগীকে তোলার পর রোগী আমাকে বলতে লাগলো,
"ম্যাডাম আমাকে বাঁচান!
এতদিন ধরে এই ভোগান্তি আমি আর সহ্য করতে পারতেসি না।"
যথারীতি জেনারেল এনেস্থসিয়া দেয়ার পর পি ভি পরীক্ষা করার পর মনে হলো জরায়ুর আগের সেলাই খুলে আছে!
পেট খোলার পর দেখা গেল ব্লাডার(মূত্রথলি) জরায়ুর অনেক উপরে লাগানো!
জরায়ুর পেছনে ইন্টেস্টাইন(নাড়ি ভুড়ির অংশ) ও অনেক অংশ লাগানো।
তখন ও বুঝতে পারছিলাম না সামনে আমার জন্য কী অপেক্ষা করছিল কারণ তখন ও জরায়ুর খোলা অংশ আমার গোচরীভুত হয়নি!
অনেক সাবধানে ও কষ্টে ব্লাডার জরায়ু থেকে আলাদা করার সময়ে দেখলাম জরায়ুর আগের সেলাই এর অংশ ছিন্নভিন্ন অবস্থা এবং ওখানে অনেকটা অংশে টিসু ধরামাত্র খসে খসে আসছে এবং প্রচন্ড ব্লিডিং হচ্ছে!
শেষ পর্যন্ত আমি আর আমার এসিসটেন্ট মিলে ডিসিশন নিলাম জরায়ু কেটে ফেলার।
রোগীর এবং রোগীর স্বামীর কাছ থেকে আগেই আমরা অনুমতি নিয়ে নিয়েছিলাম।
এই জটিল অপারেশন টি নির্বিঘ্নে করে রোগীকে সুস্থভাবে বাড়ি ফেরানো গেছে।
কিন্তু,
অসচেতনতার কারনে বহু মেয়েরাই বাড়িতে কিম্বা অনভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে "সিজারিয়ান পরবর্তী নরমাল ডেলিভারি চেষ্টা" করে, যা তার জীবনের জন্য ঝুকিপূর্ণ হতে পারে... ধারনাই রাখে না!
আশা করি,
মেয়েরা সচেতন হবেন।
শুভকামনা।
(কৃতজ্ঞতাঃ
মেডাম রুশদানা রহমান তমা
সহকারী অধ্যাপক
গাইনী বিভাগ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ)