11/11/2025
বাংলাদেশে ফুসফুস ক্যানসার হলো দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রাণঘাতী ক্যানসার, যা মোট ক্যানসারজনিত মৃত্যুর প্রায় ১০.৩% এবং বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১৩ হাজার নতুন ফুসফুস ক্যানসারের রোগী শনাক্ত হয়।
ফুসফুস ক্যান্সারের প্রধান কারণসমূহ:
• ধূমপান: সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকা রাসায়নিক পদার্থ ফুসফুসের কোষের ক্ষতি করে, যা ক্যান্সার সৃষ্টিতে মূল ভূমিকা পালন করে।
• পরোক্ষ ধূমপান: অধূমপায়ীরা ধূমপায়ীদের সংস্পর্শে এলেও ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকে।
• রেডন গ্যাস: প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া এই তেজস্ক্রিয় গ্যাস মাটির ফাটল দিয়ে ঘরে প্রবেশ করতে পারে এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
• রাসায়নিক পদার্থ: অ্যাসবেস্টস, আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম এবং নিকেল এর মতো কিছু রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসা ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
• দূষণ: বায়ু দূষণও ফুসফুসের ক্যান্সারের একটি সম্ভাব্য কারণ।
• জেনেটিক্স: পারিবারিক ইতিহাস বা নির্দিষ্ট জিনগত পরিবর্তন ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ফুসফুস ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণ
• ক্লান্তি: ক্রমাগত ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করা।
• কাশিতে রক্ত: কাশির সাথে রক্ত বা লালচে কফ আসা।
• শ্বাসকষ্ট: শ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া বা শ্বাসকষ্ট হওয়া।
• বুকে ব্যথা: গভীর শ্বাস নেওয়া বা কাশির সময় বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি হওয়া।
• খাওয়াদাওয়ার পরিবর্তন: ক্ষুধা কমে যাওয়া বা ওজন কমে যাওয়া, যা কারণ ছাড়াই ঘটছে।
• গলা বসে যাওয়া: গলার স্বর কর্কশ হয়ে যাওয়া।
• শ্বাসের শব্দ: শ্বাস নেওয়ার সময় শিস দেওয়ার মতো শব্দ হওয়া।
• বারবার সংক্রমণ: ঘন ঘন নিউমোনিয়া বা ব্রঙ্কাইটিসের মতো সংক্রমণ হওয়া
প্রতিরোধের উপায়সমূহ
• ধূমপান ত্যাগ করুন:
o ধূমপান: ফুসফুসের ক্যান্সারের সবচেয়ে বড় কারণ ধূমপান। তাই ধূমপান সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করা উচিত।
o পরোক্ষ ধূমপান: অন্যের ধূমপানের ধোঁয়াও এড়িয়ে চলুন, কারণ এটিও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
• স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন:
o সুষম খাদ্য: ফল, শাকসবজি এবং শস্য সমৃদ্ধ খাবার খান।
o ব্যায়াম: নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করুন।
• পরিবেশগত ঝুঁকি এড়ানো:
o বায়ু দূষণ: বায়ু দূষণ এড়িয়ে চলুন এবং ঘরে বায়ুচলাচলের ব্যবস্থা রাখুন।
o রাসায়নিক পদার্থ: কিছু রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন, যা ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
• ক্যান্সারের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা:
o ফুসফুসের ক্যান্সারের কিছু প্রাথমিক লক্ষণ যেমন দীর্ঘস্থায়ী কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, বা কাশির সাথে রক্ত পড়া দেখা গেলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
• প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য পরীক্ষা:
o বিশেষ করে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত।
ফুসফুসের ক্যানসারের চিকিৎসা
প্রধান চিকিৎসাগুলো হলো:
• অপারেশন (সার্জারি): ক্যানসার অপসারণ করতে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে রয়েছে লোবেকটোমি (একটি লোব অপসারণ), নিউমোনেকটমি (পুরো ফুসফুস অপসারণ) বা ওয়েজ রিসেকশন (ফুসফুসের ছোট অংশ অপসারণ) । স্মল সেল ক্যানসারের জন্য এটি খুব কম ব্যবহৃত হয় ।
• কেমোথেরাপি: ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতে ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এটি সার্জারির আগে বা পরে, অথবা রেডিওথেরাপির সাথে (কেমোরেডিয়েশন) দেওয়া যেতে পারে ।
• রেডিওথেরাপি: ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতে উচ্চ-শক্তির রশ্মি (radiation) ব্যবহার করা হয় । এটি সার্জারির বিকল্প হিসেবে, পরে বা কেমোথেরাপির সাথে ব্যবহার করা যেতে পারে ।
• টার্গেটেড থেরাপি: কিছু নন-স্মল সেল ফুসফুসের ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়, যা নির্দিষ্ট ক্যানসার কোষে কাজ করে ।
• ইমিউনোথেরাপি: ইমিউন সিস্টেমকে ক্যানসার কোষ খুঁজে বের করতে এবং আক্রমণ করতে সাহায্য করে