01/11/2025
যাদুর ধরন
ইমাম রাযী (রহ.) যাদুকে সাত ভাগে ভাগ করেছেন। প্রতিটি ভাগের ধরন আলাদা, কিন্তু সবগুলোর উদ্দেশ্য এক — মানুষকে বিভ্রান্ত করা, ক্ষতি করা বা প্রভাবিত করা।
১. তারকা পূজারীদের যাদু
অনেক পুরোনো ধর্মের কিছু লোক গ্রহ-নক্ষত্রকে পূজা করত। তারা বিশ্বাস করত, এসব তারকাই মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করে। কারো সফলতা বা ব্যর্থতা তাদের ইচ্ছাতেই হয়। আল্লাহ তাআলা নবী ইব্রাহীম (আঃ)-কে এই ভুল বিশ্বাস দূর করার জন্য পাঠিয়েছিলেন।
২. ধর্মীয় কপটতা বা ভণ্ডামিভিত্তিক যাদু
কিছু লোক ধর্মের নামে মানুষকে প্রভাবিত করে। তারা এমনভাবে কাজ করে যেন ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক শক্তি তাদের হাতে আছে। এই ধরনের যাদু আসলে মানুষের মনস্তত্ত্ব ব্যবহার করে— মানে ভয়, বিশ্বাস আর কুসংস্কারের সুযোগ নেয়। ইমাম রাযী (রহ.) বলেছেন, এটা কোনো বাস্তব অলৌকিক শক্তি নয়, বরং মানুষের সহজ-সরল স্বভাবের সুযোগ নেওয়া।
৩. জ্বিনের সাহায্যে করা যাদু
জ্বিন দুই ধরনের— মুমিন (ভালো) আর কাফের (অবিশ্বাসী)। যাদুকররা সাধারণত কাফের জ্বিনদের, অর্থাৎ শয়তানদের সাহায্য নেয়। তারা এই শয়তানদের মাধ্যমে মানুষের ক্ষতি করার চেষ্টা করে।
৪. নজর বা বিভ্রমের যাদু
এটা এমন এক যাদু যা মানুষের চোখ ও মনকে প্রতারণা করে। কারও দৃষ্টি আকর্ষণ করে এমনভাবে প্রভাবিত করে যে, সে যা দেখে তা আসলে বাস্তব নয়। অনেক সময় এটা চোখের ধোঁকা বা মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব মাত্র।
৫. চক্রবৎ বা যান্ত্রিক যাদু
এটা মূলত কোনো কৌশল বা প্রযুক্তিগত চালাকি। যেমন, কোনো যন্ত্র এমনভাবে সাজানো হয় যে নির্দিষ্ট সময়ে নিজে থেকেই নড়ে বা শব্দ করে— যেন জাদু হচ্ছে মনে হয়। আসলে এটা বিজ্ঞানভিত্তিক কৌশল, যাদু নয়।
৬. বিশেষ পদার্থ বা ওষুধের মাধ্যমে যাদু
কিছু যাদু খাওয়ার জিনিস, তেল বা পানীয়ের মধ্যে ওষুধ বা রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে করা হয়। ইমাম রাযী (রহ.) বলেছেন, কিছু পদার্থের প্রভাব সত্যিই থাকে— যেমন চুম্বকের টান বা কিছু বিশেষ রাসায়নিক বিক্রিয়া। তাই এসব প্রভাবের মাধ্যমেও কেউ কাউকে প্রভাবিত করতে পারে।
৭. বিশ্বাসকে নিয়ন্ত্রণ করে করা যাদু
এটাই সবচেয়ে সূক্ষ্ম যাদু। এতে যাদুকর মানুষের বিশ্বাস ও চিন্তাকে দখল করে নেয়।
সে দাবি করে— “আমি ইসমে আজম জানি”, “আমার অধীনে জ্বিন কাজ করে”— এমনসব কথা বলে মানুষকে বিশ্বাস করিয়ে ফেলে। যখন কেউ সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করতে পারে না এবং তাকে বিশ্বাস করে ফেলে, তখন সে যাদুকরের প্রভাবের অধীনে চলে যায়। এই অবস্থায় তার বুদ্ধি ও বিবেচনা হারিয়ে যায়।
৮. গুজব ও অপপ্রচারমূলক যাদু
কখনও যাদু কথার মাধ্যমেও ছড়ায়— যেমন কারও সম্পর্কে মিথ্যা কথা, গুজব বা কৌশলে সাজানো গল্প ছড়িয়ে দেওয়া। এতে মানুষের মনে বিভ্রান্তি বা বিরোধ সৃষ্টি হয়। ইমাম ইবনে কাসীর (রহ.) বলেছেন, ইমাম রাযীর উল্লেখিত সব যাদু একভাবে “সুপ্ত প্রভাব” সৃষ্টি করে। কারণ যাদুর আসল অর্থই হলো— এমন প্রভাব যা খুব সূক্ষ্ম, গোপন, কিন্তু কার্যকর।
#ইসলাম #যাদু #সচেতনতা #ইমামরাযী #ইসলামিকজ্ঞান #জাদুবিদ্যা #কুসংস্কার #মুসলিম