08/08/2018
মেটেরিয়া মেডিকা আয়ত্বের কৌশল (পর্ব-১):
সুস্থদেহে ঔষধ পরীক্ষা করে প্রাপ্ত লক্ষণরাজিকে যে পুস্তকে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে ,সে পুস্তককে মেটেরিয়া মেডিকা (মেডিসিনের বই) বলা হয়।
মেটিরিয়া মেডিকাতে অজস্র ঔষধ রয়েছে,যেগুলোর বর্ণনায় রয়েছে শ' থেকে শুরু করে হাজারো লক্ষণের সন্নিবেশ।হোমিওপ্যাথির ঔষধ ভান্ডারে প্রতিটি ঔষধের অজস্র লক্ষণ আয়ত্বের মাধ্যমে ঔষধ চরিত্র আয়ত্ব করতে গিয়ে নবীন শিক্ষণবীশরা অথৈ সাগরে হাবুডুবু খায়।আমি এমনও দেখেছি যে,অনেক শিক্ষার্থী হোমিওপ্যাথি পড়াই ছেড়ে দিয়েছে।অনেক শিক্ষার্থী আবার ঔষধের লক্ষণ মুখস্থ করতে গিয়ে একসময় ত্যাক্তবিরক্ত হয়ে হাল ছেড়ে দিয়ে দিয়ে থাকে।এক্ষেত্রে মেটেরিয়া মেডিকা আয়ত্ব সম্পর্কিত ডা.কেন্টের একটি উক্তি প্রণিধানযোগ্য।"It not can memorized but can understand"-অর্থাত্ এটি মুখস্থ করার বিষয় নয় ,উপলব্ধির বিষয়।মেটিরিয়া মেডিকা আয়ত্বের একটি কৌশল হল-"ঔষধের সোর্সের সাথে ঔষধের প্রুভিঙ সিম্পটনের সাদৃশ্য মিলিয়ে ঔষধের লক্ষণ মনে রাখা"।
আসুন এবার দেখে নিই ঔষধের সাথে মিলিয়ে কিভাবে ঔষধের লক্ষণ আয়ত্ব করব।
শুরু করছি Abrotenum (এব্রোটেনাম) দিয়ে।
লতানো উদ্ভিদ থেকে এ ঔষধটি তৈরি করা হয়।এ ঔষধের রোগীদের পা দু'টো অনেক চিকন (যেন লতার মত)।
Cocculus Indicus (ককুলাস ইন্ডিকাস) :
এটি উদ্ভিজ্জ ঔষধ।এ উদ্ভিদটিকে খাদ্যের সাথে মিশিয়ে জেলেরা নদীতে নিক্ষেপ করে,যা খেয়ে মাছ আর নড়াচড়া করতে পারে না ,প্যারালাইজড হয়ে যায়।সাদৃশ্যপৃর্ণ লক্ষণ হল : পক্ষাঘাত উত্পন্ন হওয়া অর্থাত্ ঔষধটি প্রুভিঙের সময় প্রুভারদের পক্ষাঘাত উত্পন্ন করেছিল।তাই এই ঔষধ দিয়ে আনুষাঙ্গিক লক্ষণ মিলিয়ে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত রোগীদের চিকিত্সা করা হয়।
Cedron (সিড্রণ) :
ডা: হেলবার্টকে একটি কোরাল সাপে কামড় দিয়েছিল।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তাঁর হার্ট ও গলার মধ্যে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয়।তাঁর কাঁধে ঝুলানো ব্যাগের মধ্যে সিড্রণ ছিল ; তিনি মটরদানার সমপরিমাণ সিড্রণ চিবান এবং ক্ষতে বাহ্যিক প্রয়োগ করেন। পরবর্তী সিকি ঘন্টার মধ্যে সামান্য শূল ব্যথা অনুভব করেন।যা সামান্য অংশ খাওয়ার পর সম্পূর্ণ ব্যথা চলে যায়।
সাদৃশ্যপূর্ণ ব্যাপার-
ক্লিনিক্যালক্ষেত্রে সর্পদংশনে এ ঔষধটি প্রথমশ্রেণির অত্যন্ত কার্যকরী ঔষধ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
Rhus Tox (রাসটক্স) :
