02/10/2025
হোমিওপ্যাথি জনপ্রিয় হচ্ছে..
আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে অনেক রোগের কারণ এখনো আবিষ্কার করতে পারেনি। শুধু ধারণা করছে যে এটা থেকে এ রোগের উৎপত্তি হতে পারে। তাহলে কিসের ভিত্তিতে আমরা অহংকার করতে পারি যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ! হাদীসে উল্লেখ আছে সব রোগীর চিকিৎসা রয়েছে! চিকিৎসা যদি থেকেই থাকে তাহলে এক চিকিৎসা বিজ্ঞানে যদি না থাকে তাহলে অন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে আছে। এটা সত্য যে এক চিকিৎসা বিজ্ঞানে নাই অন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে আছে। এটার প্রমাণ অনেক আছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের শাখা ইউনানী-আয়ুর্বেদি, এলোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি সহ আরো অনেক শাখা আছে যা থেকে প্রতিনিয়ত মানুষ উপকার পাচ্ছেন তথা রোগ আরোগ্য হচ্ছে। সব সিস্টেমের সমন্বয়ে পুরো বিশ্বে চলছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। তাহলে একটা চিকিৎসা পদ্ধতি দিয়ে সফলতা কিন্তু পাচ্ছেনা। তার প্রমান অনেক, এজন্য প্রত্যেক সিস্টেমের যেটা খুব ভালো দিক আছে সেটা কি সুযোগ দেওয়া উচিত নয়, যাতে করে আর্তমানবতা রোগ থেকে মুক্তি লাভ করতে পারে। আমি যেহেতু হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিয়ে আছি, আমি হোমিওপ্যাথির পক্ষে কিছু বলব- সাধারণত কয়েকটা কারণে মানুষ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা গ্রহণ করছে......
প্রথমতঃ অন্য চিকিৎসায় ব্যর্থ হয়ে নিরুপায় হয়ে আমাদের কাছে আসে। এমন অনেক রোগ আছে যেগুলো এলোপ্যাথিক চিকিৎসায় ভালো হচ্ছে না এই সংখ্যা কম না, অনেক।
দ্বিতীয়তঃ এই চিকিৎসার খরচ কম,মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর হচ্ছে- অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা। চিকিৎসার সামনের যতগুলা পয়েন্ট আছে, সেগুলো পূরণ করতে করতে মানুষ হিমশিম খায়, তারপর চিকিৎসক যদি বলে আপনার এই চিকিৎসার জন্য এক লাখ টাকা খরচ হতে পারে, তাহলে তাদের কাছে খরচটা বহন করা মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্তের জন্য বড় যন্ত্রণাদায়ক! হয় হাত পাততে হয়, না হয় জমি বিক্রি করতে হবে, যদি থাকে! অথচ এমন অনেক দুরারোগ্য রোগ আছে দক্ষ হোমিওপ্যাথি ডক্টর দিয়ে চিকিৎসা করালে জমি বিক্রি করতে হবে না, হয়ত চাল বিক্রি করা লাগতে পারে এ পর্যন্ত!
তৃতীয়তঃ অপারেশনের ভয়, এমন অনেক রোগ আছে যেগুলো আধুনিক চিকিৎসায় অপারেশন করাতে হচ্ছে যেমন টিউমার পাইলস, সিস্ট, টনসিল এনলার্জমেন্ট, এডিনয়েড এনলার্জমেন্ট, এনাল ফিসার এবং আরও অনেক কিন্তু হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা প্রপার মেডিসিন এপ্লাই করলে সার্জারি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
চতুর্থতঃ কারণটা হচ্ছে এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে কোন সাইড ইফেক্ট নেই এবং এটা একটা বড় কারণ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার দিকে লোকজনের ফিরে আসার। মহাত্মা হ্যানিম্যানের যে নিয়ম অনুসারে ওষুধ প্রয়োগ করার কথা বলেছেন সেই অনুযায়ী কোন পেশেন্ট কে ওষুধ প্রয়োগ করলে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শরীর তার নিজস্ব রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে রোগ দূর করার ক্ষমতা রাখে। এই পদ্ধতিটা একমাত্র হোমিওপ্যাথির কাছে আছে। তাছাড়া হোমিওপ্যাথিতে শারীরিক-মানসিক আবেগিক কারন গুলোর উপর ভিত্তি করে ওষুধ প্রয়োগ করার ব্যবস্থা আছে, এজন্য এই চিকিৎসা পদ্ধতিকে হলিষ্টিক চিকিৎসা পদ্ধতি বলা হয় অর্থাৎ রোগীর সামগ্রিক অবস্থা( শারীরিক, মানসিক এবং আবেগিক) বিবেচনা করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। একটু উদাহরণ দিলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে, বৃষ্টিতে ভেজার পর সর্দি কাশি জ্বর অস্থিরতা রাসটক্স খেলে উপকার হয়।
চরম অপমান করার পর অসুস্থ হয়ে পড়ে, স্টেফিসেগ্রিয়া ওষুধ টা দিলে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে কেউ যদি চুপচাপ হয়ে যায়, অসুস্থ হয়ে যায়, দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে, অনিদ্রায় ভোগেন তাকে আপনি ইগ্নেশিয়া দিয়ে ভালো করতে পারেন। না আর বেশি হোমিওপ্যাথির গুনগান গাইবো না, বলতেই পারেন আপনারা এতকিছু পারেন, কেন জাতীয়ভাবে আপনাদের ভুমিকা কম? ব্রাক এবং বিবিসি পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে বাংলাদেশে প্রায় 40% মানুষ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিচ্ছেন। দেখুন এই চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য যে পরিমাণ দক্ষ হোমিওপ্যাথি ডক্টর দরকার, আমাদের কাছে সেটা নাই। কারণ বাংলাদেশে মাত্র একটা সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ। অথচ অ্যালোপ্যাথি মেডিকেল কলেজ অনেক। তার ওপর আমাদের কলেজে অনেক কিছুর স্বল্পতা আছে, অপূর্ণতা আছে, দক্ষ ডাক্তারের অভাব আছে, এত কিছু অপূর্ণতা থাকার পরেও আমরা কিভাবে দক্ষ ডাক্তার গড়ে তুলত পারব? দক্ষ ডাক্তার তৈরি করতে হলে দক্ষ ডাক্তারের সমন্বয়ে উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করা, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাকে আরো যুগোপযোগী করে তুলতে পারলে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা মানবকল্যাণে অশেষ অবদান রাখবে এবং আমাদের এসডিজি অর্জনে আমরা সফলতা লাভ করব। এ ব্যাপারে সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শুভদৃষ্টি থাকলে আমরা সফলতা পাবো,ইনশাআল্লাহ।
(পুরনো পোস্ট আমার প্রোফাইল থেকে)
ডাঃ মোঃ রুহুল আমিন
প্রভাষক, ক্রনিক ডিজিজ ও মেডিসিন বিভাগ
সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, মিরপুর ১৪,ঢাকা ১২০৬
০১৭১৬৬২০০৯৭