26/10/2025
আজকে এপয়েন্টমেন্ট ছিল এক ডাক্তার আপুর। যথাসময়ে সেন্টারে উপস্থিত হন। সমস্যা হচ্ছে— অনেক দিন ধরে বিয়ের চেষ্টা করা হচ্ছিল কিন্তু বিয়ের প্রস্তাব তেমন আসে না, যেটা আসে সেটা আগায় না। পাত্র পক্ষ দেখতে আসলে তখনই মুখে ব্রণ ওঠে যায়, নাহলে চেহারা নষ্ট হয়ে যায়, সারাদিন হতাশা কাজ করে। নিজেই বা পাত্রপক্ষের কেউ না করে দেয়া এমন হত।
এক মাস ধরে একটা বিয়ের কথা আগাচ্ছে, কিন্তু বিয়ের কথাবার্তার শুরু থেকে এখন অব্দি এক মাস ধরে প্রচণ্ড শরীর ব্যথা, জয়েন্ট পেইন, মাসল পেইন, পেটে প্রচণ্ড গ্যাসের সমস্যা, চুল পড়া অত্যাধিক। দুই পক্ষের কারো না কারো কোন না কোন ভাবে মনমালিন্য মতামতের সমস্যা। ল্যাব টেস্টেও শরীরে বিভিন্ন সমস্যা ধরা পড়ছে, যা আগে কখনো ছিলো না। একমাস ধরে প্রচন্ড জ্বর কিন্তু থার্মোমিটারে উঠছে না। ব্যাথা ও বিভিন্ন সমস্যার জন্য ওষুধ খেয়ে, চিকিৎসা করেও কোনো রকম ফায়দা হচ্ছে না। এত মনোযোগী হওয়া সত্ত্বেও এই এক মাস ধরে পড়ালেখায়ও মনযোগ দিতে পারছেন না।
এছাড়াও আগেই বিভিন্ন সমস্যা ফেস করছিলেন। স্বপ্নে দেখতেন কেউ ধাওয়া করছে, উপর থেকে নিচে পড়ে যাওয়া, ছোটবেলা থেকে সমুদ্র, মনুতুমি, শত্রু দ্বারা বারবার ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার স্বপ্ন দেখা। কেউ কোন রূপ ধরে শারীরিক সম্পর্ক করতে চায় এরকম স্বপ্ন দেখা। স্বপ্নে খেতে দেখা। এছাড়াও বিভিন্ন শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা ছিল। এই এক মাস ধরে রাতে ঘুম কম। মন সারাদিন ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।
বিস্তারিত সমস্যা শুনে রুকইয়াহ শুরু করলাম। সমস্যা শুনেই মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম যে খবিস (আশিক) জ্বীনের সমস্যা আছে। কিন্তু এক ঘন্টা রুকইয়াহ করার পরও তেমন প্রতিক্রিয়া বা ইফেক্ট দেখা যায় নি। শুধু দুই হাতে শিরশির করলো আর সামান্য মাথা ঘুরানোর মতো লাগলো। এরপর ১৫ মিনিটের মতো রুকইয়াহ করার পর বাম দিকে সামান্য হেলে যাওয়ার মাধ্যমে ইফেক্ট শুরু হয়। একপর্যায়ে প্রচন্ড কান্না শুরু হয় এবং অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন।
পেশেন্টের মা ধরে বসিয়ে রাখার চেষ্টা করলেন। যদিও এমনটি করতে নিষেধ করছিলাম। একটু পরেই আশিক জ্বীন শয়তান এক্টিভ হয় এবং প্রচন্ড কান্না করতে থাকে, আবার একটু পরপর প্রচুর পরিমাণে হাসতে থাকে। জিজ্ঞেস করলাম কেন আসছিস। বলল জানি না আমি কেন আসছি। বললাম তোর খবর হবে, বলতেই কান্না করা শুরু করলো।
তিলাওয়াত শুরু করলাম, এক পর্যায়ে আমাকে বলতে লাগল ওই থাম, থাম বলছি! আমি যাবো না। কিন্তু আমি রুকইয়াহ চালিয়ে যেতে থাকলাম, কিছুক্ষণ পর নিজে থেকেই সব বলা শুরু করলো কেন আসছে, কিভাবে আসছে, কখন আসছে ইত্যাদি।
আরো কিছুক্ষণ রুকইয়াহ করার পর বললাম এবার বল কি বলেছিস এতক্ষণ এবং কেন আসছিস বা কি সমস্যা। তখন সেই জ্বীন শয়তান যা বলল সেগুলো হচ্ছে —
