21/08/2022
❝আমার বাচ্চা কিছুই খেতে চায়না❞.....
এ যুগের প্রায় প্রত্যেকটি মায়েরই একটা কমন অভিযোগ এটি। আসুন আমরা বিষয়টা নিয়ে একটু আলোচনা করে দেখি। আপনার বাচ্চাটি যদি আসলেই খেতে না চায়, তাহলে নিজেকেই নিচের প্রশ্নগুলো করুন:
🔻ডাক্তার কি আপনার শিশুর দৈহিক বিকাশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন?
🔻আপনার শিশুর ওজন কি গড়ের চেয়ে খুব বেশি কম? ক্রমে কি তার ওজন কমে যাচ্ছে?
🔻বয়স অনুযায়ী তার উচ্চতা কি ঠিক আছে?
🔻দিনে দিনে কি তার শক্তি কমে যাচ্ছে?
🔻আপনার শিশু কি স্বাভাবিকভাবে ঘুমাচ্ছে না?
🔻সে আগে যেমন ছিল এখন কি তেমন সক্রিয়, খেলাপ্রিয় বা প্রফুল্ল নয়?
🔻আপনার শিশুর কি জ্বর, ঠাণ্ডার সমস্যা, শ্বাসনালীর সংক্রমণ বা পাকস্থলীর সমস্যা আছে?
👉 উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর বেশিরভাগের উত্তর যদি "না" হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে খাবার নিয়ে আপনার শিশুর মনোভাব নয় বরং তার খাবারের প্রতি আপনার মনোভাবই এজন্য দায়ী। পুষ্টিবিদদের মতে, সদ্য হাঁটতে শেখা শিশুর খাবারের চাহিদা খুব কম আর তারা তার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাবার খেয়েই থাকে। শিশু কিন্তু তার ক্ষুধা সামাল দিতে পারে না। ক্ষুধা লাগলে শিশু খাবেই- অল্প খেতে পারে বা একটি নির্দিষ্ট খাবার খেতে পারে, তবে নিশ্চিত সে খাবেই। যদি নাও খায়, পান করবেই। সবচেয়ে বড় কথা হলে শরীরের ক্যালোরি চাহিদা রয়েছে, আর শক্ত খাবার যে সবসময় নিখুঁতভাবে কাজ করবে তাও নয়।
শিশু যদি শক্ত খাবার না খায় তাহলে শুধু ফলের রস আর দুধ থেকেই তার শরীরের জ্বালানির চাহিদা মিটতে পারে। মা হিসেবে ক্যালোরির উৎস নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট নাও হতে পারেন, তবে লাগাতার এ নিয়ে দুশ্চিন্তা করা অনর্থক, কারণ এ ব্যাপারে আপনার করার তেমন কিছু নেই। সদ্য হাঁটতে শেখা শিশু আপনার এই উদ্বেগ বোঝে না আর খাবার ব্যাপারে তার ওপর জোরাজুরি করলে সে যে আরও বিরক্ত করবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
👉 কিছু টিপস এমন পরিস্থিতি সামলাতে আপনাকে কিছুটা সাহায্য করতে পারে-
🔻পাঁচ থেকে আট মাস বয়সী শিশুরা যথেষ্ট পরিমাণ মায়ের দুধ খেলে, বাড়তি খাবার খুব অল্প পরিমাণ খেলেও চলে। বাচ্চার খাবারের বাটিতে উচ্ছিষ্ট থাকলে সেটি শেষ করার জন্য খুব বেশি চাপ না নেয়াই ভাল। এতে পরবর্তীতে খাবারের প্রতি অনীহা তৈরি হতে পারে।