রাসটক্স বা ছাই বিষ উদ্ভিদের পাতা থেকে রাত্রিকালে একধরণের Poisoness V***r (বিষাক্ত বাষ্প)-নির্গত হয়।আর রাতে কেউ যদি ঐ গাছের নিকটবর্তী হয় তাহলে বিষাক্ত বাষ্প কর্তৃক আক্রান্ত হয়।তাই Rhus Tox-এর রোগীদের ক্ষেত্রেও রাত্রিকালে বৃদ্ধি (Night Aggravation)-দেখতে পাওয়া যায়।
Thuja (থুজা):
একজন ধর্মযাজক হ্যানিম্যানের নিকট চিকিত্সার জন্য আসলেন।উক্ত যাজকের সমস্ত লক্ষণ ছিল গণোরিয়া রোগীর ন্যায়।ডাক্তার হ্যানিম্যান যাজকের এ রোগ সৃষ্টির পিছনে কোন উত্তেজক কারণ বা যৌনমিলনের ইতিহাস পেলেননা।একসময় তিনি জানতে পারলেন থুজা গাছের অংশবিশেষ চিবানোর পরবর্তীতে ঐ যাজক সাহেবের গণোরিয়ার ন্যায় লক্ষণ দেখা দিয়েছে।আর বর্তমানে থুজা ঔষধটি গণোরিয়ার ন্যায় লক্ষণযুক্ত রোগীদের চিকিত্সায় ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
Coca (কোকা) :
কোকা উদ্ভিদটি পর্বতের উপর জন্মায়।পর্বত আরোহন করে উক্ত উদ্ভিদটি সংগ্রহ করতে গেলে আপনি নিস্তেজ হয়ে পড়বেন ,আপনার বুক ধড়ফড় করতে থাকবে ও হাপাতে শুরু করে দিবেন।দেখা গেছে, হাপানীর মত অবস্থায় তথা শ্বাসকষ্ট ও বুক ধড়ফড়ানিতে এ ঔষধটি অত্যন্ত কার্যকরী।
Conium (কোনিয়াম) :
প্রসঙ্গ : যেভাবে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিল কোনিয়াম।
------পৃথিবীর অন্যতম দার্শনিক সক্রেটিসকে হেমলক বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছিল।সক্রেটিসকে বন্দী করার পর জল্লাদ পেয়ালায় করে তাঁর জন্য হেমলক বিষ নিয়ে এলো; বললো-" পান করুন।"সক্রেটিস নির্ভীক চিত্তে পেয়ালাটি নিলেন এবং শান্ত কন্ঠে বললেন,"আমি কি এটা একেবারে গিলে খাব?নাকি মদ্যপানের মত ধীরে ধীরে চুমুক দিয়ে খাব?"জল্লাদ উত্তর দিল-"আপনার যেভাবে খুশি আপনি খাবেন,কিন্তু অবশ্যই আমাদের দেয়া পরিমাণমত খাবেন।"-সক্রেটিস ধীরে ধীরে চুমুক দিয়ে "হেমলক"-পান করতে লাগলেন।প্রথম চুমুকের পড়েই তাঁর শিষ্যরা ডুকরে কেঁদে উঠলেন।বিষপান শেষ হলে জল্লাদ সক্রেটিসকে হাঁটার নির্দেশ দিলো;যাতে বিষ ক্রিয়াটা দ্রুত হয়।সক্রেটিস কিছুক্ষণ হাটার পর ডানে বামে টাল খেতে শুরু করলেন;পাশ্ববর্র্তী শিষ্যেরা তাকে ধরে ফেললেন।জল্লাদ এগিয়ে এসে সক্রেটিসের পায়ের পাতায় আঘাত করে জিজ্ঞাসা করল,"কিছু অনুভব করতে পারছেন কি?"সক্রেটিস জবাব দিলেন -"না।"জল্লাদ তার উরুতে আঘাত করে জিজ্ঞেস করলো,"এখানে কিছু অনুভব করতে পারছেন কি?"-তিনি বললেন বিষ যখন আমার হৃদপিন্ড আক্রমণ করবে কেবল তখনই আমি মৃতবরণ করব।"
সক্রেটিস পড়ে যাচ্ছেন দেখে এক শিষ্য তাঁকে ধীরে ধীরে শুইয়ে দিলেন,তাঁর মাথা তুলে নিলেন নিজের কোলে।সক্রেটিস ধীরে ধীরে বললেন-"ক্রিটো-,কুলোপিয়াস নামের এক ব্যক্তি আমার কাছে একটি মুরগির দাম পাবে,তুমি তাকে দামটা দিয়ে দিও।"ক্রিটো জিজ্ঞেস করলেন,"আমার প্রতি আমার আর কোন নির্দেশ আছে কি?"