ও ছোট বেলায় বাহিরে একা খেলতেছিল, তখন ওরে দেখে আমার ভালো লাগলো। এরপর থেকে ওরে আমার ভালো লাগে। এরপর ওর পাশে কোনো ছেলেকেই সহ্য করতে পারিনা, যে ছেলেকেই দেখেছি সরাসরি কিছু করি নাই কিন্তু এমনভাবে কিছু করে দিয়েছি যেন কোনো ছেলে ধারেকাছে না আসে। এখন যে বিয়ের কথা চলতেছে সেই ছেলের মায়ের মনে অনেক উল্টাপাল্টা বলছি, অনেক কুমন্ত্রণা দিয়েছি।
আমি চাই ও অনেক পড়াশুনা করুক, ক্যারিয়ার গড়ুক, অনেক বড় ডাক্তার হোক, আয়িও ইসলামের পথে চলি, কিন্তু বাইরের কোনো ছেলের সাথে সম্ভব না, আমি চাই ও ওর মত থাক আর আমি আমার মত থাকি। কিন্তু আমি ওর কোনো কোনো ক্ষতি চাইনা। আমি কি ওর কোনো ক্ষতি করছি? (মানে পড়ালেখা বাধা না দেয়া এবং কোনো ক্ষতি করে নাই বলতে চাচ্ছে) যেকোনো প্রস্তাব আসতো আমি সরিয়ে দিতাম কুমন্ত্রণা দিয়ে। প্রস্তাব আসার পর থেকে ওর শরীরে ব্যথা করছি, মুখের সৌন্দর্য নষ্ট করছি, ওর যাতে বাচ্চা না ওইরকম অসুখ করছি।
বললাম আর কি কি সমস্যা করছিস। বলল, আগে থেকেই অনেক খারাবি করার চেষ্টা করছি কিন্তু জানি না ও কি করছে এবং আল্লাহ ওরে প্রটেক্ট করছে তাই সম্ভব হয়নাই। জিজ্ঞেস করলাম তুই কি মুসলিম, বলল অবশ্যই আমি মুসলিম। বললাম তো মানুষের শরীরে প্রবেশ করা, ক্ষতি করা কি জায়েজ আছে? বলল আমি কি কোনো ক্ষতি করছি?!
যাই হোক আরো কিছু কথা আছে। তারপর নাকে এক ধরনের আতর দিয়ে মাথায় ও ঘাড়ে লম্বা শক্ত কাটি দিয়ে প্রেশার দিলাম, তখন চিৎকার ও কান্নাকাটি শুরু করলো, রক্ত ও কফ বমি করলো। একপর্যায়ে সহ্য করতে না পেরে যেতে রাজি হয় এবং চলে যায়, যাওয়ার সময় রোগীকে মনে মনে বলে যায়— আমি চলে যাচ্ছি তুমি ভালো থেকো, ক্যারিয়ার গড়ো।
আলহামদুলিল্লাহ। যদি সত্যিই গিয়ে থাকে আলহামদুলিল্লাহ, অনেক রোগী এরকম এক সেশনেও সুস্থ হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। তবে জ্বীন শয়তান গুলো যেহেতু প্রচুর মিথ্যা বলে, লুকিয়ে থাকতে পারে, তাই আবারও ফলোয়াপ সেশন করে আরো নিশ্চিত হওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ আজকের কেস স্টাডি থেকে কে কি বুঝতে পারলেন? কমেন্টে জানাবেন। সুতরাং বোঝা উচিত যে, জ্বীন জাদুর বিষয়গুলো অবহেলা করা উচিত নয়, যেকোনো সমস্যায় শুধু ডাক্তারী চিকিৎসা না নিয়ে রুকইয়াহ করে দেখুন প্যারানরমাল সমস্যা আছে কি না। জ্বীন জাদুর সমস্যায় আপনি হাজারো ডাক্তার দেখান না কেন, দেশ থেকে বিদেশেও যদি চিকিৎসা নেন, দামি দামি ওষুধ খান তবুও ভালো হবেনা। শুধু বিয়ে বন্ধ আর বিবাহ বিচ্ছেদ নয় বরং শারীরিক মানসিক যেকোনো রোগব্যাধিই হতে পারে জ্বীন, জাদু ও বদনজরের কারণে।
শুরুতে আলোচনার সময় বলেছিলেন রোগীর মা জানিয়েছিলেন যে তার বড় মেয়েরও জ্বীন জাদুর সমস্যা আছে, হাজব্যান্ডের সাথে মনোমালিন্য। আবার তার বড় বোনেরও (রোগীর আন্টিরও) জ্বীনের সমস্যা আছে। কিছুদিন পরে বড় মেয়েকে নিয়ে আসবেন।
আল্লাহ তাআলা সবাইকে হেফাজত করুন। আমীন।
Sunnah Cure / 01715-212298
বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা