24/11/2025
আত্মহত্যা ও মাদকাসক্তি
আত্মহত্যা সারা পৃথিবী জুড়েই একটি সামাজিক সমস্যা। অনেকের ভেতর একটি ধারণা আছে, যিনি আত্মহত্যার কথা মুখে বলেন তারা আসলে আত্মহত্যা করেন না। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা আত্মহত্যা করেন তাদের তিন ভাগের দুই ভাগই আত্মহত্যার আগে অন্যদের কাছে তাদের মনের চিন্তাটা বলেছেন। আবার অনেক ভয় দেখানোর জন্য বলতে থাকলেও এক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং আত্মহত্যা ঘটে যায়।
মাদক নির্ভরশীল ব্যক্তিদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবনতা অনেক বেশি। এছাড়া বিষণ্ণতা, সিজোফ্রেনিয়া, ব্যাক্তিত্বের অসুবিধা, হতাশা, অনিরাময় যোগ্য মৃতুপথযাত্রী, ক্যান্সার সহ আরও কিছু রোগে আত্মহত্যার ঝুঁকি হিসাবে কাজ করে। মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা নেশার টাকা না পেলে, অতিরিক্ত নেশার কারণে, হতাশাসহ চাকরি বা ব্যবসায় ধ্বস নেমে আসার কারণে তারা জীবনের গতি খুঁজে পায়না। সমাধান হিসেবে তারা আত্মহত্যাকেই মুক্তির পথ বেছে নেয়।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিচার্স বাংলাদেশ ২০১৩ সালে এক জরিপ চালিয়ে দেখে যে, প্রতিবছর দেশে গড়ে ১০ হাজার লোক আত্মহত্যা করে৷ প্রতি এক লাখে করেন ৭ দশমিক ৩ জন৷ বিভিন্ন বয়স, লিঙ্গ, পেশা এবং ভৌগলিক অবস্থানের নিরিখে ৮ লাখ ১৯ হাজার ৪২৯ জনের ওপর সরাসরি জরিপ চালিয়ে তারা এই তথ্য প্রকাশ করে৷ আর শহরের চেয়ে গ্রামে আত্মহত্যার হার ১৭ গুণ বেশি৷ গ্রামে যাঁরা আত্মহত্যা করেন, তাঁদের বড় অংশ অশিক্ষিত এবং দরিদ্র৷ সর্বশেষ ২০১৮ এর শুরুতে বাংলাদেশ সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিচার্স বাংলাদেশ আরেকটি গবেষণা শুরু করেছে। এছাড়া ২০১৪ সালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের এক গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন ২৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করেন৷
চিকিৎসকেরা বলছেন, যাঁরা আত্মহত্যা করেন তাঁদের ৯৫ ভাগই কোনো না-কোনো মানসিক রোগে ভোগেন৷ ডাঃ তাজুল ইসলামের কথায়, ‘‘এই মানসিক বোগের সঠিক চিকিৎসা করা গেলে আত্মহত্যা কমবে৷ মাদকাসক্তি আত্মহত্যা প্রবণতার জন্য একটি বড় কারণ৷ তাই মাদকাসক্তদের চিকিৎসা এবং মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়া দরকার৷
মাদকাসক্তি ও আত্মহত্যা একে অপরের সাথে পরিপূরক। সচেতনতা ও অসুস্থ, আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার আওতায় এনে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।