27/10/2025
বিএমইউ-তে ইভিডেন্স বেইসড প্রোটোকলস বিষয়ক কর্মশালা ও হার্ভাড মেডিক্যাল স্কুলের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর
প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসার চর্চা প্রেসক্রিপশনের ভিন্নতা ও চিকিৎসা ব্যয় অবশ্যই কমাবে — অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলম
‘ডেভেলপমেন্ট অফ ইভিডেন্স বেইসড প্রোটোকলস ফর গাইনোকোলজিক্যাল ক্যান্সার ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক এক কর্মশালা আজ সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ)-এর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের লেকচার হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএমইউ-এর সম্মানিত প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মোঃ আবুল কালাম আজাদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএমইউ-এর সম্মানিত কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, বিশিষ্ট গাইনোকোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. সাবেরা খাতুন।
গুরুত্বপূর্ণ এই কর্মশালায় বিজ্ঞ বক্তা হিসেবে —
‘ইভিডেন্স বেইসড মেডিসিন: ট্রান্সফরমিং এডুকেশন, প্র্যাকটিস অ্যান্ড পলিসি’ বিষয়ে বিএমইউ-এর মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলম,
‘ইমপ্লিকেশনস অফ ইভিডেন্স বেইসড মেডিসিন ইন গাইনোকোলজিক্যাল ক্যান্সার রিসার্চ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট’ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভাড মেডিক্যাল স্কুলের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. অ্যান ক্যাথরিন গুডম্যান,
‘ইভিডেন্স বেইসড অনকোলজি ইন অ্যাডজুভান্ট ট্রিটমেন্ট অফ গাইনোকোলজিক্যাল ক্যান্সারস: ট্রান্সলেটিং ট্রায়ালস ইনটু প্র্যাকটিস’ বিষয়ে বিএমইউ-এর ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোঃ আকরাম হোসেন,
এবং ‘ওভারভিউ অন ইভিডেন্স বেইসড ম্যানেজমেন্ট প্রোটোকল ডেভেলপমেন্ট’ বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক (ব্রিগেডিয়ার জেনারেল) ডা. মোঃ আহসান হাবিব বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
বিএমইউ-এর গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি বিভাগ, যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের হার্ভাড মেডিক্যাল স্কুল এবং ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ও সভাপতিত্ব করেন বিএমইউ-এর গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন একই বিভাগের অধ্যাপক ডা. ফৌজিয়া হোসেন।
কর্মশালায় ইভিডেন্স বেইসড মেডিসিন প্র্যাকটিস কার্যক্রম এগিয়ে নিতে বিএমইউ-এর গাইনী অনকোলজি বিভাগ ও ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগ এবং হার্ভাড মেডিক্যাল স্কুল ও ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়।
এই চুক্তির লক্ষ্য হলো গাইনী ক্যান্সার চিকিৎসা উন্নয়ন, চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের বিনিময় কর্মসূচি, প্রশিক্ষণ এবং যৌথ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা। এই সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশে গাইনী ক্যান্সার চিকিৎসা ও প্রিসিশন অনকোলজির ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
কর্মশালায় জানানো হয়, ‘স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত ক্যান্সার ব্যবস্থাপনার জন্য প্রমাণভিত্তিক প্রোটোকলের উন্নয়ন’ শীর্ষক এই কর্মশালায় বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ও পেশাদার সহযোগিতার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত ক্যান্সারে স্বাস্থ্যসেবাকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে আয়োজিত এই কর্মশালা প্রমাণভিত্তিক ব্যবস্থাপনা প্রোটোকল চূড়ান্ত করাসহ ক্যান্সার রোগীদের যত্ন ও ব্যবস্থাপনা বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএমইউ-এর সম্মানিত প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন,
“বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞানের এই যুগে প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসাসেবার গুরুত্ব অপরিসীম। এই কার্যক্রমকে অবশ্যই এগিয়ে নিতে হবে। যেখানে একজন চিকিৎসক গবেষণালব্ধ তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে প্রত্যেক রোগীর জন্য সর্বোত্তম চিকিৎসা নির্ধারণ করবেন।”
তিনি আরও বলেন,
“বর্তমান চিকিৎসাবিজ্ঞানের যুগে প্রিসিশন মেডিসিন একটি আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি, যেখানে একজন রোগীর জিনগত বৈশিষ্ট্য, পরিবেশ এবং জীবনযাত্রার ভিন্নতার উপর ভিত্তি করে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। এর মূল লক্ষ্য হলো প্রতিটি রোগীর জন্য সঠিক ডোজ, সঠিক সময়ে দেওয়া এবং সঠিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা—বিশেষ করে ক্যান্সার চিকিৎসায় এটি অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি।”
বিএমইউ-এর মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মোঃ শাহিনুল আলম তার উপস্থাপিত প্রবন্ধে উল্লেখ করেন,
“প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসাসেবা চর্চা প্রেসক্রিপশনের ভিন্নতা ও চিকিৎসা ব্যয় অবশ্যই কমাবে। গবেষণার প্রমাণ, বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতা ও রোগীর অধিকার বিবেচনায় যথার্থ চিকিৎসা প্রদান করা গেলে অপ্রয়োজনীয় ব্যয়, প্রেসক্রিপশনের ভিন্নতা এমনকি মৃত্যুহারও কমানো সম্ভব।”
তিনি আরও জানান,
“বাংলাদেশ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি ২০২৫ সালের জন্য World Evidence-Based Healthcare Day কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে Evidence Ambassador হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এটি বিএমইউ-এর গবেষণা, চিকিৎসা উৎকর্ষতা ও তথ্যনির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণে অবিচল অঙ্গীকারের প্রতিফলন।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সম্মানিত কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার বলেন,
“ইভিডেন্স বেইসড মেডিসিন প্র্যাকটিস বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ও প্রমাণিত একটি পদ্ধতি, যা সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, যথার্থ ঝুঁকি মূল্যায়ন এবং চিকিৎসাসেবায় গুণগত মান নিশ্চিত করতে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে।”
বিশেষ অতিথি অধ্যাপক ডা. সাবেরা খাতুন বলেন,
“ইভিডেন্স বেইসড মেডিসিন বিষয়ক কর্মশালা দেশে অনেক আগে থেকেই শুরু করার প্রয়োজন ছিল। এই ধরণের কর্মশালা সকল মেডিক্যাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভাগে হওয়া উচিত। ইভিডেন্স বেইসড মেডিসিন প্র্যাকটিস ও এর উন্নয়ন সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবার অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য।”
ডা. নূর-ই ফেরদৌস ও ডা. ফারজানা শারমিন-এর সার্বিক সহযোগিতায় আয়োজিত এই কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন ডা. মেহের নিগার ও ডা. মওয়া পারভিন।