17/04/2025
জরায়ুর ফাইব্রয়েড (Uterine Fibroids) হল নন-ক্যান্সারাস (বিনাইন) টিউমার যা জরায়ুর পেশী টিস্যু থেকে বিকশিত হয়। এর সঠিক কারণ এখনো সম্পূর্ণভাবে বোঝা যায়নি, তবে নিচের কিছু ফ্যাক্টর এর বিকাশে ভূমিকা রাখতে পারে:
# # # ১. **হরমোনের প্রভাব**:
- **ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন**: এই হরমোনগুলি জরায়ুর আস্তরণের বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করে এবং ফাইব্রয়েডের বিকাশে ভূমিকা রাখে। মেনোপজের পর ইস্ট্রোজেন লেভেল কমে গেলে ফাইব্রয়েড সাধারণত ছোট হয়ে যায়।
- **হরমোনাল ইমব্যালান্স**: শরীরে হরমোনের অসামঞ্জস্যতা ফাইব্রয়েড তৈরির ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
# # # ২. **জিনেটিক ফ্যাক্টর**:
- পারিবারিক ইতিহাস থাকলে (যেমন মা বা বোনের ফাইব্রয়েড থাকা) ঝুঁকি বাড়ে।
- কিছু জিন (যেমন MED12, HMGA2) ফাইব্রয়েডের সাথে যুক্ত।
# # # ৩. **গ্রোথ ফ্যাক্টরস**:
- ইনসুলিন-লাইক গ্রোথ ফ্যাক্টর (IGF) এবং অন্যান্য প্রোটিন ফাইব্রয়েডের বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করতে পারে।
# # # ৪. **অন্যান্য সম্ভাব্য কারণ**:
- **বয়স**: ৩০-৪০ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে ফাইব্রয়েড বেশি দেখা যায়।
- **ওবেসিটি**: অতিরিক্ত ওজন ইস্ট্রোজেন লেভেল বাড়িয়ে দিতে পারে, যা ফাইব্রয়েডের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
- **খাদ্যাভ্যাস**: লাল মাংস, অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইন সমৃদ্ধ খাবার ফাইব্রয়েডের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, তবে সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল ঝুঁকি কমায়।
- **রেস**: আফ্রিকান-আমেরিকান মহিলাদের মধ্যে ফাইব্রয়েড বেশি দেখা যায় এবং এটি তাদের মধ্যে বেশি বড় ও দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
# # # ৫. **গর্ভাবস্থা**:
- গর্ভাবস্থায় ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা ফাইব্রয়েডের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
# # # লক্ষণ:
ফাইব্রয়েডের আকার ও অবস্থানের উপর নির্ভর করে লক্ষণগুলি ভিন্ন হতে পারে, যেমন:
- ভারী বা দীর্ঘস্থায়ী মাসিক রক্তপাত (Menorrhagia)
- পেলভিক ব্যথা বা চাপ
- প্রস্রাবের সমস্যা (যদি ফাইব্রয়েড মূত্রথলিতে চাপ দেয়)
- কোষ্ঠকাঠিন্য (যদি ফাইব্রয়েড রেক্টামে চাপ দেয়)
- বন্ধ্যাত্ব বা গর্ভপাতের ঝুঁকি (কিছু ক্ষেত্রে)
জরায়ুর ফাইব্রয়েড বা টিউমার (Uterine Fibroids) সাধারণত **নন-ক্যান্সারাস (বিনাইন)** হয়, তবে এটি শরীরের বিভিন্ন ক্ষতি বা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষত যদি এটি বড় আকারের হয় বা নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে।
জরায়ু ফাইব্রয়েডের সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব:**
১. অতিরিক্ত ও অনিয়মিত রক্তপাত**
মেনোরেজিয়া (Menorrhagia)**: ভারী মাসিক রক্তপাতের কারণে রক্তশূন্যতা (Anemia) হতে পারে, যা দুর্বলতা, ক্লান্তি ও শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করে।