🔻বাচ্চার জন্য তৈরি প্রথম খাবার নরম এবং সহজ-পাচ্য হওয়া দরকার। তারপর আস্তে আস্তে খাবারে এবং খাবারের স্বাদে বৈচিত্র্য আনতে হয়। কোনো বাচ্চা কোনো বিশেষ খাবার পছন্দ না করলে তাকে তা জোর করে কিংবা প্রলোভন বা ভয় দেখিয়ে খাওয়ানো খুবই অনুচিত, এমনকি খাবারটি যদি খুবই পুষ্টিকর হয়-তাহলেও। এসব ক্ষেত্রে কয়েদিন সেই খাবারটি দেয়া বন্ধ করে দিন, এবং কয়েকদিন পর নতুন কোনভাবে পরিবেশন করতে পারেন, এতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাজ হয়।
🔻খাওয়ানোর সময় বিভিন্ন ডিভাইসে গান, ছড়া কিংবা টিভি ইত্যাদি চালু করে বাচ্চাকে খাওয়ানো অনেকটা বাধ্যতা-মূলক হয়ে গেছে আজকাল। যে কারনে বাচ্চারা অন্যমনস্ক ভাবে খেয়ে নেয়, এবং খাবার গ্রহন করা যে এক ধরণের উপভোগ করার বিষয় তা তারা কখনো উপলব্ধি করতেই পারে না।এতে খাবার পরিপাকক্রিয়াও ব্যাহত হয়।
🔻বাচ্চার খাবারে নির্ধারিত বিরতি দিন। একমাত্র মায়ের দুধ হল ‘অন ডিম্যান্ড’ একটি খাবার যা ১৮ মাস পর্যন্ত যত বার সম্ভব, যেকোনো সময়ে দেয়া যায়। কিন্তু অন্যান্য খাবারের ক্ষেত্রে বাচ্চাকে খিদে অনুভব করার সময় দিন। অন্ততপক্ষে full-meal /snacks এর ক্ষেত্রে ইন্টারভ্যাল কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার মতো হওয়া দরকার। এর মাঝে শিশু দুধ এবং অন্যান্য তরল খাবে।
🔻টিনের / প্যাকেটজাত খাবার সম্পুর্নভাবে পরিহার করুন। প্রক্রিয়াজাত খাবারে প্রিযারভেটিভ এবং সোডিয়ামের আধিক্য থাকে, যা বাচ্চার স্বাস্থ্য এবং রুচি- উভয়কেই হুমকির মুখে ফেলে। তাই শিশুকে ফাস্ট ফুড, চিপস, ক্যান্ডি, আইসক্রিম এসব নিয়মিত খেতে দেবেন না।
🔻খাবার সময় ৩০ মিনিটের বেশি দীর্ঘায়িত করবে না।
🔻বিভিন্ন ধরনের খাবার দিন, সম্ভব হলে আঙ্গুল দিয়ে ধরে খাওয়া যায় এমন বিভিন্ন আকারের খাবার রঙিন আকর্ষণীয় প্লেটে করে খেতে দিন।
🔻বাচ্চাকে সবসময় উৎসাহ দিন, তাকে নিজে থেকে খেতে দিন, তবে অবশ্যই বড়দের উপস্থিতিতে। সে কিছু না খেলে বিরক্ত না হয়ে বরং যেটুকু খেয়েছে তার জন্য এপ্রেশিয়েট করুন। বাচ্চারা উৎসাহ পেলে সবচে বেশি খুশি হয়।
🔻অসুস্থতা পরবর্তী সময়ে বাচ্চারা খাবারের প্রতি বেশ কয়েকদিন অনীহা প্রকাশ করবে এটাই স্বাভাবিক। এটি এক সপ্তাহ থেকে ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে, এবং বাচ্চার ওজন কমে যেতে পারে এই সময়। তবে, বাবা-মা কে এসময় বিশেষভাবে ধৈর্য রাখতে হবে।
শেষ কথা, রাসুলুল্লাহ সা. এর সুন্নাহর কথা মনে রাখুন, ❝পাকস্থলীর এক তৃতীয়াংশ শক্ত খাবার, এক তৃতীয়াংশ পানিতে আর বাকিটা বাতাসে দিয়ে ভরতে হবে।❞ আপনার শিশুর পেটের আকার কতটা বড়? তাতে যে শুধু পাকস্থলী আছে তাই নয়, অন্ত্র, কিডনি আর অন্যান্য অঙ্গও থাকে। সেই ছোট পাকস্থলীটির এক তৃতীয়াংশ শক্ত খাবারে ভার থাকলেই আপনার সন্তানের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত, ইনশাআল্লাহ।