26/11/2025
#সহবাসে_যোনিপথ_শুষ্ক_থাকা -(Dry Va**na)
কারন, করণীয়, চিকিৎসা।
বিবাহিত কাপলদের মাঝে এটা এখন একটা প্রায় সাধারণ সমস্যা।
ইদানীং প্রায়ই এই সমস্যা নিয়ে মেয়েরা চেম্বারে আসেন। এমন নয়,
আগে কখনো কারো এই সমস্যা হতো না। কিন্তু, এখনকার মেয়েরা সচেতন বেশি।
অন্যের সমস্যা শুনে, বুঝে, পড়াশোনা করে বুঝতে পারে এটা তার নিজের'ও একটা সমস্যা।
তাই, বহু বছরের বিবাহিত জীবনে ভুক্তভোগী নারীরাও এখন সমস্যা সমাধান করতে চান।
জানতে হবে,
এই ড্রাই ভ্যাজাইনা, সহবাসে অণীহা হবার একটি বড় কারন। এটা রোগ নয়। বরং বিভিন্ন ধরনের রোগের লক্ষ্মণ। যার জন্য বিবাহিত জীবনের যে পর্যায়েই সমস্যা ধরা পড়ুক, সঠিক কারন বের করে সমাধান করতে হবে।
"ড্রাই ভ্যাজাইনা" সমস্যা হয় নারীর।
কিন্তু অবশ্যই দম্পতিকে চেম্বারে এসে ডাক্তারের সাথে মূল সমস্যা বোঝা, চিকিৎসা ও করণীয় আলোচনা করতে হবে।
★★ লক্ষনসমুহ--
★যোনীপথে ও তলপেটে ব্যাথা, অস্বস্তি অনুভব।
★ জ্বালাপোড়া।
★ সহবাসের ইচ্ছা কমে যাওয়া।
★ সহবাসে ব্যাথা।
★ কখনো কখনো সহবাসে ব্লিডিং।
★ যোনীপথে চুলকানি।
★ ইউরিনে সংক্রমন/ইনফেকশন।
★ যোনীপথে ছিলে যাওয়া ও টনটন ব্যাথা অনুভব হওয়া।
★★ কারনসমুহ --
ইস্ট্রোজেন নামক নারী হরমোন শরীরে কম থাকা।
কিম্বা, হঠাৎ করে কমে যাওয়ার ফলে এই সমস্যা হয়ে থাকে।
কিছু স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় কারন-
১। ওভুলেশনের পর (রেগুলার পিরিয়ডের ১২- ১৪তম দিন)
২। বেবি ডেলিভারির পর (হরমোন পরিবর্তন এর কারনে)
৩। ব্রেস্টফিডিং কালিন সময়ে (হরমোন পরিবর্তন এর কারনে)
৪। প্রি মেনোপজ/মেনোপজ (মাসিক বন্ধ হয়ে যাবার আগে ও পরে) হরমোন পরিবর্তন এর কারনে।
★অন্যান্য--
-- পলিসিস্টিক ওভারি ডিজিজ (PCOD)
-- হরমোন সমস্যা।
-- নারীর দীর্ঘ কালীন ধুমপানের অভ্যাস।
-- যেকোনো প্রয়োজন এ ডিম্বথলি অপারেশন করে ফেলে দেওয়া। (Oophorectomy)
-- ক্যানসার চিকিৎসা -- কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি।
-- ফাইব্রয়েড (জরায়ু টিউমার/এন্ডোমেট্রিওসিস (জরায়ু ইনফেকশন) ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা মেডিসিন এর সাইড ইফেক্ট।
-- বারবার যোনিপথ ইনফেকশন।
-- দীর্ঘদিন চলা ডিপ্রেশন এর কিছু মেডিসিন এর সাইড ইফেক্ট।
-- সহবাসে ভয়, লজ্জা, সাইকোলজিক্যাল/মানসিক জড়তা।
-- স্বামী স্ত্রীর সহবাসে দুজনের সঠিক ইচ্ছে না থাকা।
-- জোরপূর্বক সহবাস।
-- সঠিকভাবে নারী সংগীকে শারীরিক ভাবে উত্তেজিত করতে না চাওয়া, না পারা।
-- স্বামী-স্ত্রী এর মাঝে মানসিক দ্বন্দ্ব, সম্পর্ক ভালো না।
পারিবারিক কলহ, অশান্তি।
-- বিয়ের পূর্বে অন্য কোনো সম্পর্কে অভ্যস্ত।
ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিবাহ।
-- দুজন দুজনের প্রতি মানসিক আকর্ষণ না থাকা।
★ করণীয় --
প্রথম করণীয়,
এটা একটি সমস্যা। সেটা বুঝে নেওয়া।
স্বাভাবিক ভাবে যে সময়গুলিতে এমন থাকতে পারে, সেটাও সঠিক পরামর্শ ও চিকিৎসায় ঠিক হয়।
অন্যান্য সমস্যা আছে কি না, কাপলের নিজেদের মাঝে বোঝাবুঝির অভাব আছে কি না।
লুকায়িত সমস্যা আছে কি না।
সবকিছু নিয়ে সঠিক ডাক্তার এর কাছে একসাথে দুজন যাওয়া ও সমস্যা বিস্তারিত শেয়ার করা।
★ স্বামীর করণীয় --
স্ত্রী আপনার জীবন সংগী।
শুধুই বিছানার আনন্দ-সংগী নয়!
তাকে ভালোবাসুন।
তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা, ভালো-খারাপ লাগার মূল্য দিন।
ক্লান্তি, শারীরিক ও মানসিক অবসাদ এ পাশে থাকুন।
রোগে, শোকে, নতুন পরিচয় এ, সংসার, পরিবার এর দায়িত্বে, ঝামেলায় অংশীদার হোন।
সে আপনার সেবা-দাসী নয়।
সহবাস-সুখ যেনো হয় পারষ্পরিক বোঝাপড়া, আনন্দের বিষয়।
★ স্ত্রীর করণীয় --
স্বামী আপনার জীবন সংগী।
তিনি আপনার সম্মান ও ভালোবাসার পাত্র।
কিন্তু প্রভু নন!
আপনি তার দাসী নন।
নিজ সমস্যা, ভয়, লজ্জা, অসুস্থতা, ক্লান্তি, অবসাদ অকপটে তার সাথে শেয়ার করুন।
প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য সময় নিন।
নিজেদের মাঝে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করুন।
সহবাস-সুখ যেনো হয় পারষ্পরিক বোঝাপড়া ও আনন্দের বিষয়।
প্রতিটি নারী ও কাপলের জন্য সমস্যার ধরন, সময়, কারন ভিন্ন হতে পারে।
তাই, প্রত্যেকের জন্য যার যার শারীরিক সমস্যা বের করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে হবে।
★ একজন গাইনোকলোজিস্ট এর সাহায্য প্রথমেই আপনার প্রয়োজন।
যিনি বিস্তারিত বুঝে আপনার রোগ ডায়গনোসিস করবেন। এবং পরবর্তী করণীয় বুঝিয়ে দেবেন।
★ ডেলিভারির পর, ব্রেস্টফিডিং কালীন সময়ে মা'কে যথাযথ ঘুম, রেস্ট, খাবার, যত্ন করতে হবে।
এতে সে স্বাভাবিকভাবেই সঠিক ফিটনেস ফিরে পাবে।
★ হরমোন সমস্যা, PCOD, জরায়ু ইনফেকশন, টিউমার ইত্যাদি সমস্যায় চিকিৎসারত নারীকে মানসিক সাপোর্ট দিতে হবে।
★ অনিয়মিত, অগোছালো জীবন যাপন করেন যে নারী তিনি নিজের খাবার, ঘুম, স্ট্রেস ঠিক করুন।
সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন। ধূমপান পরিহার করুন।
★ বারবার যোনিপথ ইনফেকশনকে অবহেলা করা যাবে না। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, নিয়ম মেনে চলতে হবে।
★ হরমোন সমস্যা, পুষ্টিহীনতা ইত্যাদির জন্য হরমোন স্পেশালিষ্ট ও নিউট্রিশনিস্ট এর সাহায্য নিতে হবে।
★ মানসিক সমস্যা, দুজনের ভুল বোঝা, ভুল ধারণা, দুজনের মতের ও মনের অমিল'কে একসাথে বসে সমস্যা শোনা, বোঝা৷
সমাধান বোঝা ও প্রয়োজনীয় কাউন্সিলর এর সাহায্য নিতে হবে।
★ শেষ কথা--
ড্রাই ভ্যাজাইনা কোনো রোগ নয়।
নারী জীবনের যেকোনো সময়ে, অবস্থায় এমন হতে পারে।
স্বাভাবিক সময় গুলিকে মেনে নেবার মানসিকতা থাকতে হবে।
অস্বাভাবিক কারনগুলির চিকিৎসা কালীন সময়ে জীবনসঙ্গীর সাপোর্ট থাকতে হবে।
কিন্তু এই সমস্যা অনেক রোগ ও ঝামেলার কারন মাত্র।
পারিবারিক, বৈবাহিক জীবনের অনেক অশান্তি, কলহ, ভুল বোঝাবুঝির কারন।
তাই,
রোগ ডায়গনোসিস ও চিকিৎসা নেবার পাশাপাশি,
পরষ্পরের সমস্যার প্রতি স্বামী স্ত্রী উভয়ের সহনশীল মানসিকতা, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সাপোর্ট থাকা অনেক বেশি জরুরি।
ধন্যবাদ ও ভালোবাসা