17/11/2025
অটিজম শিশুদের থেরাপিতে উন্নতি দেখা দিলে অনেক সময় বাবা–মায়েরা থেরাপির ঘনত্ব কমিয়ে দেন। এটি খুব সাধারণ একটি প্রবণতা, কিন্তু এর পিছনে কিছু মানসিক কারণ থাকে—এবং থেরাপি কমিয়ে দিলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতিও হতে পারে। নিচে সহজভাবে ব্যাখ্যা করা হলো:
কেন পিতামাতা থেরাপি কমিয়ে দেন?
1. উন্নতি দেখে মনে হয়—“এখন তো ঠিকই আছে: প্রাথমিক উন্নতি দেখে মনে হয় শিশুটি বেশ ভালো করছে, তাই আর এত ঘন ঘন থেরাপির দরকার নেই।
2. থেরাপির খরচ, সময় ও পরিশ্রম: নিয়মিত থেরাপি চালানো সময়সাপেক্ষ, আর্থিক চাপও থাকে—ফলে অনেকেই মনে করেন উন্নতি দেখা গেলে কমানো যেতে পারে।
3. থেরাপিকে ‘চিকিৎসা’ মনে করা: অনেকেই থেরাপিকে ওষুধের মতো মনে করেন—একটু ভালো হলে বন্ধ করা যায়। কিন্তু থেরাপি হচ্ছে স্কিল বিল্ডিং—যার ধারাবাহিকতা জরুরি।
4. সামাজিক চাপ বা ভুল ধারণা: কেউ কেউ ভয় পান—“লোক কি বলবে, এত থেরাপি কেন?”
আবার কেউ মনে করেন বেশি থেরাপি দিলে শিশু নাকি “ডিপেন্ডেন্ট” হয়ে যাবে (যা সঠিক ধারণা নয়)।
থেরাপি কমিয়ে দিলে কী ক্ষতি হতে পারে?
1. উন্নতি থেমে যেতে পারে: শিশু যেসব স্কিল শিখতে শুরু করেছে, সেগুলো পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত (generalize) না হওয়া পর্যন্ত থেরাপি কমালে উন্নতি স্থবির হয়ে যায়।
2. পূর্বের সমস্যাগুলো ফিরে আসার ঝুঁকি
যেমন:
• চ্যালেঞ্জিং বিহেভিয়ার
• যোগাযোগের সমস্যা
• মনোযোগের সমস্যা
• রুটিন ভেঙে যাওয়া
অনেক ক্ষেত্রে regression দেখা যায়।
3. নতুন স্কিল শেখার গতি কমে যায়: অটিজম শিশুদের শেখা ধীরে এবং পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে হয়। থেরাপি কমলে পরবর্তী ধাপের স্কিল শেখা দেরি হয়।
4. স্কুল ও দৈনন্দিন জীবনে এডজাস্টমেন্ট কঠিন হয়ে যায়: থেরাপি হচ্ছে ভবিষ্যতের প্রস্তুতি। থেরাপি কমলে—
• স্কুলের performance
• social skill
• independence
এগুলোতে বিঘ্ন ঘটে।
5. থেরাপিস্ট–শিশু–পরিবারের consistency নষ্ট হয়: নিয়মিত থেরাপির অভ্যাসই শিশুকে কাঙ্ক্ষিত আচরণে ধরে রাখে। পরিবর্তন হলে সে বিভ্রান্ত—কখনো frustated—হয়ে যায়।
✔ তাহলে কখন থেরাপি কমানো ঠিক?
• থেরাপিস্টের ক্লিনিক্যাল মূল্যায়ন অনুযায়ী
• লক্ষ্য (goals) অর্জিত হলে
• নতুন লক্ষ্য সেট করার পর
• স্কিলগুলি বাড়িতে ও স্কুলে স্থায়ীভাবে দেখা গেলে
শুধু থেরাপিস্টের পরামর্শ ছাড়া থেরাপি কমানো সঠিক নয়।
“অটিজমে থেরাপি কোনো ‘তাৎক্ষণিক চিকিৎসা’ না—এটি একটি ধারাবাহিক শেখার যাত্রা। প্রাথমিক উন্নতি মানে থেরাপি বন্ধ করা নয়, বরং পরবর্তী স্তরে যাওয়ার সময়।”
উদাহরণ: রাফি ৪ বছর বয়সী একটি অটিজম শিশু। সে গত ৬ মাস ধরে নিয়মিত ABA থেরাপি পাচ্ছে। শুরুতে তার—
• চোখে চোখে তাকানো কম
• নির্দেশ বুঝতে সমস্যা
• খেলার সময় নিজের মতো খেলা
• কথা বলার দক্ষতা সীমিত
এসব সমস্যা ছিল।
✔ ৬ মাস থেরাপির পর উন্নতি: থেরাপির কারণে রাফি—
• নিজের নাম শুনে সাড়া দেয়
• দুই শব্দে কথা বলে
• বাবা-মাকে ইশারায় জানায়
• হাতে–হাতে খেলতে পারে
এই উন্নতি দেখে রাফির বাবা-মা ভাবলেন,
“এখন তো অনেক ভালো! এত দিনের থেরাপি যথেষ্ট। কিছুদিন বিরতি দেই।” ফলে তারা সপ্তাহে ৫ দিন থেকে কমিয়ে সপ্তাহে ১ দিন থেরাপি করলেন।
এরপর কি হলো? ২–৩ মাসের মধ্যে ধীরে ধীরে পরিবর্তন দেখা গেল—
১. যোগাযোগ কমে গেল: আগে যে ২–৩ শব্দে কথা বলত, এখন চুপচাপ থাকে। আবার আগের মতো ইশারা ছাড়া কিছু বুঝাতে পারে না।
২. আচরণগত সমস্যা আবার শুরু
• রাগ হলে চিৎকার
• জিনিস ছোড়া
• খেলায় অস্থিরতা
৩. শেখা স্কিলগুলো স্থায়ী হলো না: খেলার নিয়ম, turn-taking, matching—এসব স্কিল practice না থাকায় ভুলে যেতে শুরু করল।
৪. স্কুল readiness পিছিয়ে গেল: শিক্ষক বললেন রাফির মনোযোগ আগের মতো নেই।
থেরাপিস্টের ব্যাখ্যা: থেরাপিস্ট জানালেন— রাফি এখনও শেখার মাঝপথে আছে। স্কিলগুলো পুরোপুরি স্থায়ী (generalized) হয়নি। থেরাপি কমালে আগের উন্নতিগুলো ধরে রাখা যায় না।”
অটিজম শিশুর উন্নতি মানেই থেরাপির প্রয়োজন কমে যাওয়া নয়। বরং উন্নতি হলো পরবর্তী ধাপের থেরাপির জন্য প্রস্তুতি। থেরাপি কমাতে চাইলে অবশ্যই থেরাপিস্টের পরামর্শ প্রয়োজন।
Writer:
Md. Ashadujjaman Mondol, MPhil
Clinical Psychologist