17/11/2025
#ঋতুস্রাব_মাসিক_পিরিওড
নিয়ে জানা অজানা সঠিক তথ্য....
নিজে জানুন।
অপরকে জানিয়ে উপকৃত করুন।
--পিরিয়ডের সময় যদি আপনার সাইকেল দীর্ঘ হয়, অর্থাৎ পয়ত্রিশ দিনের বেশি হয়, তাহলে এটা শরীরের হরমোনাল ইমব্যালেন্সের ইঙ্গিত হতে পারে। এই ধরনের সাইকেল সাধারণত পিসিওএস, কম ইস্ট্রোজেন, অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা ডিম্বাণু ঠিকমতো নির্গমন না হওয়ার কারণে হয়। যখন ডিম্বাণু নির্গত হয় না, তখন শরীরে প্রোজেস্টেরন তৈরি হয় না। এর ফলে শুধু গর্ভধারণই কঠিন হয় না, পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে যায় এবং জরায়ুর লাইনিং-এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
-- আপনার সাইকেল যদি খুব ছোট হয়, অর্থাৎ পঁচিশ দিনের কম হয়, তাহলে সেটা উচ্চ ইস্ট্রোজেনের মাত্রা, লুটিয়াল ফেজ ছোট হওয়া বা পেরিমেনোপজের ইঙ্গিত হতে পারে। এই অবস্থায় রক্তপাত ঘন ঘন হয়, যার ফলে শরীরে আয়রন কমে গিয়ে রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া দেখা দিতে পারে।
-- যদি আপনি পরপর তিন মাস বা তার বেশি সময় পিরিয়ড না পান, তাহলে সেটা অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। এটা পিসিওএস, থাইরয়েডে ঝামেলা, অতিরিক্ত স্ট্রেস বা হাইপোথ্যালামিক অ্যামেনোরিয়ার লক্ষণ হতে পারে। ডিম্বাণু নির্গমন না হলে প্রোজেস্টেরন তৈরি হয় না, যার ফলে গর্ভধারণে সমস্যা হয় এবং মুড সুইং, লাইনিং এ সমস্যা ও পিরিয়ড সাইকেলে ঝামেলা দেখা দেয়।
-- যদি আপনার পিরিয়ডে ব্লিডিং অতিরিক্ত হয়, তাহলে তা সাধারণত শরীরে ইস্ট্রোজেন বেশি থাকার কারণে অথবা প্রোজেস্টেরনের ঘাটতির কারণে। এই অবস্থাটি অনেক সময় এন্ডোমেট্রিওসিস বা ফাইব্রয়েডের সাথে সম্পর্কযুক্ত থাকে।
-- পিরিয়ড যদি মাত্র দুই-তিন দিনেই শেষ হয়ে যায় এবং ব্লিডিং খুবই কম হয়, তাহলে সেটা ইস্ট্রোজেন কম থাকার লক্ষণ হতে পারে। এছাড়া, থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা বা শরীরের ওজন অত্যধিক কম থাকলেও এই সমস্যা দেখা যায়। এতে জরায়ুর আস্তরণ ঠিকমতো তৈরি না হওয়ায় গর্ভধারণ কঠিন হয়ে পড়ে।
-- যদি আপনার পিরিয়ডের সময় রক্তের সাথে হালকা স্পটিং হয়, সেটা হরমোনাল ইমব্যালেন্স , ফাইব্রয়েড বা এন্ডোমেট্রিওসিসের কারণে হতে পারে। এছাড়াও প্রোজেস্টেরনের ঘাটতিও এই সমস্যার একটি কারণ হতে পারে।
-- ব্যথাযুক্ত পিরিয়ড একদমই স্বাভাবিক নয়। যদি পিরিয়ডের সময় এত ব্যথা হয় যে আপনাকে ওষুধ খেতে হয় বা কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে এটা এন্ডোমেট্রিওসিস, অ্যাডিনোমায়োসিস, ফাইব্রয়েড বা পেলভিক ইনফ্ল্যামেশন-এর লক্ষণ হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
-- পিরিয়ডের আগে বা পরে বাদামি রঙের রক্ত দেখা গেলে সেটা প্রোজেস্টেরন কমে যাওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে, কিংবা শরীরে হরমোনাল ইমব্যালেন্স আছে, তা বোঝাতে পারে।
-- যদি পিরিয়ডের সময় বড় বড় জমাট রক্ত দেখা যায়, তাহলে সেটা ইস্ট্রোজেন ডমিন্যান্স, ফাইব্রয়েড, অ্যাডিনোমায়োসিস বা এন্ডোমেট্রিওসিস-এর লক্ষণ হতে পারে। বড় ক্লট মানে জরায়ুর ভেতরে রক্ত ঠিকভাবে বের হচ্ছে না, যা শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
এই সমস্ত লক্ষণগুলো আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ হরমোনাল অবস্থা সম্পর্কে অনেক কিছু বলে দেয়। পিরিয়ড কোনো ছোটখাটো বিষয় না, এটা একজন নারীর সামগ্রিক হরমোনাল ও প্রজনন স্বাস্থ্যের আয়না। যদি এর মধ্যে কিছু অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেন, তাহলে সময় থাকতেই সচেতন হোন। নিজের ডায়েট, লাইফস্টাইল ঠিক করা নিয়ে কাজ করুন। এই বিষয়গুলো যতোই অবহেলা করবেন, সমস্যা ততোই বাড়তে থাকবে।
এসব সমস্যা নিয়ে অপেক্ষায় না থেকে দ্রুত সরাসরি চেক আপ এ আসুন। সরাসরি বিস্তারিত আলোচনা করে রোগ ডায়গনসিস ও চিকিৎসা জরুরি।
ধন্যবাদ।
ডা. নাজিয়া বিনতে আলমগীর।
গাইনি ও প্রসুতি বিদ্যা আলোচক ও সার্জন।