ক্রিটো তার জবাব পাননি;সক্রেটিস তার আগেই শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেছেন।
ঘটনাটি নিষ্ঠুর এবং দুঃখজনক হলেও কিন্তু হেমলক (কোনিয়াম ম্যাকুলেটাম) বিষের একটি পরীক্ষা বা Proving -হয়ে গেছে।
যে গল্পটা আমি আপনাদের বললাম,এখান থেকে কোনিয়াম ম্যাকুলেটামের খুব গুরুত্বপূর্ণ দুটি লক্ষণ পাই।সে দু'টি হল-
১.আক্রমণের গতি নীচ থেকে উপরের দিকে।এবং ২.সর্বাঙ্গ পক্ষাঘাতগ্রস্থ হলেও রোগীর বোধশক্তি,চিন্তাশক্তি খুব সুন্দর এবং সক্রিয় থাকে।
ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এই দু'টি লক্ষণ যে কত মূল্যবান তা কেবল জানা চিকিত্সকরাই জানেন।অথচ বেশ কিছু ম্যাটেরিয়া মেডিকা খুঁজে প্রথম লক্ষণটি পেলেও আমি দ্বিতীয় লক্ষণটি খুঁজে পাইনি।
Drosera (ড্রসেরা) :
ড্রসেরা উদ্ভিদটির বৈশিষ্ট্যের সাথে প্রুভিঙ এ প্রাপ্ত লক্ষণের সাদৃশ্যসমূহ:
ড্রসেরা উদ্ভিদ রাজ্য হতে প্রাপ্ত একটি এন্টিটিউবারকুলার ঔষধ।ডা.হ্যানিম্যান এই ঔষধটির বিশেষ প্রশংসা করেছেন।
ড্রসেরার দু'টো বৈশিষ্ট্য দিয়ে আজ আমি ড্রসেরার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ তুলে ধরছি।
বৈশিষ্ট্য-১: ড্রসেরা পতঙ্গঙূক তথা মাংসাশী উদ্ভিদ।কীট পতঙ্গরা এই উদ্ভিদটির ফাঁদে আটকা পড়ে।
ড্রসেরা উদ্ভিটটিকে যখন প্রভিঙ করা হল তখন দেখা গেল প্রুভারদের মধ্যেও ফাঁদে আটকে যাওয়ার একটি অনুভূতি কাজ করছে।এর প্রতিক্রিয়ায় প্রুভাররা আগ্রাসী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে পতঙ্গের ন্যায় ফাঁদ থেকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।ফাঁদে আটকে গেলে আরেকটি অনূভূতি সৃষ্টি হয় সেটি হল- সে প্রতারিত হয়েছে।এটা এক ধরনের Delusion বা ভ্রান্তি।
বৈশিষ্ট্য-২: ডা. টেস্টির মতে,ড্রসেরা উদ্ভিদটি আর্দ্র বৃক্ষহীন তৃণভূমিতে (Prairies)- জলাভূমির পাশে জন্মে এবং তৃণভোজী প্রাণীরা একে এড়িয়ে চলে।ডা. Barrich- বলেন, যদি কোন ভেড়া এটি খায়,তখন তারা মারাত্নক কাশিতে আক্রান্ত হয়। এবং কাশতে কাশতে মারা যায়।- এ উদ্ভিদ থেকে প্রভিঙকৃত ঔষধটির মধ্যেও প্রচন্ড কাশির লক্ষণ দেখা গিয়েছে।
কুকুরের ডাকের মতো শব্দ করে ঘনঘন কাশি।প্রতিবার কাশিতে সামান্য কফ উঠে।কাশতে কাশতে বমি।ড্রসেরার কাশির পৌণঃপৌণিকতা ও তীব্রতা দেখে ডা. ফাটক এর কাশিকে- "হয়রানিমূলক কাশি"-বলে উল্লেখ করেছেন।
