24/05/2023
🔰 ACL(Anterior Cruciate Ligament) হাঁটুর জয়েন্টের অন্যতম প্রধান স্টেবিলাইজার লিগামেন্ট। ACL এর আঘাত বা টিয়ার হাঁটুর সবচেয়ে সাধারণ আঘাতগুলির মধ্যে একটি। আর এই আঘাত সবচেয়ে বিপজ্জনক।
🔺🔺 ইঞ্জুরির বিভিন্ন কারন: এটিকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়
১)কনট্যাক্ট ইঞ্জুরি(Contract injury): হাটুতে সরাসরি কোনো আঘাত লাগলে হতে পারে। ৩০% ইঞ্জুরি এইভাবে হয়ে থাকে।
২)ননকন্ট্যাক্ট ইঞ্জুরি(Non-contract injury): ইঞ্জুরির ৭০% এই ধরনের। যেমন: দোড়ানো বা লাফ থেকে অবতরনের সময় হঠাৎ দিক পরিবর্তন করলে,দোড়ানোর সময় হঠাৎ থেমে গেলে ইত্যাদি।
** তাছাড়া যাদের হাঁটুর মাংসপেশী দুর্বল বা অনমনীয়তা, খেলাধুলার সময় সঠিক পরিমাপে জুতা পরিধান না করলে, উঁচু-নীচু জায়গায় মাঠে খেলাধুলা করলে এই ইঞ্জুরি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়
🔷🔷কিছু সাধারন লক্ষন ও উপসরগ:
১)পপিং/স্ন্যাপিং শব্দ: আঘাতের সময় এই শব্দটি প্রায়সই শোনা যায় এবং অনুভুতি হয় মনে হয় হাটু সামনের দিকে বের হয়ে চলে আসছে।
১) ব্যথা: আঘাতের তীব্রতার উপর ভিত্তি করে গুরতর বা মাঝারি ব্যথা হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে দাঁড়াতে বা আক্রন্ত পায়ে চাপ দিতে বা ভর দিতে সমস্যা হয়।
২) ফোলা: আঘাতের কয়েক ঘন্টার মধ্যে ফোলা ভাব হতে পারে। হাটু ভাজ ও সোজা করতে সমস্যা হতে পারে।
৩) হাঁটতে সমস্যা: আপনি সাধারণভাবে হাঁটতে, সিঁড়ি বেয়ে ও অসম মাটিতে হাঁটার জন্য চাপ দিতে অসুবিধার মুখে পড়তে পারেন। কিছু মানুষের মনে হয় হাটু সামনের দিকে সরে আসছে(giving away)এবং জয়েন্টটি একটু বেশিই নড়বড়ে।
রোগীর আঘাতের ধরনের ইতিহাস শোনার পর আমারা কয়েকটা ফিজিক্যালি স্পেশাল টেস্ট করে থাকি যেমন: ল্যাকমান টেস্ট(Lachman test) ও এন্টেরিয়র ড্রয়ার টেস্ট(Anterior drawer test)।
এক্স-রে(X-ray): এসিএলের মতো সফট টিস্যু এক্স-রেতে দেখা যায় না, তবে কোনো হাড়ে আঘাত আছে কিনা তা পরখ করে নিতে প্রাথমিকভাবে করতে হয়।
এমআরআই(MRI): এই ধরনের চোটের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা সর্বোত্তম। কারণ এমআরআই স্ফট টিশু খুব ভালোভাবে দেখতে পাওয়া যায়। কতটুকু টিয়ার হয়েছে স্পষ্টতই ধরা পরে।
🔰ACLইঞ্জুরির প্রকারভেদ ( Types of ACL injury):
গ্রেড-১(Grade-1): এইক্ষেত্রে লিগামেন্ট টান লাগে বা অল্প মচকে যায় কিন্তু চিড়ে যায় না।
গ্রেড-২(Grade-2): এইক্ষেত্রে লিগেমেন্ট অল্প চিড়ে যায় কিন্ত পুরাপুরি চিড়ে যায় না। কতো মিলিমিটার টিয়ার হয়েছে সেটির উপর ভিত্তি করে আরো ভিন্ন ভিন্ন গ্রেডিং করা হয়। যেমন ৫ মিলিমিটার এর নীচে চিড়লে গ্রেড-১
গ্রেড-৩( Grade-3): লিগামেন্ট সম্পুর্ন চিড়ে যায়
📛📛চিকিৎসা:
আপনি কতটা আঘাত পেয়েছেন তার উপর চিকিৎসা নির্ভর করে। গ্রেড-১ গ্রেড-২ ইঞ্জুরির ক্ষেত্রে কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা, এন্টিইনফ্লামারি ড্রাগ এবং ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় সম্পুর্ন ভালো হয়ে যায়। গ্রেড-৩ ক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন হয়।
✅✅ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা:
ইঞ্জুরির অবস্থাকে ৩ টি পযার্য়ে(stage) ভাগ করে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা করা হয়। পর্যায়গুলো হচ্ছে:
১)একুইট স্টেইজ/ প্রোটেকশন স্টেইজ/ইনফ্লামাটরি স্টেইজ(Acute/protection/Inflammatory Phase)
2)সাব-একুইট/কনট্রোল্ড মোশন /রিপেয়ার স্টেইজ(Sub-acute/Controlled motion phase/Repair phase)
3)ক্রনিক/ ম্যাচুরেশন ও রিমোডেলিং স্টেইজ(Chronic stage/Maturation & Remodeling stage)
রোগী কোন স্টেইজে আছে সেইটার উপর ভিত্তি করে নিদিষ্ট প্রটোকলে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা হয়ে থাকে। যেমন Acute stage এ "PRICE" অথবা "PEACE AND LOVE"প্রটোকল অনুসরন করা হয়। তেমনি আমরা বিভিন্ন স্টেজে প্রথমদিকে ওপেন কাইনেমেটিক চেইন থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ , পরবর্তীতে ধীরে ধীরে ক্লোজড কাইনেমেটিক চেইন থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ করানো হয়। তাছাড়া স্ট্রেচিং(stretching), মাল্টিএংগেল স্টেনদেনিং(Multiangle strengthening),Weight bearing & Weight shifting therapeutic exercises, প্রোপায়োচেপশন(Proprioception training )ট্রেইনিং, নিউরোমাস্কোলার থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ (Neuromuscular therapeutic exercise), ফ্লেক্সিবিলিটি(flexibility exercise) করানো হয়। স্পোর্টস পারসনদের ক্ষেত্রে স্পোর্টস রিট্যান ট্রেইনিং করানো হয় যেমন: এজিলিটি ট্রেইনিং,জিগজ্যাগ ট্রেইনিং ইত্যাদি। তাছাড়া কারো বায়োমেকানিক্যাল ত্রুটি থাকে তা ঠিক করে খেলায় নামানো হয়
✅✅আর যাদের অপারেশন এর প্রয়োজন হয় অপারেশন পরবর্তী রোগীকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য বা একজন খেলোয়াড় কে মাঠে ফিরিয়ে আনার জন্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার বিকল্প নেই।
ডা. আইনুর রাজিব, (পিটি)
সিনিয়র ফিজিওথেরাপি অফিসার
ফিজিওথেরাপি ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ
এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল