01/11/2025
আপনি কি স্ত্রীর অর্গাজম ঘটাতে পারেন? নাকি সে শুধু অভিনয় করে ?
রাতের নিস্তব্ধতা। পাশে শুয়ে থাকা মানুষটার নিঃশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কোনো আওয়াজ নেই। শারীরিক মিলনের পর এই যে শীতল, অস্বস্তিকর নীরবতা—এটা কি শান্তি, নাকি এক ভয়ংকর ঝড়ের পূর্বাভাস? আপনারা দুজন একই বিছানায়, অথচ আপনাদের মাঝে যেন লক্ষ মাইলের অদৃশ্য দূরত্ব। এই দূরত্ব কেন?
আজ আমরা সভ্যতার সবচেয়ে বড় ভণ্ডামির ওপর থেকে পর্দা সরাব। আমরা কথা বলব সেই স্থানটি নিয়ে, যাকে ভালোবাসার চূড়ান্ত আশ্রয় বলা হয়—শোবার ঘর। কিন্তু সত্য হলো, বহু মানুষের জন্য এই শোবার ঘরটি কোনো ভালোবাসার আশ্রয় নয়; এটি হয় এক নীরব যুদ্ধক্ষেত্র, যেখানে ইগো, অজ্ঞতা আর অসম্মানের তরবারি দিয়ে প্রতিদিন দুটি আত্মাকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়, অথবা এটি একটি কবরখানা, যেখানে নারীর অপূর্ণ ইচ্ছা এবং পুরুষের ভঙ্গুর আত্মবিশ্বাসকে প্রতি রাতে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়।
এই লেখাটি কোনো সহজ পাঠ নয়। এটি আপনার এতদিনকার বিশ্বাস, আপনার অহংকার এবং আপনার সম্পর্ক নিয়ে আপনার যাবতীয় ধারণাকে চুরমার করে দিতে পারে। এই সত্যগুলো হজম করার জন্য প্রচণ্ড মানসিক শক্তির প্রয়োজন। কারণ আজ আমরা নারী ও পুরুষের সবচেয়ে আদিম এবং সবচেয়ে গোপন জগতের সেই অন্ধকার দিকটি উন্মোচন করব, যা সমাজ, ধর্ম এবং তথাকথিত "ভদ্রতা"-র চাদরে মুড়ে রাখা হয়েছে।
ভদ্রতাসূচক অর্গাজম—ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ অভিনয়
আসুন, শুরু করা যাক নারীর দিক থেকে। পৃথিবীর কোটি কোটি নারী প্রতি রাতে তাদের স্বামীদের সাথে এক অবিশ্বাস্য অভিনয়ে অংশ নেয়। এই অভিনয়ের নাম "ভদ্রতাসূচক অর্গাজম" বা The Polite Orgasm।
শারীরিক মিলনের সময় যখন একজন পুরুষ তার চূড়ান্ত মুহূর্তে পৌঁছায়, তখন নারীটি—তার নিজের তৃপ্তি হোক বা না হোক—কৃত্রিমভাবে শীৎকারের অভিনয় করে, শরীর বাঁকিয়ে চরম সুখের ভান করে। পুরুষটি ভাবে, সে একজন সফল প্রেমিক, একজন পৌরুষদীপ্ত স্বামী। সে জানে না, তার স্ত্রী এইমাত্র তাকে অস্কারজয়ী একটি পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছে।
কেন এই অভিনয়? এর শেকড় আমাদের সমাজের গভীরে প্রোথিত। হাজার হাজার বছর ধরে নারীকে শেখানো হয়েছে যে, যৌনতা পুরুষের প্রয়োজন, পুরুষের আনন্দের বিষয়। নারীর কাজ হলো পুরুষকে তৃপ্ত করা, তার পৌরুষকে উসকে দেওয়া। নারীর নিজের যে একটা শরীর আছে, তার যে যৌন চাহিদা বা তৃপ্তির অধিকার আছে—এই ধারণাটিকেই Systematic ভাবে মুছে ফেলা হয়েছে। তাকে শেখানো হয়েছে, "ভালো মেয়েরা" এসব নিয়ে কথা বলে না। নিজের যৌন অতৃপ্তির কথা বলাটা নির্লজ্জতা, বেহায়াপনা।
ফলে, নারীটি তার অতৃপ্তি নিয়ে চুপ করে থাকে। সে ভাবে, "আমার স্বামী যদি জানতে পারে আমি সুখ পাচ্ছি না, তাহলে সে কষ্ট পাবে।" অথবা সে ভয় পায়, "সে হয়তো ভাববে আমার শরীরেই কোনো সমস্যা আছে।" কিংবা সবচেয়ে ভয়ংকর—"সে হয়তো আমাকে ছেড়ে অন্য কোথাও এই পৌরুষের স্বীকৃতি খুঁজতে যাবে।"
এই ভয় এবং নীরবতা থেকে জন্ম নেয় এক করুণ বাস্তবতা। নারীটি তার নিজের শরীরকেই চিনতে পারে না। তার ক্লিটোরিস, যা কিনা শুধুমাত্র যৌন আনন্দের জন্যই তৈরি প্রকৃতির এক বিস্ময়কর অঙ্গ এবং যা অধিকাংশ নারীর অর্গাজমের চাবিকাঠি—সেটি পুরুষের কাছে এবং অনেক ক্ষেত্রে নারীর নিজের কাছেও এক অপরিচিত ভূখণ্ড হয়েই থেকে যায়। অধিকাংশ পুরুষ জানেই না এর অস্তিত্ব বা গুরুত্ব সম্পর্কে। তাদের কাছে যৌনতা মানে শুধু লিঙ্গ প্রবেশ এবং বীর্যপাত। এই সংকীর্ণ ধারণার যাঁতাকলে পিষ্ট হয় নারীর স্বাভাবিক এবং স্বাস্থ্যকর যৌন জীবন।
একজন নারী যখন বছরের পর বছর, দশকের পর দশক ধরে অতৃপ্ত থেকে যায়, তখন তার কী হয় জানেন? তার শরীরটা হয়ে যায় একটা বাজনা, যা কখনো সঠিকভাবে বাজানো হয়নি। তার আত্মাটা হয়ে যায় একটা শুকনো মরুভূমি। এই অতৃপ্তি তার মনে জন্ম দেয় এক গভীর শূন্যতা, এক তীব্র অভিমান এবং এক চাপা ক্রোধ। সে তার সঙ্গীর ওপর মানসিকভাবে বিরক্ত হতে শুরু করে। যে মানুষটা তার শরীরকে বুঝতে পারে না, তাকে সে মন থেকে সম্মান করতে পারে না। এই অতৃপ্তিই বহু সংসারের নীরব ভাঙনের মূল কারণ।
এবার মুদ্রার অপর পিঠ দেখা যাক। পুরুষের পৃথিবী। বাইরে থেকে যাকে মনে হয় ক্ষমতার কেন্দ্র, ভেতরে সে এক ভঙ্গুর কাঁচের প্রাসাদে বাস করে। আর এই প্রাসাদের ভিত্তি হলো তার "পৌরুষ" এর ধারণা। আর এই পৌরুষের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হয় বিছানায়।
একজন পুরুষকে ছোটবেলা থেকে শেখানো হয়—"ছেলেরা কাঁদে না," "শক্ত হও," "নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখো।" তাকে আবেগ প্রকাশ করতে শেখানো হয় না, তাকে দুর্বলতা স্বীকার করতে শেখানো হয় না। তার মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয় যে, তার মূল্য নির্ভর করে তার ক্ষমতা, অর্থ এবং যৌন সক্ষমতার ওপর।
এই বিষাক্ত প্রশিক্ষণের ফল হয় মারাত্মক। শোবার ঘরে সে একজন প্রেমিক হিসেবে প্রবেশ করে না, সে প্রবেশ করে একজন যোদ্ধা হিসেবে, যাকে পারফর্ম করতে হবে, প্রমাণ করতে হবে। তার সঙ্গিনী তার কাছে ভালোবাসার মানুষ থাকে না, হয়ে যায় তার পৌরুষ প্রমাণের একটি মাধ্যম। তার মাথায় ঘুরতে থাকে হাজারো দুশ্চিন্তা— "আমি কি বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারব? " "আমার লিঙ্গ কি যথেষ্ট বড়?," "আমি কি তাকে সন্তুষ্ট করতে পারব?
এই "পারফরম্যান্স অ্যাংজাইটি" বা করে দেখানোর দুশ্চিন্তা থেকেই জন্ম নেয় পুরুষের দুটি প্রধান যৌন দুর্বলতা—দ্রুত বীর্যপাত এবং লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যা । মজার ব্যাপার হলো, এই সমস্যাগুলোর ৯০% শারীরিক নয়, মানসিক। কিন্তু পুরুষটি তা স্বীকার করতে নারাজ। কারণ দুর্বলতা স্বীকার করা তার পৌরুষের সংজ্ঞার পরিপন্থী।
যখন সে বিছানায় ব্যর্থ হয়, তখন সে ভেঙে পড়ে। কিন্তু সে তার সঙ্গীর কাছে মুখ ফুটে নিজের অসহায়তার কথা বলতে পারে না। কারণ সেটা হবে তার "পুরুষ" হিসেবে পরাজয় স্বীকার করে নেওয়া। এই ব্যর্থতা ঢাকার জন্য সে তখন ভিন্ন পথ অবলম্বন করে।
সে তার সঙ্গিনীকেই দোষারোপ করতে শুরু করে। "তুমি আর আগের মতো আকর্ষণীয় নেই," "তোমার শরীরটা নষ্ট হয়ে গেছে," "তুমি আমাকে উত্তেজিত করতে পারো না।" সে নিজের দুর্বলতাকে সঙ্গীর ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে নিজের ইগোকে বাঁচানোর চেষ্টা করে।
সে যৌনতাকেই এড়িয়ে চলতে শুরু করে। সে কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকার ভান করে, দেরিতে বাড়ি ফেরে, ক্লান্তির অজুহাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে। শোবার ঘরটা তার কাছে আতঙ্কের জায়গা হয়ে ওঠে, তাই সে সেখান থেকে পালিয়ে বেড়ায়।
বাস্তব পৃথিবীর ব্যর্থতা থেকে পালাতে সে আশ্রয় নেয় পর্নোগ্রাফির বিকৃত জগতে। পর্ন তাকে এক মিথ্যা ক্ষমতার অনুভূতি দেয়। সেখানে সে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সেখানে কোনো ব্যর্থতার ভয় নেই। কিন্তু এই পর্নোগ্রাফি তাকে বাস্তব সম্পর্ক থেকে আরও দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। এটা তার মস্তিষ্কে যৌনতা সম্পর্কে এক অবাস্তব এবং ধ্বংসাত্মক ধারণা তৈরি করে, যা তার বাস্তব যৌন জীবনকে আরও জটিল করে তোলে।
পুরুষটি তার নিজের তৈরি করা পৌরুষের কারাগারে বন্দী হয়ে ছটফট করতে থাকে। সে সাহায্য চাইতে পারে না, নিজের দুর্বলতার কথা বলতে পারে না। ফলে সেও এক গভীর একাকীত্ব এবং হতাশায় ডুবে যায়।
যখন একজন অতৃপ্ত নারী এবং একজন নিরাপত্তাহীন পুরুষ একই বিছানায় থাকে, তখন সেই শোবার ঘরটা আর ভালোবাসার জায়গা থাকে না। সেটা হয়ে ওঠে এক স্নায়ুযুদ্ধের কেন্দ্র।
নারীটির চাপা ক্রোধ এবং অভিমান প্রকাশ পায় পরোক্ষ আক্রমণের মাধ্যমে। সে সারাদিন ধরে ছোট ছোট বিষয়ে খিটখিট করে, স্বামীকে অন্য নারীদের সাথে তুলনা করে অপমান করে, তার যেকোনো দুর্বলতায় খোঁচা দিয়ে আনন্দ পায়। তার এই আচরণগুলো আসলে বিছানার অতৃপ্তিরই বহিঃপ্রকাশ। সে সরাসরি বলতে পারে না, "তুমি আমাকে যৌন তৃপ্তি দিতে পারো না," তাই সে অন্য পথে তার ক্ষোভ উগরে দেয়।
অন্যদিকে, পুরুষটি তার যৌন ব্যর্থতার গ্লানি এবং অপমানবোধ থেকে আত্মরক্ষার জন্য আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। সে স্ত্রীর ওপর কর্তৃত্ব ফলানোর চেষ্টা করে, তার পোশাক-আশাক, চাল-চলন নিয়ে মন্তব্য করে, তাকে মানসিকভাবে দাবিয়ে রেখে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তার এই কন্ট্রোল করার প্রবণতা আসলে তার ভেতরের নিরাপত্তাহীনতারই প্রতিফলন।
এই পর্যায়ে শোবার ঘরটা হয়ে যায় একটা নীরব যুদ্ধক্ষেত্র। যৌন মিলন তখন আর আনন্দের বিষয় থাকে না, হয়ে যায় একটা রুটিনমাফিক কাজ অথবা একে অপরকে শাস্তি দেওয়ার মাধ্যম। স্ত্রী হয়তো ইচ্ছে করে "মাথাব্যথা"-র অজুহাত দেয় স্বামীকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য। স্বামী হয়তো ইচ্ছে করে স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে মিলিত হয় নিজের ক্ষমতা দেখানোর জন্য। এখানে কোনো আবেগ থাকে না, থাকে শুধু একে অপরকে পরাজিত করার এক কুৎসিত প্রতিযোগিতা।
এই যুদ্ধক্ষেত্রেই জন্ম নেয় বহু বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের। অতৃপ্ত নারী বাইরে এমন কাউকে খোঁজে যে তার শরীরকে বুঝবে, তার আবেগকে গুরুত্ব দেবে। নিরাপত্তাহীন পুরুষ বাইরে এমন কাউকে খোঁজে যার কাছে সে সহজেই নিজের পৌরুষ প্রমাণ করতে পারবে, যেখানে কোনো ব্যর্থতার ভয় থাকবে না। তারা দুজনেই নিজেদের সংসারের এই নীরব যুদ্ধ থেকে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে।
সব সম্পর্কে যুদ্ধ হয় না। কিছু সম্পর্ক ধীরে ধীরে মরে যায়। যখন নারীটি বুঝতে পারে যে তার সঙ্গীর কাছ থেকে সে আর কোনোদিনও যৌন তৃপ্তি পাবে না এবং এই নিয়ে কথা বলেও কোনো লাভ নেই, তখন সে আশা ছেড়ে দেয়। সে মানিয়ে নেয়। সে তার যৌন সত্তাটিকে নিজের ভেতরেই কবর দিয়ে দেয়। সে একজন স্ত্রী বা প্রেমিকা থেকে ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে একজন রুমমেট, একজন মা, একজন গৃহকর্মী। তার হাসিটা আগের মতোই থাকে, কিন্তু তার চোখ দুটো হয়ে যায় নিষ্প্রাণ। সে আর ভালোবাসার মানুষ হিসেবে তার সঙ্গীকে দেখে না, দেখে একজন দায়িত্ব হিসেবে।
একইভাবে, পুরুষটিও যখন বারবার ব্যর্থ হতে হতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তখন সেও চেষ্টা করা ছেড়ে দেয়। সে মেনে নেয় যে সে "এ রকমই"। সে যৌনতা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। তার ভেতরের প্রেমিক পুরুষটি মরে যায়, বেঁচে থাকে শুধু একজন বাবা, একজন রোজগেরে স্বামী।
এইভাবেই শোবার ঘরটা হয়ে যায় একটা কবরখানা। যেখানে দুটি জীবন্ত মানুষ একসাথে থাকে, কিন্তু তাদের ভেতরের আবেগ, ইচ্ছা এবং প্রেম মরে ভূত হয়ে গেছে। তারা একসাথে খায়, ঘুমায়, সামাজিক অনুষ্ঠানে যায়, কিন্তু তাদের মধ্যে আর কোনো প্রাণের সংযোগ থাকে না। তারা সমাজের চোখে "সুখী দম্পতি", কিন্তু নিজেরা জানে তারা আসলে দুটি মৃত আত্মার সহবাস করছে। এই নীরব, আবেগহীন সম্পর্কগুলো ক্যান্সারের চেয়েও ভয়ংকর।
সমাধান কোথায়?
তাহলে এই চক্র ভাঙার উপায় কী? উপায় একটাই—কথা বলা। সেইসব কথা বলা, যা আমাদের সমাজ বলতে শেখায়নি।
সমাধানের প্রথম ধাপ হলো, পুরুষকে তার বিষাক্ত পৌরুষের ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তাকে বুঝতে হবে যে, যৌনতা কোনো পারফরম্যান্স নয়, এটা পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার একটি প্রক্রিয়া। তার দুর্বলতা স্বীকার করার মধ্যে কোনো লজ্জা নেই, বরং সততা আছে। তাকে শিখতে হবে যে, তার সঙ্গিনীর শরীর একটা রহস্যময় জগৎ, যা তাকে আবিষ্কার করতে হবে—গায়ের জোরে জয় করতে নয়। তাকে পর্নোগ্রাফির জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে বাস্তব যৌন শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। তাকে জানতে হবে ফোরপ্লে (Foreplay) বা শৃঙ্গারের গুরুত্ব, জানতে হবে ক্লিটোরিস সম্পর্কে। তাকে বুঝতে হবে, সঙ্গিনীর অর্গাজম তার পৌরুষের সার্টিফিকেট নয়, বরং তাদের পারস্পরিক ভালোবাসার সুন্দরতম প্রকাশ।
অন্যদিকে, নারীকেও তার বহু বছরের নীরবতা ভাঙতে হবে। তাকে ভদ্রতার মুখোশ খুলে ফেলে নিজের চাহিদার কথা স্পষ্টভাবে বলতে শিখতে হবে। তাকে তার সঙ্গীকে শেখাতে হবে, তাকে পথ দেখাতে হবে। "আমার এখানে ভালো লাগে," "এভাবে করলে আমি বেশি আনন্দ পাই"—এই কথাগুলো বলা কোনো নির্লজ্জতা নয়, এটা তার অধিকার। তাকে বুঝতে হবে, তার অর্গাজমের দায়িত্ব একা তার সঙ্গীর নয়, তার নিজেরও। নিজের শরীরকে চেনা, নিজের ইচ্ছাকে জানা এবং তা সঙ্গীকে বোঝানো—এটা সুস্থ সম্পর্কের জন্য অপরিহার্য। অভিনয় করে সে সাময়িকভাবে তার সঙ্গীর ইগোকে বাঁচাচ্ছে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সে তাদের সম্পর্কটাকেই খুন করছে।
এই কথোপকথন সহজ নয়। এর জন্য প্রয়োজন প্রচণ্ড সাহস, বিশ্বাস এবং পারস্পরিক সম্মান। বহু বছরের জমে থাকা ক্ষোভ, লজ্জা এবং ভয়কে অতিক্রম করে এই কথাগুলো বলতে হবে। কিন্তু এই কঠিন পথটাই একমাত্র মুক্তির পথ।
এই লেখাটি শেষ করার আগে, আমি আপনার—হ্যাঁ, ব্যক্তিগতভাবে আপনার—বিবেকের দরজায় কয়েকটি প্রশ্ন রাখতে চাই। উত্তরগুলো কাউকে দিতে হবে না, শুধু নিজের মুখোমুখি হয়ে সৎভাবে নিজেকে উত্তর দিন।
নারীদের জন্য:
শেষ কবে আপনি কোনো অভিনয় ছাড়া, সম্পূর্ণরূপে নিজের আনন্দের জন্য অর্গাজম অনুভব করেছেন? আপনার শরীরী সুখ কি সত্যিই আপনার, নাকি পুরুষের অহংকার রক্ষার জন্য উৎসর্গীকৃত এক বলি?
আপনি কি একজন প্রেমিকা, নাকি একজন যৌনকর্মী, যাকে ভালোবাসার বিনিময়ে নয়, সংসার টিকিয়ে রাখার পারিশ্রমিক হিসেবে নিজের শরীরটা দিতে হয়?
আপনার সঙ্গীর অদক্ষতাকে "পুরুষদের ওরকমই হয়" ভেবে আজীবন অতৃপ্তিতে বেঁচে থাকাটা কি ভালোবাসা, নাকি চরম আত্মপ্রবঞ্চনা?
পুরুষদের জন্য:
আপনি কি আপনার সঙ্গিনীর সাথে মিলিত হন, নাকি তার শরীরটাকে ব্যবহার করে নিজের পৌরুষের পরীক্ষা দেন? আপনি কি একজন প্রেমিক, নাকি একজন পরীক্ষার্থী?
পর্নোগ্রাফির নায়িকাদের সাথে আপনার বাস্তব সঙ্গিনীকে তুলনা করে তাকে যে অপমান আপনি করেন, সেই একই মানদণ্ডে আপনার নিজের পারফরম্যান্সকে বিচার করার সাহস কি আপনার আছে?
আপনার কি মনে হয় না, যে পুরুষ তার সঙ্গিনীর শরীরের ভূগোলটাই চেনে না, সে আসলে যৌনভাবে অশিক্ষিত এবং তার পৌরুষের অহংকারটা একটা বিরাট ফাঁপা বেলুন ছাড়া আর কিছুই নয়?
আর সবশেষে, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার জন্য একটাই হাড় হিম করা প্রশ্ন:
আপনার শোবার ঘরের নীরবতাটা কি শান্তির, নাকি দুটি মৃতদেহের মাঝে বিরাজমান কবরখানার নিস্তব্ধতা? ভেবে দেখুন, আপনি কি প্রেম করছেন, নাকি একটা লাশের সাথে ঘুমাচ্ছেন?