- **দীর্ঘস্থায়ী রক্তক্ষরণ**: মাসিক ছাড়াও অনিয়মিত রক্তপাত (মেট্রোরেজিয়া) হতে পারে।
২. পেলভিক ব্যথা ও চাপ**
- বড় ফাইব্রয়েড তলপেটে **চাপ, ব্যথা বা অস্বস্তি** সৃষ্টি করতে পারে।
- **তীব্র ব্যথা** হতে পারে যদি ফাইব্রয়েডের ভিতরে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় (ডিজেনারেশন)।
৩. প্রস্রাব ও মলত্যাগের সমস্যা**
- **মূত্রথলিতে চাপ** দিলে ঘন ঘন প্রস্রাব বা প্রস্রাব ধরে রাখতে সমস্যা হয়।
- **মলদ্বারে চাপ** দিলে কোষ্ঠকাঠিন্য বা পাইলসের সমস্যা দেখা দেয়।
৪. প্রজনন ক্ষমতায় প্রভাব (বন্ধ্যাত্ব বা গর্ভপাত)**
- **গর্ভধারণে বাধা**: কিছু ফাইব্রয়েড (যেমন সাবমিউকোসাল) জরায়ুর গহ্বরে বিকাশ বাধা দেয়, নিষেক বা ভ্রূণ বসতে সমস্যা সৃষ্টি করে।
- **গর্ভপাতের ঝুঁকি**: গর্ভাবস্থায় ফাইব্রয়েড থাকলে গর্ভপাত বা প্রি-টার্ম লেবারের সম্ভাবনা বাড়ে।
- **প্রসব জটিলতা**: ফাইব্রয়েডের কারণে সিজারিয়ান ডেলিভারির প্রয়োজন হতে পারে।
জরায়ুর বিকৃতি বা আকার বৃদ্ধি**
- বড় ফাইব্রয়েড জরায়ুর স্বাভাবিক আকার পরিবর্তন করে, যা **পেলভিক অঞ্চলে চাপ সৃষ্টি করে**।
বিরল কিন্তু গুরুতর জটিলতা**
**অ্যাকিউট পেইন**: যদি ফাইব্রয়েডের রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয় (টর্সন), তা তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করে।
লোহিত রক্তকণিকার ধ্বংস (Hemolytic Anemia)**: কিছু ক্ষেত্রে ফাইব্রয়েড রক্তের কোষ নষ্ট করতে পারে।
- **ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি (অত্যন্ত বিরল)**: **লেইওমায়োসারকোমা** নামক ক্যান্সার হতে পারে, কিন্তু এর সম্ভাবনা < ১%।
কখন ডাক্তার দেখাবেন?**
নিচের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
- অসহ্য পেলভিক ব্যথা
- অতিরিক্ত রক্তপাত (এনিমিয়া লক্ষণ যেমন ক্লান্তি, মাথা ঘোরা)
- গর্ভধারণে সমস্যা
- প্রস্রাব বা মলত্যাগে অসুবিধা
*চিকিৎসা পদ্ধতি**
লক্ষণ ও ফাইব্রয়েডের আকারের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা নেওয়া উচিত, যেমন:
- **ঔষধ** (হরমোনাল থেরাপি, ব্যথানাশক)
- **অপারেশন** (মায়োমেক্টমি, হিস্টেরেক্টমি)
- **মিনিমালি ইনভেসিভ পদ্ধতি** (Uterine Artery Embolization, MRI-guided Focused Ultrasound)
**সর্বোপরি, ফাইব্রয়েডের কারণে সৃষ্ট শারীরিক ও মানসিক সমস্যা গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত এবং সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।**
# # # চিকিৎসা:
লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসার বিকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে:
- **ওষুধ** (হরমোনাল থেরাপি, ব্যথানাশক)
- **সার্জারি** (মায়োমেক্টমি, হিস্টেরেক্টমি)
- **নন-ইনভেসিভ প্রসিডিউর** (যেমন UAE - Uterine Artery Embolization)
এবং হোমিওপ্যাথি ঔষধ। হোমিওপ্যাথি ঔষধ ব্যবহার করলে কোন অপারেশনের প্রয়োজন হয় না
একজন গাইনোকোলজিস্টের অথবা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ।