05/10/2025
🍼 বুকের দুধ বাড়ানোর কিছু প্রাকৃতিক এবং বিজ্ঞানভিত্তিক টিপস:
১. বাচ্চাকে ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়ানো
বাচ্চাকে যত বেশি স্তন্যপান করানো যাবে, তত বেশি দুধ তৈরি হবে। এটা একদম প্রাকৃতিক নিয়ম—supply and demand। প্রতি ১-২ ঘণ্টা পর পর বাচ্চাকে ফিড করানো চেষ্টা করুন, এমনকি রাতেও।
২. একটি স্তন পুরোপুরি খালি হওয়ার পর অপরটি দিন।
অনেক সময় দেখা যায়, মা দুই মিনিট এক স্তনে, দুই মিনিট অন্য স্তনে দিচ্ছেন। এতে দুধ ভালোভাবে বেরোয় না। একদিকে দুধ পুরোপুরি খালি হলে শরীর সিগন্যাল পায় – "আরও দুধ দরকার"।
৩. স্কিন-টু-স্কিন কন্টাক্ট
মায়ের সাথে বাচ্চার ত্বকের সংস্পর্শ দুধ উৎপাদনে সবচেয়ে সাহায্য করে। মা যখন দুধ খাওয়ানোর প্রত্যাশা করেন এবং শিশুকে যখন দুধ খাওয়ান তখন অক্সিটোসিন কাজ শুরু করে। এই প্রতিচ্ছবি মায়ের অনুভূতি এবং অনুভূতির সাথে সম্পর্কিত হয়ে ওঠে, যেমন শিশুকে স্পর্শ করা, ঘ্রাণ নেওয়া, শিশুকে দেখা, তার কান্না শোনা, বা তার সম্পর্কে ভালোবাসার সাথে চিন্তা করেন তা মায়ের শরীরে অক্সিটোসিন তৈরিতে সহায়তা করে এবং ফলে দুধ প্রবাহিত হয়।অক্সিটোসিনের পাশাপাশিও প্রোল্যাকটিন হরমোন নিঃসরণও বুকের দুধ তৈরির জন্য খুব জরুরি।প্রোলাক্টিন হরমোন পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় এবং এটি স্তনের টিস্যুর বৃদ্ধি ও বিকাশে সাহায্য করে, যা দুধ উৎপাদনের মূল প্রক্রিয়া।প্রোলাক্টিন স্তনের অ্যালভিওলিকে দুধ তৈরি করার জন্য উদ্দীপিত করে, যা স্তন্যপানের মাধ্যমে শিশুকে দুধ সরবরাহ করে। যখন একটি শিশু যখন স্তন্যপান করে, তখন এটি মায়ের মস্তিষ্কে প্রোলাক্টিন এবং অক্সিটোসিন নিঃসরণকে উৎসাহিত করে।ফলে দুধ তৈরি হয়।
৪. পানি এবং সঠিক পুষ্টি গ্রহণ
অনেক মা ভুলে যান যে, পর্যাপ্ত পানি না খেলে শরীর দুধ তৈরি করতে পারবে না। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। পাশাপাশি কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, সবজি—সবই খেতে হবে।
বিশেষ করে –
ওটস (চিড়া, দুধে রান্না করা)
মেথি দানা (fenugreek)
কালো জিরা
রসুন
এগুলো অনেক মায়ের দুধ বাড়াতে সাহায্য করে বলে গবেষণায় দেখা গেছে।
৫. স্ট্রেস কমান এবং পর্যাপ্ত ঘুম
মায়ের টেনশন সরাসরি দুধ উৎপাদনে প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত চাপ, উদ্বেগ, ঘুমের ঘাটতি—এইগুলো অক্সিটোসিন হরমোন কমিয়ে দেয়, যেটা দুধ "লেট ডাউন" বা বের করতে সাহায্য করে। একটু রিল্যাক্স, হালকা গান, বা শুধু নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলেও কাজ হয়।
৬. দুধ বের করে নেওয়া (পাম্পিং)
বাচ্চা না খেলেও নির্দিষ্ট সময় পর পর ব্রেস্ট পাম্প ব্যবহার করলে শরীর ভাববে বাচ্চা খেলেছে। এতে দুধ তৈরি অব্যাহত থাকে। দিন-রাতে অন্তত ৮-১০ বার পাম্প করার চেষ্টা করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
৭. কিছু নির্দিষ্ট হারবাল সাপ্লিমেন্ট
মেথি (Fenugreek), Blessed thistle, Fennel – এগুলোকে "galactagogues" বলা হয়, অর্থাৎ দুধ উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক কিছু ভেষজ উপাদান। তবে এগুলো নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
৮. ধূমপান বা ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন
ধূমপান বা অতিরিক্ত চা-কফি দুধ উৎপাদনে বাধা দিতে পারে। এ ছাড়া বাচ্চার শরীরেও খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
⚠️ কখন ডাক্তার দেখাতে হবে?
বাচ্চা বারবার খাচ্ছে কিন্তু ওজন বাড়ছে না
মা'র স্তনে ব্যথা বা ফাটল
দুধ খুব কম বা একেবারে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে
এ রকম কোনো সমস্যা হলে দেরি না করে lactation consultant বা অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
❤️ শেষ কথা:
দুধ কম হলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এটা অনেক মায়েরই হয়। কিন্তু নিয়মিত চেষ্টা, ঠিকমতো খাওয়ানো, নিজের শরীরের যত্ন নেওয়া—এসব করলে ধীরে ধীরে বুকের দুধ বাড়ে। আর নিজের উপর বিশ্বাস রাখাটাও খুব জরুরি।