05/11/2025
নভেম্বর মাস - ফুসফুস ক্যান্সার সচেতনতা মাস-----
বর্তমানে বিশ্বে প্রধান ক্যান্সার এই ফুসফুসের ক্যান্সার এবং ক্যান্সার জনিত মৃত্যুর সংখ্যায়ও এটি সবচেয়ে বেশী। সাধারনত বয়স্কদের মধ্যে অর্থাৎ গড়ে ৭০ বৎসর বয়সে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশী হলেও অল্প বয়সেও হতে পারে। উত্তর আমেরিকা এবং পূর্ব ইউরোপ এলাকায় এর প্রাদুর্ভাব বেশী হলেও পৃথিবীর সব অঞ্চলেই এই রোগ দেখা যায়। ধূমপান এই রোগের প্রধান কারণ। যারা নিজেরা ধূমপান করেন এবং যারা ধুমপায়ীর কাছাকাছি থেকে পরোক্ষ ভাবে ধূমপান করেন প্রত্যেকেই ঝুকিতে রয়েছেন। এছাড়া যারা এসবেষ্টস বা এ জাতীয় ডাস্ট তৈরীকারী কল কারখানায় কাজ করেন বা বিভিন্ন খনিতে কাজ করেন বা রেডন নামের ভারি গ্যাসের সংস্পর্শে দীর্ঘ সময় থাকেন বা পরিবেশ দূষনের শিকার তারা প্রত্যেকেই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকিতে রয়েছেন। তবে অন্যান্য ক্যান্সারের মত কোন কারন ছাড়াই এ রোগ হতে পারে।
সাধারণত কাশি , কাশির সাথে রক্ত যাওয়া, শ্বাস কষ্ট বা বুকে ব্যাথা এ রোগের লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া ক্যান্সার শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়লে সেই অঙ্গে লক্ষন দেখা দেয়। যেমন জন্ডিস , বা অল্প আঘাতেই পা বা হাত ভেঙ্গে যেতে পারে; মাথা ব্যাথা, চোখে দেখতে অসুবিধা বা বমি হতে পারে। এছাড়াও শরীরে অনেক রকম লক্ষন দেখা দিতে পারে। যদি জ্বর কাশি বা উপরের কোন সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় তবে সাথে সাথেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এই রোগ নির্নয়ের জন্য কিছু নির্দিষ্ট পরীক্ষা করতে হয়। প্রধানত সিরিঞ্জের সাহায্যে ফুসফুস থেকে টিস্যু নিয়ে পরীক্ষা করে এই ক্যান্সারের বিভিন্ন ধরন নির্নয় করা হয়। বিভিন্ন ধরণের ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষন এবং চিকিৎসার মধ্যেও পার্থক্য রয়েছে। এজন্য এই টিস্যু ডায়াগনোসিস খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয়। এছাড়া রক্ত পরীক্ষা এবং রোগটি শরীরের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েছে কিনা তা দেখার জন্য কিছু পরীক্ষা করতে হয়। এভাবে কিছু পরীক্ষার সাহায্যে নির্নয় করা হয় রোগের বিস্তার বা স্টেজ। অর্থাৎ এটি কি ফুসফুসের মধ্যেই আছে নাকি এর বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে। কেননা এই স্টেজ এর উপর নির্ভর করে চিকিৎসা। একেবারেই যদি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে সে ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সার্জারী করেই এই রোগের চিকিৎসা করা যেতে পারে। এরকম ক্ষেত্রে ৫ বছর বেচে থাকার সম্ভাবনা প্রায় ৭০ শতাংশ। আর যদি আরেকটু বিস্তৃত হয় তাহলে আগে কেমোথেরাপি দিয়ে টিউমারটিকে ছোট করে নিতে হয় এবং তার পড়ে সার্জারী এবং রেডিওথেরাপি দিয়ে চিকিৎসা করতে হয়। এ সব ক্ষেত্রে ৫ বছর বেচে থাকার সম্ভাবনা কমে ৫০ থেকে ৩০ ভাগে নেমে আসে। আর যদি শরীরের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে সেক্ষেত্রে চিকিৎসার পদ্ধতিটাই অন্যরকম হয়ে যায়। তখন ভালোহয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে ১৫ ভাগে নেমে আসে। দেখা যায় এই অবস্থায় রোগী চিকিৎসা নেবার মত সবল থাকেন না। চিকিৎসার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সহ্য করতে না পেরে বরং আরও অসুস্থ হয়ে পরতে পারেন। তাই এই স্টেজে রোগীকে উপশম কারী বা কষ্ট কমানোর জন্য চিকিৎসা দেয়া হয়, যাকে প্যালিয়েটিভ চিকিৎসা বলা হয়। এভাবে চিকিৎসা নেবার পর রোগীকে নিয়ম মত ফলো আপ করতে হবে, যেন রোগটি আবার ফিরে আসার সাথে সাথেই নির্নয় করা যায় এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেয়া যায়। বর্তমানে নতুন নতুন অনেক ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে এবং নিত্য নতুন ওষুধ আসছে ফলে আশা করা যায় অদুর ভবিষ্যতে আমরা এই মারন ব্যাধিকে জয় করতে পারবো। তাই এর আগেই আমাদের অবশ্য সতর্ক থাকতে হবে এবং এই রোগ থেকে রক্ষা পাবার চেষ্টা করতে হবে। আর তার প্রধান উপায় হলো ধুমপান না করা এবং অন্যকে এ থেকে বিরত রাখা। হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী ধুমপান কমিয়ে ফেলার কারনে পশ্চিমা দেশগুলোতে ফুসফুস ক্যান্সার এর প্রকোপ কমতে শুরু করেছে। তাই সবাই মিলে ধূমপান বর্জনের আন্দোলন গড়ে তুলুন। মনে রাখতে হবে ক্যান্সারের চিকিৎসা ব্যায়বহুল এবং দীর্ঘ মেয়াদী। চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়ে গেলেও আবার তা ফিরে আসতে পারে। পরিবার সমাজ এবং দেশের অর্থনীতিতে এর বিরাট রকমের নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। তাই প্রধান কারন ধূমপান বর্জনই সহজ। সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন।