28/09/2024
দেশ গোল্লায় যাচ্ছে। এটি একটি দায়িত্বশীলতায় ভরপুর সংলাপ। প্রায়ই এখানে ওখানে বহুজনকে এ সংলাপ উচ্চারণ করতে শোনা যায়। অবাক লাগে, একটা দেশ তো মানুষেরই হয়, হয়ে থাকে অথচ সেই মালিক মানবগোষ্ঠীর কেউ কেউ কিভাবে এমন আবেগহীন মন্তব্য করে ফেলতে পারে!
নিজের স্বার্থে না মিললে মানুষ রাগ করে, ঝাল ঝাড়ে, হিংস্র হয়ে যায়। অনেক মানুষ নিজের হিসাবটা ষোলো আনা মিলছে কিনা- দেথতে সদা নিজের, নিজেদের হিসাবের খাতা খুলে বসে থাকে। যদি অংক না মেলে, মগজে যে উচিত অনুচিতের বেড়া দেয়া থাকে তা ভেঙ্গেচুরে সব গেলো, গেলো সব বলে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেয়।
মানুষ তো বিচিত্র রকমের হয়। মন্দ কথা বলে কারও কারও মনে হয়তো শান্তি মেলে। নিজেদের মধ্যে অনেক মানুষকে পাবো, যারা সাধারণত কোনকিছুতে সুখী হয়না। উঠতে বসতে এর ওর দোষ ধরে। অনেক মানুষকে আমরা দেখতেই পাই- জেনে বুঝে অহরহ মন্দকান্ড করে বেড়াচ্ছে। যা মন্দ বলে অন্যরা ভাবছে, ভাবে- নিজের কাছে তা মন্দ মনে হয়না। যদি হতো কোনও মন্দকর্ম নির্বিকারে করতে পারতো না তারা।
একই জগতে আরও এক দল মানুষ রয়েছে- যারা আগের দলের উল্টো। যে কোনকিছু করার আগে কি করছি, কেনো করছি ভেবে নেবার অভ্যাস থাকে তাদের। এ গোত্র করার আগে ভাবে। ন্যায় অন্যায়, ভুল ঠিকের বিচার করে নেয় তারপর সিদ্ধান্ত নেয়- করবে কি করবেনা। এরা ভাবে, একটা সমাজে বাস করি, অতএব সে সমাজটার প্রতি, সমাজে বাস করা মানুষদের প্রতি দায় রয়েছে। নিজের ইচ্ছা হয়েছে তাই যা খুশী করে ফেললাম, বলে ফেললাম- এমন বলা, করা শোভন নয়, ঠিক নয়।
সবার মনে যদি ঠিক বেঠিক মাপার যন্ত্রটা কাজ করতো তাহলে মানুষ, সমাজ, দেশ- সবার সবকিছুর সংকট কমতো। সেই যন্ত্রটা সকল মানুষের মধ্যেই ছিল, আছে- অনেকদিন ধরে ব্যাবহার না করার ফলে অনেকের যন্ত্র ঠিকঠাক কাজ করেনা। যার যন্ত্র কাজ করেনা সে বা তারা আর দশটা মানুষের মতো নয়। ভাবনা চিন্তায় ভিন্ন। তারা বুক ফুলিয়ে যা করার করে। ভাবে, ভুল হয় অন্যদের। নিজেরা যা করছে- সবই একশত ভাগ ঠিক।
অনেকজন মিলে হেসে খেলে একটা মানুষকে মেরে ফেললো। তাদের কেউই কি ভুল কাজ করছে বলে ভেবেছিলো? হয়তো মানুষের মনে হঠাৎ জেগে উঠলো, নিজেকে জাহির করার ইচ্ছা। সেই ছটফটে মন শান্ত করতে কাউকে অপমান করতে হয়। অশান্ত মন শান্ত করতে একটা গোষ্ঠী আরেকটা গোষ্ঠীর উপর হামলা করে বসে। দুটো মানুষ মরে, দশটা মানুষের মাথা ফাঁটে তারপর মানুষ ঠান্ডা হয়। তারপর স্বাভাবিক মানুষের মতো খায় দায় ঘুমায়। ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে বলে- দেশটা গোল্লায় যাচ্ছে।
দেশের পা নেই, চাকাও নেই তবু বলা হয় কথাটা। বলার আগে কটা মানুষ ভেবে দেখে- যা উচ্চারণ করে ছোট হয়ে যাওয়ার কথা, তা বলার জন্য মন এতটা আঁকুপাকু করছে কেনো? আমি কি সুস্থ স্বাভাবিক? কি আমার পরিচয়? কি আমার কর্তব্য, কি করা উচিত- কি করে থাকি? কি আমাকে গর্বিত করে, কিসে অপমানিত হই? কোনও প্রশ্নই মনে জাগেনা।
দেশ গোল্লায় গেছে বা যাবে- এমন অসভ্য উচ্চারণ শুনে দেশ হাসে। দেশ জানে, তাঁকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসার মানুষের অভাব নেই। চিরকাল কিছু মানুষ গোল্লায় যেতে ভালবাসবে। নানা কিছু বলে ও করে মনের সুখ মেটাবে তারা কিন্তু সেই দূর্বলচিত্ত দিয়ে শক্তচিত্তের দেশকে কখনোই গোল্লায় পাঠাতে পারবেনা।