24/10/2025
আমাদের দেশে এখনো অনেকেরই ধারণা—সূর্যের আলো থেকেই শরীরে ভিটামিন ডি প্রবেশ করে। মা দাদিরা এখনো বলেন, “রোদে দাঁড়াও, ভিটামিন ডি পাবা।” সূর্যের আলো নিজে ভিটামিন ডি দেয় না; বরং শরীরের ভেতরে থাকা নিষ্ক্রিয় ভিটামিন ডি-কে সক্রিয় করতে সাহায্য করে। অর্থাৎ, রোদ ভিটামিন ডি বানায় না, বরং চালু করে।
মজার ব্যাপার সূর্যের দেশ বাংলাদেশেও ভিটামিন ডি ঘাটতি একটি সাধারণ সমস্যা। Bangladesh Journal of Medical Science-এ প্রকাশিত এক গবেষণা অনুযায়ী, শহরাঞ্চলের প্রায় ৬০ শতাংশ নারী ও ৪০ শতাংশ পুরুষের শরীরে ভিটামিন ডি ঘাটতি রয়েছে। এর পেছনে রয়েছে নানা কারণ, যেমন- রোদ এড়িয়ে চলা, শরীর সম্পূর্ণভাবে ঢেকে রাখার পোশাক পরা, ইনডোর জীবনযাপন, এবং মাছ বা ডিমের মতো ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ খাবারের অভাব। এমনকি শহরের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও এই ঘাটতি বাড়ছে, কারণ তারা দিনের বেশিরভাগ সময় ঘরে বা ক্লাসে কাটায়।
আমাদের ত্বকের নিচে থাকে 7-dehydrocholesterol, যা সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট-বি (UVB) রশ্মির সংস্পর্শে এসে প্রি-ভিটামিন ডি৩ (Pre-vitamin D3) এ রূপ নেয়। পরবর্তীতে এটি লিভার ও কিডনিতে রূপান্তরিত হয়ে সক্রিয় ভিটামিন ডি বা ক্যালসিট্রিয়ল (Calcitriol) তৈরি করে। এই সক্রিয় রূপই আমাদের শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শোষণে সাহায্য করে, হাড় মজবুত রাখে এবং ইমিউন সিস্টেমের ভারসাম্য বজায় রাখে।
পুষ্টির দিক থেকে ভিটামিন ডি মূলত চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন, যা কিছু খাবারে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়। যেমন চর্বিযুক্ত মাছ (ইলিশ, টুনা, সার্ডিন), ডিমের কুসুম, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, এবং সূর্যালোকে শুকানো মাশরুম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে অন্তত তিন দিন সকালে ১৫–২০ মিনিট রোদে থাকা এবং মাছ ও ডিম নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস যাদের আছে, তাদের মধ্যে ভিটামিন ডি ঘাটতির হার ৩০ শতাংশ কম। অর্থাৎ, খাদ্যাভ্যাস ও রোদে থাকার নিয়মিততা এই ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তবে ভিটামিন ডি শুধু হাড়ের জন্য নয় মানসিক ও ইমিউন স্বাস্থ্যের জন্যও অপরিহার্য। Frontiers in Nutrition (২০২২)-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ডি ঘাটতি থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে ডিপ্রেশন, ক্লান্তি, এবং মনোযোগের সমস্যা বেশি দেখা যায়। অন্যদিকে Journal of Steroid Biochemistry and Molecular Biology-এর তথ্য অনুযায়ী, পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি থাকলে সংক্রমণ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং ভাইরাল রোগের ঝুঁকি কমে। এই কারণেই বিজ্ঞানীরা একে “ইমিউন-মডুলেটর” পুষ্টি উপাদান বলছেন।
অতএব, বাংলাদেশে ভিটামিন ডি ঘাটতি রোধে দরকার সচেতনতা ও ভারসাম্যপূর্ণ অভ্যাস। প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনের মধ্যেও সপ্তাহে অন্তত তিন দিন সকালে কিছুটা সময় সূর্যের আলোয় থাকা, ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরি। মনে রাখতে হবে, সূর্যের আলো ভিটামিন ডি দেয় না বরং আমাদের শরীরের ভেতর থাকা ভিটামিন ডি-কে সক্রিয় করে তোলে।
[ 𝙏𝙝𝙞𝙨 𝙘𝙤𝙣𝙩𝙚𝙣𝙩 𝙞𝙨 𝙖 𝙥𝙪𝙗𝙡𝙞𝙘𝙖𝙩𝙞𝙤𝙣 𝙤𝙛 𝙩𝙝𝙚 𝙥𝙧𝙤𝙟𝙚𝙘𝙩 𝙉𝙪𝙩𝙧𝙞𝙈𝙚𝙙𝙞𝙖. 𝙏𝙝𝙚 𝙥𝙧𝙤𝙟𝙚𝙘𝙩 𝙞𝙨 𝙡𝙚𝙙 𝙗𝙮 𝙉𝙪𝙩𝙧𝙞𝙩𝙞𝙤𝙣 𝙁𝙤𝙧 𝘾𝙝𝙖𝙣𝙜𝙚 𝙬𝙞𝙩𝙝 𝙨𝙪𝙥𝙥𝙤𝙧𝙩 𝙛𝙧𝙤𝙢 𝙩𝙝𝙚 𝙎𝙐𝙉 𝙔𝙤𝙪𝙩𝙝 𝙉𝙚𝙩𝙬𝙤𝙧𝙠 𝘽𝙖𝙣𝙜𝙡𝙖𝙙𝙚𝙨𝙝 𝙖𝙣𝙙 𝙂𝙡𝙤𝙗𝙖𝙡 𝘼𝙡𝙡𝙞𝙖𝙣𝙘𝙚 𝙛𝙤𝙧 𝙄𝙢𝙥𝙧𝙤𝙫𝙚𝙙 𝙉𝙪𝙩𝙧𝙞𝙩𝙞𝙤𝙣. ]