মনে রাখার সুবিধার্থে উপরোক্ত কথাগুলো আবারও ফ্লাসব্যাক করছি-
১.ড্রসেরার ফাঁদে পতঙ্গ আটকে যায়।প্রুভারদের মনেও ফাঁদে আটকে গেছে বা ফাঁদে পড়ার অনুভূতি কাজ করে।
২.ড্রসেরা উদ্ভিদটি খেলে ভেড়ারপাল নৈশকাশিতে আক্রান্ত হয়ে কাশতে কাশতে মারা যায়, ড্রসেরা ঔষধটিতে কাশির লক্ষণগুলো Striking Symptom-আকারে প্রকাশিত হয়েছে।
Lathyrus Sativus (লেথাইরাস স্যাটাইভাস) :
এ ঔষধটি খেসারির ডাল থেকে প্রস্তুতকৃত।খেসারি ডাল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান খাদ্যশস্য। এর ইংরেজি নাম Grass pea বা Chikling vetch এবং বৈজ্ঞানিক নাম Lathyrus sativus L. পুষ্টিগুণ খেসারি ডাল-এ শতকরা প্রায় ২০-২৩ ভাগ আমিষ থাকে। দীর্ঘদিন একটানা খেসারি ডাল খেলে ল্যাথাইরিজম রোগ হয় ¡ কারণ এতে রয়েছে BOAA নামক আমিনো এসিড ¡ আমাদের খাদ্য তালিকায় ডাল একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। বিশেষকরে পিয়াজু তৈরিতে এ ডালটি ব্যাপক ব্যবহার করা হয়।ডালে আছে বেশ পরিমান শর্করা , তেল, ভিটামিন, এবং খনিজ পদার্থ । ডাল উৎপাদনকারী উদ্ভিদ Fabaceae পরিবারের Papilionaceae উপ-পরিবারের আর্ন্তগত। এসব উদ্ভিদ এর মুলে নাইট্রজেন স্তিতিকারক নডিউল ব্যাক্টেরিয়ার সমাবেশ ঘটে এবং নডিউল তৈরীর মাধ্যমে বায়ুমন্ডলের নাইট্রোজেন সংবন্ধন করে।যার কারনে জমির মাটি উর্বর হয়। ডালের শুধুমাত্র উপকারী দিক নাই কিছু অপকারী দিকও আছে। আমরা খেসারী নামে যে ডাল খাই তার বৈজ্ঞানিক নাম Lathyrus sativus. এই ডাল এ BOAA নামক এক প্রকার এমিনো এসিড তৈরী হয়। এই এমিনো এসিড "ল্যথাইরিজম" নামক পায়ের প্যারালাইসিসের জন্য দায়ী। অধিকদিন এই ডাল খেলে এই রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে।
খেসারির ডাল থেকে প্রস্তুতকৃত এ ঔষধটি প্যারালাইসিসের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ (রোগীর লক্ষণের সাথে মিললে)।
Colocynth (কলোসিন্থ) :
অত্যন্ত তিতা উদ্ভিদ।এ ঔষধের রোগীদের মন অত্যন্ত তিতায় (ঘৃণায়)-পরিপূর্ণ।মন এতটাই তিতা যে, সে সমস্ত কথা নিজের পেটে জমা রেখে দেয় এবং পেটের তীব্র শূলব্যথা বা কলিক পেইনে আক্রান্ত হয়।
আবার, উদরীরোগেও এ ঔষধের রোগীরা মুখে তিতা অনুভব করেন।
Arnica (আর্ণিকা) :
উদ্ভিজ্জ ঔষধ।উদ্ভিদটি পর্বতের উপর জন্মায়।
এ উদ্ভিদটি সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেকেই পর্বতের উপর পড়ে গিয়ে ব্যথা পান।
সাদৃশ্যপূর্ণ লক্ষণ :
এ ঔষধটি আঘাতজনিত বা রোগজনিত থ্যাতলানো ব্যথায় ব্যবহার করা হয়।
Urtica Urens (আর্টিকা ইউরেন্স) :
বিশেষ ধরণের বিছুটি পাতা থেকে এ ঔষধটি তৈরি করা হয়।বিছুটি পাতা গায়ে লাগলে চুলকানি শুরু হয়।ছোটবেলায় রাঙামাটিতে থাকাকালীন সময়ে আমি এক ডাক্তারকে বিছুটি পাতা লাগিয়ে দিয়েছিলাম।বেচারা চুলকাতে চুলকাতে কান্না শুরু করে দিয়েছিল।উনার সহকর্মীরা পাউডারসহ অনেককিছু দিয়ে চুলকানি বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু পারেনি (দুঃখিত)।
আপনাদের ছোট একটা টিপস দিয়ে দিচ্ছি,কখনও বিছুটি পাতা চর্মে লাগলে লেবুপাতা কচলে আক্রান্তস্থানে ঘষে ঘষে লাগিয়ে দিবেন।সঙ্গে সঙ্গে চুলকানি কমে যাবে ।(পরীক্ষিত)।-এটাতো গেল আমার বাস্তব জীবনের একটা ঘটনা।
এবার আর্টিকা ইউরেন্স নিয়ে ম্যাটেরিয়া মেডিকায় প্রাপ্ত আরেকটি ঘটনা উল্লেখ করছি।ডা.পিয়ার্সের বর্ণনা মতে,একজন মহিলা ৩/৪ বছর বছর যাবত্ কোন সন্তান হয়নি।ঐ মহিলা একবার কোন কারণবশতঃ এই বিছুটি গাছ সিদ্ধ করে দুই আউন্স পরিমাণে খেয়ে ফেলে।এঘটনার পরেই মহিলার স্তন ফুলে একধরণের রস নির্গত হতে থাকে এবং এরপরপরই পরিষ্কার দুগ্ধ নির্গত হতে থাকে।
সাদৃশ্যপূর্ণ ব্যাপার হল-
১. এ ঔষধটি চুলকানিতে তথা চর্মরোগে ব্যবহার করা হয়
২.প্রসবের পর প্রসূতির স্থনে দুধ না আসলেও এ ঔষধটি ব্যবহার করা যায়।
China (চায়না) :
হোমিওপ্যাথি জগতের প্রথম ঔষধ এটি।ডা.হ্যানিম্যান এটি সেবনে কম্পজ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন।বর্তমানে হোমিওপ্যাথরা আনুষাঙ্গিক লক্ষণ মিলিয়ে কম্পজ্বরে উক্ত ঔষধটি ব্যবহার করছেন।
Curare (কুরারী) :
তীরের মাথায় এ বিষটি মাখিয়ে শিকারীরা প্রাণী শিকার করেন।প্রবিষ্ট তীরের মাথায় মাখানো বিষ শিকারী প্রাণী যেমন- হরিণের দেহে যখন এ বিষটি প্রবেশ করে তখন হরিণ প্যারালাইজড হয়ে যায়।আর এ বিষটি থেকে প্রস্তুতকৃত ঔষধটিও প্যারালাইজড ,বিশেষতঃ G.B.S. বা গোলেন বেরিস সিনড্রোম নামক উপসর্গে আনুষাঙ্গিক লক্ষণ মিললে রোগীকে প্রয়োগ করে উপকার পাওয়া যায়।
Allium Cepa (এলিয়াম সিপা) :
পেয়াজ থেকে তৈরিকৃত ঔষধ।ঘরের দরজা জানালাবন্ধ করে কাউকে কতকগুলি পেয়াজের খোসা তুলে কুচিকুচি করে কাটতে বলে তার কাছে বসে থাকলেই এলিয়াম সিপার কিছু লক্ষণ পেয়ে যাবেন।যেমন-১.চোখ দিয়ে জল পড়া।
২.ঘরের মধ্যে থাকলে উপসর্গের বৃদ্ধি।
Durba (দুর্ব্বা) :
কোথাও কেটে গেলে দুর্ব্বাঘাস ছেঁচে লাগালে রক্তপাত বন্ধ হয়।
সাদৃশ্যপূর্ণ বিষয় হল-দুর্ব্বাকে যখন হোমিওপ্যাথিক মতে শক্তিকৃত করা হয় তখন তা রক্তস্রাব আরোগ্যে ব্যবহার করা হয়।
Cannabis Indica(ক্যানাবিস ইন্ডিকা) :
ঔষধটি গাঁজা থেকে তৈরি।অতিরিক্ত গাঁজা ও ভাঙ সেবনের উন্মত্ততায় ঔষধির নিম্নক্রম উপযোগীতার সাথে ব্যবহৃত হয়।একলোক গাঁজা সেবন করে রাতের বেলায় মসজিদের গায়ে পিঠ ঘষছিল।তা একজন পথিকের নজরে আসায় পথিক জিজ্ঞেস করেছিল-"ভাই,মসজিদের দেয়ালে পিঠ ঘষছেন কেন ?" গাঁজাখোরের উত্তর ছিল গাঁজাখুরি ধরণের।সে যা উত্তর দিয়েছিল তার সারমর্ম হল এই যে,দেয়ালটা রাস্তার উপর চলে এসেছে। সে ঐ দেয়ালটা পিঠ দিয়ে ঠেলে রাস্তার পাশে সরিয়ে দিচ্ছে।মূলতঃ গাঁজা সেবনের পরে অনেকের এ ধরণের উদ্ভট চিন্তা বা কল্পনা মাথায় চলে আসে।এগুলোকে ভ্রান্তি বা Delusion.
কেন্টের রেপার্টরী থেকে এ ধরণের কিছু Delusion-আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।-
এ ঔষধের ডেলুশনগুলো হল :
সে নিজেকে একজন রাজকর্মচারী মনে করে,কেউ কেউ নিজেকে রাণী ভাবে,কেউ মনে করে সে ঘোড়ার উপর বসে আছে বা দেয়ালগুলো সরে আসছে,অনেকে আবার নিজেকে করাত মনে করে,কেউ কেউ মনে করে তার উপর বৃষ্টি পড়ছে,অনেকে তার মেরুদন্ডকে ব্যারোমিটার মনে করে,কেউ কেউ নিজেকে প্রেতাত্না মনে করে,থালার মধ্যে তারা দেখে,মনে করে তার বন্ধুরা তাকে ঘিরে রয়েছে,যেন সে সাঁতার কাটছে বা ঘরের মধ্যে আছে,সময়কে অনেক দীর্ঘ মনে হয়,যেন সে অন্য জগতে চলে গেছে,নিজেকে স্বচ্ছ মনে করে,সবকিছুই অবাস্তব মনে হয়,নিজের বমিকে পোকা মনে করে,নিজেকে পয়গম্বর বা অতিমানব মনে করে।যেমন-কেউ নিজেকে যিশু বা কেউ কেউ নিজেকে মাতা মেরি মনে করে।
গাঁজা খেলে যা হয় আরকি !
(চলবে......)
collected