14/10/2023
বিবাহিত নারীর ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব। একটি ইন্টারেস্টিং কেস :
সালফার প্রয়োগে আরোগ্য :
নবশিক্ষার্থী ভাই বোনদের জন্য :
বিস্তারিত রোগী লিপি থেকে সংক্ষেপে রােগীর বিশেষ লক্ষণ (স্টার চিহ্নিত *)
ও চিকিৎসার তথ্য দিলাম।
রােগীর বয়স : ২০ বছর, বিবাহিতা।
সমস্যা :
শুধুমাত্র প্রতি শনিবার রাতে ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করে। কিন্তু বাকী ৬ দিন কোন সমস্যা থাকে না।
*:প্রস্রাবে খুব দুর্গন্ধ।
এ ছাড়াও ডান পায়ের গােড়ালীতে পুরাতন একজিমা।
* তাতে গন্ধযুক্ত পুঁজ হয়।
* খুব চুলকায়, ঐ স্থানে পানি লাগলে জ্বালা করে।
* চুলকাতে খুব মজা লাগে তবে চুলকানাের পরে রক্ত বের হয় ও জ্বালা করে।
মাত্র কিছু দিন আগে বিয়ে হয়েছে। ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করার মতো লজ্জা জনক রােগের কথা শ্বশুর বাড়িতে জানাজানি হলে মান সম্মান নষ্ট ও সংসার ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে শ্বশুর বাড়ি যেতে পারে না।
প্রতি শনিবার রাতে ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাবের কোন ঔষধ আমার জানা নাই।
তবে রোগীর কথা শুনার পর সালফারের একটা লক্ষণ আমার মনে পড়লাে।
মনীষীদের অভিজ্ঞান কাজে লাগিয়ে বিষয়টিকে সহজ করে নিলাম।
* সালফারে ৭ দিন পর-পর রােগ ফিরে আসে বা দেখা দেয়।
তার মানে প্রতি শনিবার হলে, ৭ দিন পর পর হয়।
মনে হলাে হিসাব মিলছে।
রোগীর দিকে লক্ষ্য করে যা পেলাম :
* লম্বা, ফর্সা, সুন্দর, চিকণ স্বাস্থ্য।
* কোল কুজো টাইপের।
* ঠোঁট ও জিহ্বার ডগা লাল টকটকে।
জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম :
* গরমে খুব বিরক্ত হলেও শীতকালে ২/৩ দিন পর-পর স্নান করে।
* দুধ খেলে সহ্য হয় না।
* খাদ্য কম খায় কিন্তু পানি বেশী খায়।
রােগীর মা অকপটে স্বীকার করলাে।
* রোগী প্রচুর মিথ্যা কথা বলে।
* প্রচুর কথা বলে, লজ্জা কম, চঞ্চল।
* খুব অহংকারী, সব ব্যাপারে নিজের জেদ বহাল রাখে।
* কাজের ব্যাপারে বাড়ির সবাইকে হকুম করে, নিজে কিছু করতে চায় না।
* সবার উপরে মাতাব্বরি করে। সবার সাথে তর্ক করে।
ফলে বাড়ির সবাই তার উপরে বিরক্ত।
* বদ অভ্যাস, খাবার পর মায়ের আঁচলে বা নিজের জামা-কাপড়ে ব হাত মুছে (নোংরা)।
* মাঝে-মাঝে বগলের ঘাম, ময়লা নিয়ে নাকে ঘ্রাণ নেই।
অতীত বা ফ্যামিলি হিস্ট্রি তেমন কিছু পাইনি।
শুধুমাত্র শনিবার রাত ছাড়া অন্যদিন রাতে ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করে না।
বিধায় বাড়ির সবাই জ্বিন বা ভুতে ধরেছে মনে করে কবিরাজি, ঝাড়-ফুক করিয়েছে। বাড়ির লোকজনের ধারণা শনিবার রাতে ভুতে আসর করে। না হলে বাকি ছয় দিন রাতে ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করে না কেন ?
ফল না হওয়ায় এ্যালােপ্যাথি চিকিৎসা করিয়েছে। অবশেষে হোমিওপ্যাথিতে এসেছে।
রোগীর মায়ের করুণ আকুতি যে কোন ভাবে আমাদেরর সম্মান ও মেয়ের সংসার রক্ষা করতে হবে।
৭ দিন পর পর রোগ ফিরে আসে বা দেখা দেয় : ডা. কেন্টের রেপার্টরীতে : সালফার : থার্ড গ্রেড হলেও
সবকিছু বিবেচনা করে সালফার 1M মাত্র ২ দাগ শক্তি পরিবর্তন রীতিতে দিই। ঔষধ সেবনের মাত্র কয়েকদিন পর থেকে রাতে ঘুমের মধ্যে বিছানায় আর প্রস্রাব করেনি।
১৫ দিনের মধ্যে একজিমা অনেকটা উপশম। দীর্ঘদিন অপেক্ষা ও সময়ের ব্যবধানে তাতেই সম্পূর্ণ আরোগ্য হলেও ভবিষ্যতের কথা ভেবে আরো ২ দাগ 10M শক্তি পরিবর্তন রীতিতে দিই। পরবর্তীতে আর অসুবিধা হয়নি।
(আমি রেপার্টরী তেমন বুঝি না তবু নব শিক্ষার্থী ভাই-বোনেরা মনে রাখবেন ৭ দিন পর পর রোগ ফিরে আসে বা দেখা দেয় : কমপ্লিট রেপার্টরীতে : ফসফরাস ও সালফার ফাস্ট গ্রেড)।
বি. দ্র. সালফার ও এই রোগী চিত্রটি ইতিপূর্বে আমার পরিচিতজনরা পত্রিকায় ছাপিয়ে ছিল। ঐ সময় আমার ডায়েরি হতে কম্পোজ ও মেল করার দায়িত্বে থাকা আমার ছাত্র ভুলক্রমে পাশাপাশি থাকা সালফারের অন্য একটি রোগীলিপির সাল ও ঔষধের শক্তি টাইপ মিসিং করেছিল। সেজন্য দুঃখিত।
আল্লাহর ইচ্ছায় মাত্র কয়েক দাগ হোমিওপ্যাথিক ওষুধ কত সহজে মান সম্মান ও সংসার রক্ষা করলো, ভাবতেই ভালো লাগে।
রোগীর মা যেদিন সুস্থতার সংবাদ দিতে আসলো, সেদিন সেই মায়ের করুণ দুশ্চিন্তাপূর্ণ মুখচ্ছবির পরিবর্তে স্বস্তির হাসি এখনো মনে পড়ে। .............................................................
ডা. মেরিনা পারভীন ফরায়েজী
ডি.এইচ.এম.এস (ঢাকা), বি.এইচ.বি
ফোন : 01727158561..............................................................